Advertisement
E-Paper

রোগ চেপে রেখে রাজ্যই কালিদাস

এক সময়ে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের উচ্চ পদে থাকা রাজ্যের প্রাক্তন আমলার মন্তব্য, ‘‘এই প্রবণতা অনেকটা কালিদাসের মতো।’’ কেন?

দেবদূত ঘোষঠাকুর

শেষ আপডেট: ১৪ অক্টোবর ২০১৭ ০৩:৪৪

সংক্রামক রোগের তথ্য চেপে রাজ্য নিজের পায়েই কুড়ুল মারছে কি না, সেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করল।

এক সময়ে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের উচ্চ পদে থাকা রাজ্যের প্রাক্তন আমলার মন্তব্য, ‘‘এই প্রবণতা অনেকটা কালিদাসের মতো।’’ কেন? কেন্দ্রীয় সরকারের ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব মেডিক্যাল রিসার্চ (আইসিএমআর)-এর এক প্রাক্তন কর্তার ব্যাখ্যা— মশা নিয়ন্ত্রণে কোন রাজ্যে কতটা কীটনাশক বা কত ওষুধ যাবে, কেন্দ্র তা ঠিক করে বিভিন্ন পুরসভা এবং রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের পাঠানো পরিসংখ্যানের ভিত্তিতে। ‘‘কেন্দ্রকে সঠিক তথ্য না পাঠালে ভুগবেন আপনিই’’— মন্তব্য তাঁর।

কলকাতা পুরসভার স্বাস্থ্য দফতরের সঙ্গে দীর্ঘদিন যুক্ত থাকা এক অফিসার জানালেন, কোনও পুরসভা বছরে কতটা মশা মারার তেল কিংবা ম্যালেরিয়ার ওষুধ পাবে— তার একটা পরিমাণ নির্দিষ্ট থাকে। তাই কোনও বছর সংক্রমণ বেশি হলে কেন্দ্রকে জানাতে হয়। সেই হিসেবে বরাদ্দ বাড়ে। তথ্য চেপে গেলে রোগ প্রতিরোধ পরিকাঠামোতে টান পড়বে।

এই প্রবণতায় আতঙ্কিত রাজ্যের চিকিৎসা-বিজ্ঞানীরা। তাঁদেরই এক জনের মন্তব্য, ‘‘রোগ নিয়ে তথ্য লুকোনোটা এ রাজ্যের ব্যাধি।’’ তাঁর অভিযোগ, নব্বইয়ের দশকে কলকাতায় ম্যালিগন্যান্ট ম্যালেরিয়ার সংক্রমণ গোপন রাখার চেষ্টা হয়েছিল। পানীয় জলে আর্সেনিক-দূষণ থেকে যে ক্যানসার হয়— সেটাও রাজ্য প্রথমে স্বীকার করতে চায়নি। এর ফলে বেশ কিছু মানুষকে প্রায় বিনা চিকিৎসায় প্রাণ হারাতে হয়েছে।

কেন্দ্রের এক চিকিৎসা গবেষণা সংস্থার অন্যতম প্রাক্তন কর্তা সরাসরি বলছেন, রাজ্যে সরকার বদলের পরেও তথ্য গোপনের ধারা অব্যাহত। এবং তা এতটাই বেড়েছে যে, চিকিৎসকেরা ডেথ সার্টিফিকেটে অসুখের জায়গায় লিখছেন, ‘মাল্টি অর্গান ফেলিওর।’ ওই কর্তার কথায়, ‘‘মাল্টি অর্গান ফেলিওর কোনও রোগ নয়। কেন মাল্টি অর্গান ফেলিওর হচ্ছে সেটা লিখতে হবে। চিকিৎসকেরা কেন রোগটা লিখছেন না, বোঝা যাচ্ছে না।’’

ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন (আইএমএ)-এর রাজ্য শাখার সম্পাদক শান্তনু সেন দায় চাপিয়েছেন চিকিৎসকদেরই উপরে। শান্তনুবাবু বলেন, ‘‘সংক্রামক বলে তালিকাভুক্ত কোনও রোগে আক্রান্ত রোগী যদি চিকিৎসকের কাছে যান তা হলে চিকিৎসকের কর্তব্য, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানানো। এইচআইভি পজিটিভ হলে যেমন স্বাস্থ্য দফতরে জানানো উচিত, তেমনই কিছু রোগ রয়েছে, যাতে আক্রান্ত হলে পুরসভাকে জানানো দরকার।’’

সমস্যা এখানেই। অনেক ক্ষেত্রে চিকিৎসকেরা কোনও রোগীকে ‘ডেঙ্গি-আক্রান্ত’ লিখলেও পুরসভা এবং স্বাস্থ্য দফতর মানতে চাইছে না। ফলে সঙ্কটে পড়েছে সামগ্রিক রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাই।

Dengue Malaria State Government Mamata Banerjee ডেঙ্গি
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy