এত দিন বিমল গুরুং যা বলতেন, তা-ই শুনত তামাম পাহাড়। গুরুংয়ের সমর্থন ছিল বলেই কোনও সাংগঠনিক শক্তি না থাকা সত্ত্বেও দু’বার দার্জিলিং লোকসভা আসন থেকে জেতেন বিজেপি প্রার্থীরা, ২০০৯ সালে যশোবন্ত সিংহ এবং ২০১৪ সালে সুরেন্দ্রসিংহ অহলুওয়ালিয়া।এ বার পাহাড়ে বিমল নেই। বিনয় তামাংয়ের সেই দাপট নেই বলেই জানিয়েছেন পাহাড়ের অনেকে। তা হলে এই আসনের ভাগ্যে কী রয়েছে? মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পাহাড়ে ওঠার দিনে এই নিয়ে আলোচনা তুঙ্গে।
২০১৭ সালে পাহাড়ে দীর্ঘ রক্তক্ষয়ী আন্দোলনের প্রায় গোড়া থেকেই বিমল দার্জিলিংয়ের বাইরে। দেড় বছর হয়ে গেল তাঁর অজ্ঞাতবাসের। তাঁর আসনে বসেছেন বিনয়। তিনি মোর্চার প্রধান এবং জিটিএ-র তত্ত্বাবধায়ক চেয়ারম্যান। গত কয়েক মাস ধরেই তিনি বলছেন, তাঁরা আর এনডিএ-তে নেই। বরং লোকসভা ভোটে বিজেপির বিরোধিতাই করবেন।
এই আসনটি দখল করতে যে তৃণমূল এ বারে ঝাঁপাবে, সে কথা বলছেন পাহাড়ের অনেকেই। দার্জিলিং লোকসভা কেন্দ্রের মধ্যে রয়েছে সাতটি বিধানসভা আসন। কালিম্পং, দার্জিলিং, কার্শিয়াং পাহাড়ে। মাটিগাড়া নকশালবাড়ি, শিলিগুড়ি, ফাঁসিদেওয়া ও চোপড়া সমতলে। গত বারে ভাইচুং ভুটিয়াকে প্রার্থী করেও অহলুওয়ালিয়ার থেকে তৃণমূল তিনটি পাহাড়ি আসনেই অনেকটা পিছিয়ে ছিল। এ বার সেই জায়গাটাই দখল করার লক্ষ্য রয়েছে, মনে করছেন পাহাড়ের মানুষ। কিন্তু বিনয় কি পারবেন বিমলের মতো এক ডাকে পাহাড়ের সব ভোটকে নিজেদের বা তৃণমূলের বাক্সে আনতে? জিএনএলএফ, গোর্খা লিগ বা জাপের মতো দলগুলিও কি ভোটবাক্সে প্রভাব ফেলবে না? এই সব প্রশ্নই ঘুরছে পাহাড়ের মনে।
ব্রিগেড মঞ্চে ছিলেন বিনয় ও অনীত থাপা। মুখ্যমন্ত্রী একাধিক বার দু’জনের নামও বলেছেন। কিন্তু জিএনএলএফের মন ঘিসিং বা জাপের হরকাবাহাদুর ছেত্রীকেও গুরুত্ব দেন মমতা। যেমন গুরুত্ব দেন গোর্খা লিগ নেত্রী এবং মদন তামাংয়ের স্ত্রী ভারতী তামাংকে। গুরুং জমানার পরে বারবারই তিনি বলেছেন, পাহাড়ে এ বারে বহুদলীয় ব্যবস্থা, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা হল। সেই জিএনএলএফ, গোর্খা লিগ বা জাপ যদি এখন তাঁর বিরোধিতা করে, তবে? সে ক্ষেত্রে এদের সকলের ভোট কাটাকাটিতে কি আবার হারতে হবে তৃণমূলকে?
সূত্রের খবর, এ বার পাহাড় সফরের সময়ে জিএনএলএফ ও গোর্খা লিগের সঙ্গে আলাদা বৈঠক করতে পারেন মুখ্যমন্ত্রী। তাই এখনও অবধি নিজেদের অবস্থান জানায়নি এই দলগুলি। রবিবার দার্জিলিংয়ে দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সভা করেছে জিএনএলএফ। সূত্র্রের খবর, মমতা তাঁদের সঙ্গে আলোচনায় বসলে কী কী প্রস্তাব দেওয়া হবে তাঁকে, তা নিয়ে ওই বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে। দলের সাধারণ সম্পাদক মহেন্দ্র ছেত্রী বলেন, ‘‘মোর্চা যে ভাবে শুধু আর্থিক প্যাকেজ দিয়ে পাহাড়ের সমস্যা মেটাতে চাইছে, আমরা তাতে বিশ্বাসী নই। পাহাড়বাসীদের স্বার্থে যে সিদ্ধান্ত নেওয়ার, সেটাই আমরা নেব।’’ গোর্খা লিগের সভাপতি ভারতী তামাং বলেন, ‘‘আমরা নিজেদের মধ্যে আলোচনা করছি। অন্যদের সঙ্গেও আলোচনা করতে তৈরি। তার পরে সিদ্ধান্ত নেব।’’
হরকা তো বটেই, জাপের অন্যদের সঙ্গেও এর মধ্যে যোগাযোগ করা যায়নি। যদিও সিপিআরএমের প্রবক্তা গোবিন্দ ছেত্রী বলেছেন, ‘‘আমাদের সঙ্গে জাপ, গোর্খা লিগ, জিএনএলএফের প্রাথমিক আলোচনা হয়েছে। তৃণমূল, বিজেপি ও মোর্চাকে বাদ দিয়ে বাকি সব দলকে নিয়ে পাহাড় থেকে একজন প্রার্থী দিতে চাই। শীঘ্রই সর্বদলীয় বৈঠক ডাকা হবে। সেখানেই এই নিয়ে সিদ্ধান্ত হবে।’’
এর সঙ্গে না থেকেও আছেন বিমল গুরুং। এ দিন রোশন গিরি আবার এক বিবৃতি প্রকাশ করে জানিয়ে দিয়েছেন, তাঁরা কিন্তু এনডিএ-র সঙ্গেই আছেন। অর্থাৎ, গুরুংপন্থীরা বিজেপি প্রার্থীকে সমর্থন করবে।
সব মিলিয়ে যা পরিস্থিতি, তাতে এ বারের পাহাড় সফরেই এই জট কাটাতে হবে মুখ্যমন্ত্রীকে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy