Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

শৌচাগার নিয়ে পড়ুয়াদের সমীক্ষায় অবাক প্রশাসন

যে কাজ করার কথা ছিল জেলা প্রশাসনের, সে কাজ করে দেখাল ৬৪ জন স্কুল পড়ুয়া! আর তাতেই জানা গেল ‘নির্মল ভারত অভিযান’-প্রকল্পের প্রকৃত খতিয়ান। সাঁইথিয়ার দেড়িয়াপুর হাইস্কুলের ছাত্রছাত্রীদের শৌচাগার নিয়ে করা এক সমীক্ষায় দাবি করা হয়েছে, ওই পঞ্চায়েতের ১৪৭০ পরিবারের মধ্যে ১০৮০টিরই কোনও শৌচাগার নেই!

অরুণ মুখোপাধ্যায়
সাঁইথিয়া শেষ আপডেট: ১৫ নভেম্বর ২০১৪ ০১:৩৪
Share: Save:

যে কাজ করার কথা ছিল জেলা প্রশাসনের, সে কাজ করে দেখাল ৬৪ জন স্কুল পড়ুয়া! আর তাতেই জানা গেল ‘নির্মল ভারত অভিযান’-প্রকল্পের প্রকৃত খতিয়ান। সাঁইথিয়ার দেড়িয়াপুর হাইস্কুলের ছাত্রছাত্রীদের শৌচাগার নিয়ে করা এক সমীক্ষায় দাবি করা হয়েছে, ওই পঞ্চায়েতের ১৪৭০ পরিবারের মধ্যে ১০৮০টিরই কোনও শৌচাগার নেই!

জেলায় জেলায় ‘নির্মল ভারত অভিযান’-এর প্রচারই যে সার, সে কথা বলছে দেড়িয়াপুরের ১২টি গ্রামে পড়ুয়াদের চালানো সমীক্ষার রিপোর্টই। সরকারি প্রকল্পের কাজ যে কিছু হয়নি মানছেন জেলা প্রশাসনের এক কর্তাই। তিনি বলেন, “খাতায় কলমে নির্মল গ্রাম দেখানো হলেও, কাজ কতটুকু হয়েছে, সে নিয়ে সংশয় আছে।” জন সচেতনতার অভাবেই যে দেরিয়াপুর এই পরিস্থিতির শিকার, মানছে প্রশাসনের একটি মহল।

তফশীল ও আদিবাসী অধ্যুষিত দেড়িয়াপুর পঞ্চায়েত এলাকায় যে ৬৪ জন ছাত্রছাত্রী সমীক্ষা চালিয়েছেন তাঁরা দেড়িয়াপুর হাইস্কুলের নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির পড়ুয়া। স্কুলের প্রধানশিক্ষক ষড়ানন দাস বৈরাগ্য বলেন, “সমীক্ষার কাজের জন্য যাবতীয় প্রশংসার দাবিদার স্কুলের বাংলা শিক্ষক উজ্জ্বল মুখোপাধ্যায়। তাঁরই অনুপ্রেরণায় ছাত্রছাত্রীরা ওই সমীক্ষা চালিয়েছে।”

শিক্ষকতার বাইরে উজ্জ্বলবাবু একজন সাংস্কৃতিক কর্মীও। স্কুল সূত্রে খবর, উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে ২০ নম্বরের গ্রাম সমীক্ষার যে বিষয় রয়েছে, সে নিয়ে কাজ করতে গিয়েই শৌচাগার-সমীক্ষার বিষয়টি মাথায় আসে উজ্জ্বলবাবুর। তারপরই তিনি ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে সমীক্ষার কাজ শুরু করেন এলাকায়।

বৃহস্পতিবার ওই সমীক্ষার তথ্য জানতে স্কুলেরই এক সভায় হাজির ছিলেন জেলা সভাধিপতি বিকাশ রায় চৌধুরী, অতিরিক্ত জেলা শাসক(জেলা পরিষদ) বিধান রায়, এবং মহম্মদবাজারের বিডিও জাহিদ সাহুদ ও সাঁইথিয়ার বিডিও সুমন বিশ্বাস। সভায় কয়েকজন সমীক্ষক ছাত্রছাত্রী তাঁদের অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরেন। বিকাশবাবু বলেন, “সমীক্ষার কাজ যে এ ভাবে করা যায় তা কখনও ভাবিনি। এ বার জেলার সমস্ত স্কুলে ওই ভাবে সমীক্ষা করার জন্য প্রস্তাব দেওয়া হবে।”

বিধানবাবুও ওই স্কুলের উদ্যোগকে অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, “আমি সমীক্ষক ছাত্র ছাত্রীদের অনুরোধ করছি, যে সব বাড়িতে শৌচাগার নেই সেইসব পরিবারদের বোঝাতে, যে মাত্র ৯০০টাকা খরচ করলেই সরকার ১২ হাজার টাকা অনুদান দিয়ে মোট ১২,৯০০ টাকায় উন্নত মানের শৌচাগার নির্মাণ করে দেবে।” হাইস্কুলের এমন উদ্যোগ জেলা প্রশাসনের কাছে চরম প্রাপ্তি বলে স্বীকার করেছেন বিধানবাবু।

ঘটনা হল, সমীক্ষার কাজে অনুপ্রেরণা পেয়ে ওই স্কুলের ৬জন মুশলিম ছাত্রী মহম্মদবাজার ব্লকের আঙ্গারগড়িয়া পঞ্চায়েতের মুশলিম অধ্যুষিত হেরুকা গ্রামে সমীক্ষা চালায়। তাতে তারা দেখেছে ২৫৭টি পরিবারের মধ্যে ১০৮টি পরিবারের কোনও শৌচাগারই নেই! সভায় এই তথ্যও তুলে ধরে ছাত্রীরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

toilet sainthia study arun mukhopadhyay
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE