জেলার সদর। অথচ গোটা শহরে নেই একটিও স্থায়ী বাজার। ১০০ বছরেরও বেশি পুরনো পুরসভা সিউড়িবাসীকে দুর্গন্ধমুক্ত একটি খোলামেলা বাজার উপহার দিতে পারেনি। এখানকার বাসিন্দাদের এই ক্ষোভ দীর্ঘ দিনের। কিন্তু জেলা প্রশাসন বা পুরকর্তৃপক্ষ কাউকেই এ নিয়ে তেমন মাথাব্যাথা করতে দেখা যায়নি বলেই বাসিন্দাদের অভিযোগ। পরিস্থিতি আরও খারাপ হওয়ার আগেই সব পক্ষকে নিয়ে আলোচনা করে শহরে একটি স্থায়ী বাজার গড়ার ব্যাপারে অবিলম্বে উদ্যোগ শুরু করার পক্ষেই মত দিচ্ছেন সংখ্যাগরিষ্ঠ সিউড়িবাসী।
বর্তমানে এই শহরে বাজারের সংখ্যা চারটি। কিন্তু প্রত্যেকটিই বেসরকারি উদ্যোগে বসে। অধিকাংশেরই পরিকাঠামো বলতে কিছু নেই। আশপাশের গ্রাম ও শহরের ছোট-বড় ব্যবসায়ীদের উদ্যোগে বাজার তৈরিই হয়েছে পরিকল্পনাহীন ভাবে। সিউড়ির অন্যতম প্রাচীন বাজারটি বসে সিউড়ি-সাঁইথিয়া রাস্তার উপরে টিনবাজার এলাকায়। শহরের জন্মলগ্ন থেকে গ্রাম থেকে লোকজন এসে ওই জায়গা জিনিসপত্র বিক্রি করতেন। ধীরে ধীরে অস্থায়ী ওই বাজারই টিনবাজারে পরিণত হয়েছে। সকাল থেকে রাস্তা দখল করে ওই বাজারে মাছ থেকে সব্জি, সবই বিক্রি হয়। কোনও ছাউনি নেই। রাস্তাতেই বাজারের আবর্জনা জমে। বাজারের সময় যানজটও বেড়ে যায়। চূড়ান্ত অব্যবস্থার মধ্যে ব্যবসায়ীদের বাজারটি টিকিয়ে রাখতে হয়েছে। প্রায় একই অবস্থায় সিউড়ি আদালত ও জেলা প্রশাসনিক ভবনের মাঝখানে বসা বাজারটির। ওটিও বসে রাস্তা দখল করে। তবে, অস্থায়ী বাঁশ-ত্রিপলের ছাউনি আছে। সত্তরের দশকের শেষের দিকে তৈরি হওয়া ওই বাজারে বর্তমানে দুশোর বেশি হকার বসেন। বছর দশেক আগে বাজারটি অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা হয়েছিল। কিন্তু পরে আর তা কার্যকর হয়নি। এই দুই বাজারের মতোই করুণ দশা জেলা স্কুল সংলগ্ন জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের অফিসে সামনের এবং এসপি মোড়ে বসা বাজারটির। প্রথমটি শহরের নতুন বাজার হলেও তার পরিকাঠামো আগের মতোই বেহাল। ক্রেতা থেকে বিক্রেতা প্রত্যেকেরই ক্ষোভ, সরকারি উদাসীনতাই পুরনো বাজারগুলির বেহাল পরিকাঠামোর জন্য দায়ী। একই ভাবে তাঁরা দুষছেন এত দিনেও শহরের স্থায়ী বাজার না গড়তে পারার জন্য পুরপ্রশাসনের ব্যর্থতাকেও।
অস্থায়ী বাজারের জেরে রাস্তায় যানজট।
প্রশাসনিক উদ্যোগ বলতে বেশ কয়েক বছর আগে টিনবাজার এলাকায় তৈরি ‘স্বদেশি বাজার’। কিন্তু প্রধানত সঠিক পরিকল্পনার অভাবেই পুরসভার উদ্যোগে তৈরি ওই বাজারকে টিকিয়ে রাখা যায়নি বলে অভিযোগ। এই পরিস্থিতিতে কী বলছেন ওই সব বাজারের ব্যবসায়ীরা? অধিকাংশেরই মূল বক্তব্য, শহরে স্থায়ী বাজার তৈরি খুবই দরকার। তার জন্য ব্যবসায়ীরা পুরনো জায়গা ছেড়ে দিতেও প্রস্তুত। কিন্তু কোর্ট বাজারের তৃণমূল প্রভাবিত ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মফিক শাহ বলছেন, “পুরসভা বাজার তৈরি করে দেওয়ার পরেই সেখানে যাওয়া সম্ভব। বাজার তৈরি না হলে আমরা সরব কী করে! শহরে ঠিকঠাক কোনও জায়গায় পুরসভা স্থায়ী বাজার বানিয়ে দিক, আমরা চলে যাব।” আবার সিউড়ি-সাঁইথিয়া রোডের মাছ বিক্রেতা শুভাশিস ধীবর বলেন, “বাজার চলাকালীন গাড়ি চলাচলে অসুবিধা হয়। এ ছাড়াও আরও অনেক অসুবিধা রয়েছে। কিন্তু বাজার না থাকলসে আমরা কোথায় যাব?”
এ দিকে, স্থায়ী বাজার না থাকার জন্য সমস্যায় ভুগছেন কিন্তু শহরবাসীই। টিনবাজার এলাকার বাসিন্দা কল্যাণ দাসের বাড়ির সামনেই কার্যত বাজার বসে। তাঁর ক্ষোভ, “সকালের পর থেকেই ক্রেতা-বিক্রেতাদের চোটে বাড়ির দরজা খুলে রাখাই দায়। অসুস্থ মানুষ নিয়ে বেরোতে গেলেও বাজারের জন্য অ্যাম্বুল্যান্স ঢুকবে না। একটা পুরশহরে কেন এ ভাবে বাজার বসবে!” তাঁর দাবি, পুরসভাকে অবিলম্বে এ ব্যাপারে নজর দেওয়া উচিত। শহরের বাজার নিয়ে খুব একটা ভাল অভিজ্ঞতা নয় স্কুলশিক্ষিকা অনিন্দা নন্দনেরও। তিনি বলছেন, “নোংরা বাজারের মধ্যে হাঁটতে গা ঘিন ঘিন করে। পরিবেশ দূষিত হচ্ছে। যানজটও হচ্ছে। স্থায়ী বাজার হলে এ সব হবে না।” বাজার নিয়ে এই সব সমস্যার কথা মেনে নিয়েছেন তিনটি বাজার এলাকার তৃণমূল কাউন্সিলর মনীতা মান্নাও। তিনি জানান, সমস্যার কথা পুরসভাকে জানানো হয়েছে। কিন্তু বহু আলোচনার পরেও কোনও সমাধানসূত্র মিলছে না বলেই তাঁ দাবি। এ নিয়ে যোগাযোগ করা হলে সিউড়ির তৃণমূল পুরপ্রধান উজ্জ্বল মুখোপাধ্যায় বলেন, “ইতিমধ্যেই সমস্যাটা তৈরি হয়ে গিয়েছে। বহু আগেই এর সমাধান করা যেত। কিন্তু এখন অনেক সময় পেরিয়ে গিয়েছে। স্থায়ী বাজার করার মতো জায়গা এখন আর এই শহরে নেই। আলোচনা চলছে। দেখা যাক, কী হয়।”
ছবি: তাপস বন্দ্যোপাধ্যায়