Advertisement
E-Paper

স্বামী কার, ঝগড়া থানাতেই

পরনে লাল শাড়ি। আঁচলটা কোমরে জড়িয়ে নিয়ে তেড়ে গেলেন “আমার স্বামীর দিকে যে হাত বাড়াবে তার চোখ গেলে দেব। হাত ভেঙে দেব।” বড় বড় চোখ। নাকের পাটা ফুলে ফুলে উঠছে। হাত টেনে ধরে তাঁকে মাটিতে বসিয়ে দিলেন এক আত্মীয়।

সমীর দত্ত

শেষ আপডেট: ১২ জুলাই ২০১৪ ০১:২৫
অঙ্কন: অশোক মল্লিক

অঙ্কন: অশোক মল্লিক

পরনে লাল শাড়ি। আঁচলটা কোমরে জড়িয়ে নিয়ে তেড়ে গেলেন “আমার স্বামীর দিকে যে হাত বাড়াবে তার চোখ গেলে দেব। হাত ভেঙে দেব।” বড় বড় চোখ। নাকের পাটা ফুলে ফুলে উঠছে। হাত টেনে ধরে তাঁকে মাটিতে বসিয়ে দিলেন এক আত্মীয়।

যাঁর উদ্দেশ্যে ওই হুঁশিয়ারী তিনিও ছেড়ে দেওয়ার পাত্রী নন। ফ্যাকাশে হলদে রঙের চুড়িদার। রোগাটে গড়ন। চোখে সরু ফ্রেমের চশমা। ঝাঁঝিয়ে উঠলেন তিনি “চার বছর ধরে ওকে আমি চিনি। এখন বউ বলে দাবি জানালেই হবে না। বিয়ের অনুষ্ঠানটাই কি সব! অং চং মন্ত্র আউড়ে আমাদের বিয়ে হয়নি তো কী হয়েছে? আমি জানি আমাদের মনে মনে বিয়ে হয়ে গিয়েছে।” দম নিয়ে ফের হুঙ্কার ছাড়লেন, “এখন লুকিয়ে বিয়ে করলে ওকে আমি ছেড়ে দেব ভেবেছে? এর শেষ দেখে ছাড়ব।” ফুঁসে উঠেই মাটিতে বসে পড়লেন তিনি।

শুক্রবার সকালে পুরুলিয়ার বোরো থানা চত্বরে দুই তরুণীর এমন বাক্যবাণ শুনে পথচলতি মানুষজন অনেকেই দাঁড়িয়ে পড়েন। কেউ কেউ আবার থানার দরজা দিয়ে ভিতরে কী হচ্ছে দেখতে উঁকি ঝুঁকি মারতে থাকেন। অনেকেই কান খাড়া করে ভাল করে সব শোনার চেষ্টা করছিলেন। হাঁক পাড়েন সেন্ট্রি “অ্যাই! এখানে কেউ দাঁড়াবেন না। কাজ না থাকলে চলে যান। ভিড় বাড়াবেন না।’’

যাকে নিয়ে দুই তরুণীর এই বাকবিতণ্ডা, সেই বছর পঁচিশের যুবক তখন থানার লকআপে ঘুমাচ্ছেন। তাঁর নাম সন্দীপ মাহাতো। বাড়ি বোরো থানার জামবেদিয়া গ্রামে। পুরুলিয়া পুলিশ লাইনের এই এনভিএফ কর্মী দিন কুড়ি আগে বিয়ে করেছেন। দিন দশেক আগে ওই যুবকের বিরুদ্ধে বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে বছর খানেক ধরে সহবাস করার অভিযোগ দায়ের করেন অন্য এক তরুণী। এ দিন পুলিশ সন্দীপকে গ্রেফতার করে আনার পরেই ওই দুই তরুণী থানায় এসে মুখোমুখি হন। পরিচয় পেয়েই সন্দীপকে দাবি করে দুই তরুণীর বাক্যুুদ্ধ শুরু হয়ে যায়। শেষে পরিস্থিতি সামলাতে বোরো থানার ওসি অভিজিৎ সিংহ আসরে অবতীর্ণ হন। তিনি অভিযোগকারী তরুণীকে ডাক্তারি পরীক্ষা করানো হবে বলে তাঁকে নিয়ে সেখান থেকে বেরিয়ে যান।

যাওয়ার আগে ওই তরুণী দাবি করেন, সন্দীপের সঙ্গে গত চার বছর ধরে তাঁর পরিচয়। তাঁদের বাড়িতে যখনতখন সন্দীপের যাতায়াত ছিল। তাঁকে বিয়ে করার প্রতশ্রুতিও ওই যুবক দিয়েছিলেন বলে দাবি। তাঁর দাবি, “সন্দীপ আমাকে বিয়ে করবে বলে জানানোয় আমাদের ঘনিষ্ঠতাকে বাড়ির লোক মান্যতাও দিয়েছিল। দু’বছর আগে সে এনভিএফ হিসেবে কাজ পায়। কিন্তু কয়েকমাস ধরে সন্দীপের আচরণে পরিবর্তন দেখছিলাম। বাড়িতেও আসাযাওয়া বন্ধ করে দিয়েছিল। কিন্তু ও যে লুকিয়ে বিয়ে করবে ভাবতে পারিনি।” বিয়ে করার খবর শুনেই তিনি সটান থানায় গিয়ে সন্দীপের নামে নালিশ ঠোকেন। তাঁর দাদা বলেন, “পাড়া-প্রতিবেশি সবাই সন্দীপের সঙ্গে আমার বোনের মেলামেশার কথা জানে। এখন সে লুকিয়ে বিয়ে করলে আমরা মানব কেন?”

মুখ শুকনো করে বাবার পাশে বসেছিলেন সন্দীপের স্ত্রী। সন্দীপের শ্বশুর বলেন, “খোঁজ করে ভাল ছেলে জেনে অনুষ্ঠান করে মেয়ের বিয়ে দিয়েছি। লুকোছাপার প্রশ্ন নেই। এখন এ সব উটকো ঝামেলা কেন উঠছে বুঝতে পারছি না। তাঁর প্রশ্ন সদ্য বিয়ে হওয়া স্বামীকে পুলিশ ধরে নিয়ে এলে কোনও স্ত্রী বাড়িতে চুপ করে বসে থাকতে পারে?”

পুলিশ জানিয়েছে, অভিযোগ দায়ের হওয়ার পর থেকেই সন্দীপ গাঢাকা দিয়ে ছিল। বাড়িতে গিয়েও প্রথম দিকে খোঁজ পাওয়া যায়নি। শেষে তাঁর মোবাইলের টাওয়ারের অবস্থান ধরে শুক্রবার সাতসকালে বাড়ি থেকে তাঁকে পাকড়াও করা হয়।” পুলিশ জানিয়েছে, অভিযোগের ভিত্তিতে আপাতত প্রতারণা ও ধর্ষণের চেষ্টার মামলা রুজু করা হয়েছে। তবে ডাক্তারি পরীক্ষায় শারীরিক সম্পর্কের প্রমাণ পাওয়া গেলে ধর্ষণের ধারাও যুক্ত করা হবে। দু’জনের গলা শুনে ততক্ষণে ঘুম ছুটে গিয়েছে সন্দীপের। তিনি দাবি করেন, “দিপালীর সঙ্গে আমার পরিচয় ছিল ঠিকই। কিন্তু ওর সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা ছিল না। সে এখন কেন এমন দাবি করছে মাথায় ঢুকছে না।”

samir dutta boro row over husband
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy