Advertisement
E-Paper

সমবায় ব্যাঙ্ক খোলার দাবিতে ঘেরাও-বিক্ষোভ

আট মাসের বেশি দিন হয়ে গিয়েছে। ব্যাঙ্ক খোলেনি। এ দিকে আমানতকারীরা ব্যাঙ্কে গচ্ছিত টাকা ফেরত পাচ্ছেন না। কবে এই সমস্যা মিটবে তার আশ্বাস দিতে পারছেন না ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষও। স্বাভাবিক ভাবেই বীরভূম জেলা কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাঙ্ক নিয়ে দিশাহীন গ্রাহকদের ধৈর্যের বাঁধ ক্রমশ যে ভাঙছে এবং গ্রাহকেরা যে ক্রমশ আন্দোলনমুখী হচ্ছে ফের তার ইঙ্গিত মিলল নলহাটিতে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৩ জানুয়ারি ২০১৫ ০১:২৫
ভিতরে আটকে ম্যানেজার।  —নিজস্ব চিত্র

ভিতরে আটকে ম্যানেজার। —নিজস্ব চিত্র

আট মাসের বেশি দিন হয়ে গিয়েছে। ব্যাঙ্ক খোলেনি। এ দিকে আমানতকারীরা ব্যাঙ্কে গচ্ছিত টাকা ফেরত পাচ্ছেন না। কবে এই সমস্যা মিটবে তার আশ্বাস দিতে পারছেন না ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষও। স্বাভাবিক ভাবেই বীরভূম জেলা কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাঙ্ক নিয়ে দিশাহীন গ্রাহকদের ধৈর্যের বাঁধ ক্রমশ যে ভাঙছে এবং গ্রাহকেরা যে ক্রমশ আন্দোলনমুখী হচ্ছে ফের তার ইঙ্গিত মিলল নলহাটিতে।

বৃহস্পতিবার নলহাটিতে বীরভূম জেলা কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাঙ্কের শাখা অফিসের সামনে পাঁচ শতাধিক গ্রাহক ধর্না কর্মসূচি পালন করেন। সেই সঙ্গে ব্যাঙ্কের শাখা প্রবন্ধক-সহ কর্মীদের ভিতরে তালা লাগিয়ে আটকে রাখেন। জমায়েতকারীরা ব্যাঙ্কের সামনে রাস্তার টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ দেখান। তাঁদের অভিযোগ, দীর্ঘ আট মাস হল রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে বা দলের পক্ষ থেকে আদৌ কি কোনও সদর্থক পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে সে ব্যাপারে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী থেকে সমবায় মন্ত্রী কোনও বিবৃতি দিচ্ছেন না। তাঁরা শুধু বিষয়টি এখন আদালতে বিচারাধীন বলে ছেড়ে দিচ্ছেন। বিক্ষোভে সামিল আমানতকারীদের প্রশ্ন, কর্তৃপক্ষ কেন গ্রাহকদের অবস্থা বুঝে আগাম কোনও নোটিস দিয়ে ব্যঙ্কের খারাপ অবস্থার কথা জানিয়ে দেননি? এ ছাড়া ব্যাঙ্কের আর্থিক অবস্থা খারাপ থাকা সত্ত্বেও কেন ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ সাধারণ গ্রাহকদের কোটি কোটি জমানো টাকা নিয়ে কৃষকদের ঋণ হিসাবে টাকা পাইয়ে দিয়েছে? আজ সেই সমস্ত টাকা ব্যাঙ্ক আদায় করতে না পেরে সাধারণ গ্রাহকদের ভুগতে হচ্ছে!

এ দিন বেলা ১১টায় বিক্ষোভ কর্মসূচি শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সকাল ১০টার আগে ব্যাঙ্কের সামনে দলে দলে আমানতকারী গ্রামাঞ্চল এবং নলহাটি শহর থেকে জড়ো হতে থাকেন। ব্যাঙ্কের ম্যানেজার-সহ এক কর্মী অফিসে ঢোকার খবর পেয়ে সাড়ে ১০টা থেকেই ব্যাঙ্কের মূল প্রবেশদ্বারে তালা লাগিয়ে দেন আমানতকারীরা। ধর্না, বিক্ষোভ চালাতে থাকেন। বিক্ষোভকারীদের একাংশ টায়ার জ্বালিয়ে প্রতিবাদে সামিল হন। আমানতকারীরা দাবি জানাতে থাকেন, ‘অবিলম্বে ব্যাঙ্ক খুলতে হবে এবং ব্যাঙ্কে গচ্ছিত আমানতকারীদের টাকা সুদ সমেত ফেরত দিতে হবে’। সেই সঙ্গে বিক্ষোভকারীরা দাবি তোলেন, অনাদায়ী ঋণ গ্রহিতাদের তালিকা ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষকে জনসমক্ষে প্রকাশ করতে হবে। কারণ কারা এই পর্যায়ে আছে, সাধারণ মানুষ সেটা জানুক।

আমানতকারীদের এদিনের পূর্ব ঘোষিত আন্দোলনের জন্য ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ অশান্তি এড়াতে পুলিশি ব্যবস্থা করেছিল। তবুও আন্দোলনকারীদের বিক্ষোভ সামাল দিতে এক সময় দেখা যায় নলহাটির উপপুরপ্রধান তৃণমূলের ইমাম হোসেন ব্যাঙ্কে উপস্থিত হন। শেষমেশ পুলিশ এবং উপপুরপ্রধান বিক্ষোভকারীদের দাবির বিষয় ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নজরে আনার আশ্বাস দিলে দুপুর দু’টোর সময় ব্যাঙ্কের তালা খোলা হয়। বীরভূম জেলা কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাঙ্ক সূত্রে জানা গিয়েছে, নলহাটি শাখায় এখনও বিভিন্ন অনাদায়ী ঋণের পরিমাণ প্রায় সাত কোটি। এই শাখায় প্রায় পঁয়ত্রিশ হাজার গ্রাহকের প্রায় ৬৫ কোটি টাকা জমা আছে। নলহাটি থানার কাঁটাপাহাড়ি এলাকার বাসিন্দা সোনামনি হেমব্রম বলেন, “পাথর শিল্পাঞ্চলে কাজ করে কষ্ট করে দু’লক্ষ টাকা জমা করেছিলাম। ব্যাঙ্কের এই অবস্থা হবে বুঝতে পারিনি।”

নলহাটি শহরের বাসিন্দা মনিরুল ইসলামের ক্ষোভ, “ব্যাঙ্কের এই অবস্থার জন্য আমাদের মতো বেকার যুবকদের অবস্থা খারাপ হয়ে উঠেছে। যেটুকু জমানো টাকা আছে তাও যদি ফেরতের ব্যবস্থা না হয়, তা হলে দুর্বিষহ অবস্থা হবে।” কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাঙ্কের নলহাটি শাখার মিনি ডিপোজিট স্কিমের এজেন্ট নুরুল ইসলাম বলেন, “ব্যাঙ্কের আর্থিক লেনদেন বন্ধ হয়ে যাওয়ার জন্য আমার মতো শতাধিক এজেন্ট আজ বেকার হয়ে বসে আছি।” বীরভূম জেলা কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাঙ্কের নলহাটি শাখা ম্যানেজার অজয় মণ্ডল বলেন, “কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাঙ্ক খোলার বিষয়টি এখন আদালতে বিচারাধীন। সুতরাং এ ব্যাপারে যা বলার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বলবেন।”

rampurhat bank
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy