অজস্র স্কুলে প্রধান শিক্ষক নেই। সরকার সাহায্যপ্রাপ্ত স্কুলে ওই পদে নিয়োগ বন্ধ সাড়ে পাঁচ বছরেরও বেশি। অবশেষে নিয়োগ শুরু করার জন্য পরীক্ষার ব্যবস্থা হলেও সংশ্লিষ্ট আইনের একটি সংশোধনীর বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে কলকাতা হাইকোর্টে। প্রশ্ন উঠেছে, ওই সংশোধনী কি আদৌ সংবিধানসম্মত? এই বিষয়ে রাজ্য সরকার এবং স্কুল সার্ভিস কমিশন (এসএসসি)-কে দু’সপ্তাহের মধ্যে হলফনামা পেশের নির্দেশ দিয়েছেন বিচারপতি অরিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়।
শুক্রবার ছিল ওই পরীক্ষায় বসার জন্য অনলাইনে ফর্ম পূরণের শেষ দিন। তবে বিচারপতির নির্দেশ, মামলার আবেদনকারীদের সোমবার পর্যন্ত ফর্ম পূরণের সুযোগ দিতে হবে।
সরকার সাহায্যপ্রাপ্ত মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্কুলে প্রধান শিক্ষক নিয়োগ সংক্রান্ত আইনে মার্চে ওই সংশোধনী এনেছে রাজ্য। তাতে বলা হয়েছে, প্রধান শিক্ষকের পদে আবেদনের জন্য স্নাতকোত্তরে ন্যূনতম ৫০ শতাংশ নম্বর পেতেই হবে। পাঁচ শিক্ষক সেই সংশোধনীকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছেন। এ দিন তার শুনানি ছিল বিচারপতি বন্দ্যোপাধ্যায়ের আদালতে।
মামলার আবেদনকারী শিক্ষকদের আইনজীবী এক্রামুল বারি আদালতে জানান, ২০১২ সাল থেকে রাজ্যে সরকার অনুমোদিত স্কুলগুলিতে প্রধান শিক্ষক নিয়োগ হচ্ছে না। তাঁর মক্কেলরা শিক্ষকতা করছেন ১০ বছর ধরে। তাঁদের স্নাতকোত্তর ডিগ্রি রয়েছে। তা সত্ত্বেও তাঁরা এ বছর প্রধান শিক্ষকের পদে নিয়োগের পরীক্ষায় বসতে পারছেন না। কারণ, চলতি বছরের মার্চে নিয়োগ আইনে একটি সংশোধনী আনা হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, প্রধান শিক্ষক হতে গেলে স্নাতকোত্তর পরীক্ষায় কমপক্ষে ৫০ শতাংশ নম্বর থাকতে হবে।
আবেদনকারীদের আইনজীবীর বক্তব্য, হঠাৎ এ ভাবে আইন বদলের ফলে দু’দিক থেকে সমস্যা হচ্ছে। আগে নিয়ম ছিল, প্রধান শিক্ষকের পদে আবেদনের জন্য স্নাতকোত্তর পরীক্ষায় কমপক্ষে ৪০ শতাংশ নম্বর পেতে হবে। ২০১৬ সালে সেই নিয়ম বদলে ন্যূনতম নম্বর ৪৫ শতাংশ করে রাজ্য সরকার। কিন্তু চলতি বছরে তা বাড়িয়ে ৫০ শতাংশ করে দেওয়া হয়েছে। ২০১২ সাল থেকে প্রধান শিক্ষক নিয়োগ বন্ধ না-থাকলে ৪০ শতাংশ নম্বরের নিয়মেই তাঁর মক্কেলরা ইতিমধ্যে পরীক্ষায় বসার সুযোগ পেতেন। কিন্তু সংশোধিত নতুন আইন তাঁদের প্রধান শিক্ষক হওয়ার পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এক্রামুল তাঁর সওয়ালে অভিযোগ করেন, নিয়োগ সংক্রান্ত আইনের ওই সংশোধনী মোটেই সংবিধানসম্মত নয়। সরকারি স্কুলে প্রধান শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে ওই সংশোধনী মানছে না রাজ্য সরকারই। অর্থাৎ ওই সংশোধনীর মাধ্যমে সরকারি স্কুল এবং সরকার অনুমোদিত স্কুলের মধ্যে বৈষম্য করা হচ্ছে। শুক্রবার, প্রধান শিক্ষক পদের পরীক্ষায় বসার জন্য আবেদনের অনলাইনে ফর্ম পূরণের শেষ দিনে তাঁর মক্কেলরা আবেদন করতে পারেননি ওই সংশোধনীর জন্যই। তাঁদের ফর্ম পূরণের জন্য বাড়তি সময়ের ব্যবস্থা করা হোক।
বিচারপতি বন্দ্যোপাধ্যায় সওয়াল শুনে স্কুল সার্ভিস কমিশনের আইনজীবী অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়কে নির্দেশ দেন, ওই শিক্ষকদের আগামী সোমবারের মধ্যে পরীক্ষার ফর্ম পূরণ করতে দিতে হবে। একই সঙ্গে আদালতের নির্দেশ, সংশ্লিষ্ট আইনের ওই সংশোধনী সংবিধানসম্মত কি না, হলফনামায় তা জানাতে হবে রাজ্য সরকার ও স্কুল সার্ভিস কমিশনকে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy