যুব সংসদ প্রতিযোগিতার মুহূর্ত ধরা পড়ল ক্যামেরায়। ময়ূরেশ্বরে ছবি তুলেছেন সোমনাথ মুস্তাফি।
বিরোধী পক্ষের কাছে দলীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে এতটা নাস্তানাবুদ হতে হবে তা ভাবেননি খোদ মুখ্যমন্ত্রী। তাই তাঁকেই আসরে নেমে পরিস্থিতি সামাল দিতে হল। আবার পরক্ষণেই শাসকদলের বিধায়কের কাছে ল্যাজেগোবরে অবস্থা হবে তাও ভাবেননি বিরোধী দলনেতাও। তাই মুখ রক্ষার খাতিরে টেবিল চাপড়ে বিরোধী পক্ষকেও অস্তিত্ব প্রমাণের চেষ্টা করতে হল। বৃহস্পতিবার কার্যত দু’পক্ষের বাদানুবাদে সরগরম হয়ে ওঠে বিধানসভা কক্ষ।
তবে ওই বিধানসভা কোনও আসল বিধানসভা নয়। এ দিন সংশ্লিষ্ট ময়ূরেশ্বর ২ ব্লক প্রশাসনের উদ্যোগ এবং স্থানীয় লোকপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের পরিচালনায় বার্ষিক ব্লক যুব বিধানসভা বসে লোকপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের সভা কক্ষে। ওই সভায় হাজির ছিলেন সংশ্লিষ্ট ময়ূরেশ্বর ২ ব্লকের বিডিও সৈয়দ মাসুদুর রহমান, পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি কল্যাণী দাস, স্থানীয় ঢেকা পঞ্চায়েতের প্রধান মিঠু গড়াই প্রমুখ। এ দিনের বার্ষিক ব্লক যুব বিধানসভার প্রতিযোগিতায় যোগ দিয়েছিল লোকপাড়া উচ্চবিদ্যালয়, নওয়াপাড়া-গুনুটিয়া কালীগতি মেমোরিয়াল হাইস্কুল এবং ময়ূরেশ্বর হাইস্কুল। প্রথম হয়েছে ময়ূরেশ্বর হাইস্কুল।
এ দিনের প্রতিযোগিতায় প্রথমেই যোগ দিয়েছিল লোকপাড়া হাইস্কুল। বিরোধী দলনেতা ব্রতীন ভট্টাচার্য প্রশ্ন তোলেন, কেন প্রাইমারি এবং হাইস্কুলে ছাত্র অনুপাতে শিক্ষক নেই? তা সত্ত্বেও শিক্ষকদের বিভিন্ন সরকারি কাজে লাগানো হচ্ছে? কেন স্কুলছুট রোখা যাচ্ছে না? জবাবি ভাষণে সুদীপ্তা মণ্ডল সরকারের নানা শিক্ষামূলক প্রকল্পের ফিরিস্তি তুলে ধরতেই টেবিল চাপড়ে সভা সরগরম করে তোলেন বিরোধী পক্ষ। তখন পরিস্থিতি সামাল দিতে আসরে নামতে হয় মুখ্যমন্ত্রী মধুরিমা ঘোষকে। মুখ্যমন্ত্রী বিরোধী পক্ষের উদ্দেশ্যে গলাবাজি না করে কী ভাবে উন্নয়ন করা যায় তার জন্য প্রস্তাব আহ্বান করে পরিস্থিতি সামাল দেন। সব থেকে সাড়া ফেলে দেন নওয়াপাড়া স্কুলের বিরোধী দলনেতা সন্দীপ গড়াইয়ের বক্তব্য। ওই দলনেতার বক্তব্য, গ্রামীণ স্বাস্থ্য পরিষেবা ভেঙে পড়েছে। অথচ সরকার তেমন কিছু করতে পারছে না কেন?
যুব সংসদ প্রতিযোগিতার মুহূর্ত ধরা পড়ল ক্যামেরায়। বোলপুরে ছবি তুলেছেন বিশ্বজিত্ রায়চৌধুরী।
জবাবি ভাষণে ওই স্কুলের মুখ্যমন্ত্রী ঋদ্ধি মণ্ডল বলেন, “সরকার স্বাস্থ্য পরিষেবা নিশ্চিত করার জন্য অ্যাম্বুল্যন্স এবং একাধিক ছোট স্বাস্থ্যকেন্দ্র গড়ে তোলার পরিকল্পনা নিয়েছে।” ময়ূরেশ্বর উচ্চ বিদ্যালয়ের মুখ্যমন্ত্রী বন্দনা রুজও দলীয় মন্ত্রীদের জন্য বেশ কয়েকবার আসরে নামেন। এ দিনের এই অনুষ্ঠান ঘিরে রীতিমতো উচ্ছ্বসিত ময়ূরেশ্বর উচ্চ বিদ্যালয়ের আইনমন্ত্রী বিদিশা সাহা, নওয়াপাড়া হাইস্কুলের কৃষিমন্ত্রী শেখ জসিমুদ্দিন, লোকপাড়া হাইস্কুলের অর্থমন্ত্রী প্রীতম মণ্ডলেরা। তাদের কথায়, “টিভিতে আমরা বিধানসভা অধিবেশনের নানা ছবি দেখেছি। আজকে আমরা তার সঙ্গে মিলিয়ে অভিনয় করতে গিয়ে বেশ ভালই লাগছিল। অন্যরকম এখটা অনুভূতি।” বিডিও সৈয়দ মাসুদুর রহমান বলেন, “আজকের ছাত্রছাত্রীরা আগামী দিনের নাগরিক। বিধানসভা সম্পর্কে তাদের যাতে সম্যক ধারণা গড়ে ওঠে তার জন্যই এই উদ্যোগ।” আয়োজক প্রতিষ্ঠানের পক্ষে অন্যতম উদ্যোক্তা সৌগত চৌধুরী এবং চিরন্তন মণ্ডলরা বলেন, “আজ, শুক্রবারও তাত্ক্ষণিক বক্তব্য, ক্যুইজ এবং বিভিন্ন সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতার আয়োজন করা রয়েছে। তাতে ব্লকের বিভিন্ন স্কুল থেকে কয়েকশো প্রতিযোগী যোগ দেবে।”
অন্য দিকে, এ দিন রামপুরহাট ও বোলপুরে যুব সংসদ প্রতিযোগিতা হয়েছে। রামপুরহাট পুরএলাকায় জয়ী হল রামপুরহাট গার্লস হাইস্কুল। রক্তকরবী পুরমঞ্চে রামপুরহাট পুর-এলাকার মাধ্যমিক স্তরের স্কুলগুলিকে নিয়ে ওই প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। প্রতিযোগিতায় দ্বিতীয় হয় রামপুরহাট রেলওয়ে আদর্শ বিদ্যালয়। তৃতীয় স্থান পায় রামপুরহাট নিশ্চন্তপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়। এ দিকে, তাত্ক্ষণিক বক্তৃতা এবং ক্যুইজ প্রতিযোগিতায় প্রথম হয় রামপুরহাট হাইস্কুল। প্রতিযোগিতার উদ্বোধন করেন রাজ্যের স্বাস্থ্য ও শিক্ষা দফতরের প্রতিমন্ত্রী আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়। বোলপুর পুরসভার উদ্যোগে বোলপুর বাঁধগোড়া কালীকৃষ্ণ উচ্চ বিদ্যালয়ে এই প্রতিযোগিতা হয়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy