E-Paper

পুজো অনুদান লাখে, মিড-ডে মিল ব্রাত্যই

গত এপ্রিলের আগে মিড-ডে মিলে বরাদ্দ বেড়েছিল নভেম্বরে। প্রাথমিকে মাথাপিছু বরাদ্দ হয়েছিল ৬ টাকা ১৯ পয়সা। উচ্চ প্রাথমিকে ৯ টাকা ২৯ পয়সা। তার আগে প্রাথমিকে বরাদ্দ ছিল ৫ টাকা ৪৫ পয়সা, উচ্চ প্রাথমিকে ৮ টাকা ১৭ পয়সা।

আর্যভট্ট খান

শেষ আপডেট: ০২ অগস্ট ২০২৫ ০৭:০৮
নেই মিড-ডে মিল খাওয়ার জায়গা। তাই খাওয়া-দাওয়া চলে শ্রেণিকক্ষেই। দমদম যশোর রোডে আর্যপল্লি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে।

নেই মিড-ডে মিল খাওয়ার জায়গা। তাই খাওয়া-দাওয়া চলে শ্রেণিকক্ষেই। দমদম যশোর রোডে আর্যপল্লি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। ছবি: স্নেহাশিস ভট্টাচার্য।

দুর্গাপুজোর সরকারি অনুদান গত বছরের তুলনায় ২৫ হাজার টাকা বেড়ে এ বার হল ১ লক্ষ ১০ হাজার। অথচ, এই রাজ্যেই মিড-ডে মিলের বরাদ্দ বাড়ে পয়সার অঙ্কে। গত এপ্রিলে মিড-ডে মিলের মাথাপিছু বরাদ্দ প্রাথমিকে বেড়ে হয়েছে ৬ টাকা ৭৮ পয়সা, উচ্চ প্রাথমিকে ১০ টাকা ১৭ পয়সা। শিক্ষকদের একাংশের প্রশ্ন, সরকার যদি পুজো-পিছু ১ লক্ষ ১০ হাজার টাকা করে দিতে পারে, তা হলে মিড-ডে মিলের বরাদ্দ বৃদ্ধির ক্ষেত্রে এই কার্পণ্য কেন?

গত এপ্রিলের আগে মিড-ডে মিলে বরাদ্দ বেড়েছিল নভেম্বরে। প্রাথমিকে মাথাপিছু বরাদ্দ হয়েছিল ৬ টাকা ১৯ পয়সা। উচ্চ প্রাথমিকে ৯ টাকা ২৯ পয়সা। তার আগে প্রাথমিকে বরাদ্দ ছিল ৫ টাকা ৪৫ পয়সা, উচ্চ প্রাথমিকে ৮ টাকা ১৭ পয়সা। প্রতিবারই বরাদ্দ বেড়েছে নামমাত্র। শিক্ষকেরা জানাচ্ছেন, প্রাথমিক ও উচ্চ প্রাথমিকে সপ্তাহে ছ’দিন মিড-ডে মিল দেওয়া হয়। সপ্তাহে এক দিন সয়াবিন-আলুর তরকারি, এক দিন আনাজ দেওয়া খিচুড়ি, এক দিন আলু চোখা ও ডাল, এক দিন নানা রকম আনাজের তরকারি ও ডাল এবং দু’দিন ডিম।

শিক্ষকদের প্রশ্ন, আজকের বাজারে এত কম টাকায় বাচ্চাদের পুষ্টিকর ও পেট ভরানো খাবার দেওয়া কী ভাবে সম্ভব? একটি ডিমের দামই সাড়ে ছয়-সাত টাকা। আলুর দাম কমপক্ষে ২৫ টাকা কেজি। পড়ুয়া-পিছু একটি আলু দিলেও সেটির দাম দুই-তিন টাকা পড়ে। এ ছাড়াও রয়েছে তেল, মশলা ও গ্যাসের খরচ। ‘বঙ্গীয় প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি’ এবং ‘মাধ্যমিক শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী সমিতি’র মতে, ডিম-ভাতের বদলে যে দিন সয়াবিন দেওয়া হচ্ছে, সে দিনও ওই বরাদ্দে চালানো মুশকিল। সয়াবিনের দাম ৮০-১০০ টাকা কেজি। এক-এক জনের পাতে অন্তত পাঁচ টাকার সয়াবিন দিতে হয়। সঙ্গে আলু। আবার যে দিন পাঁচমেশালি তরকারি ও ডাল দেওয়া হয়, সে দিনও ওই বরাদ্দে চলে না। প্রায় সব আনাজেরই দাম ৫০ টাকা কেজির আশপাশে। মুসুর ডালের দাম ১২০ থেকে ১৩০ টাকা কেজি। তাই ট্যালটেলে ডাল দেওয়া ছাড়া উপায় কী?

তা হলে এই বরাদ্দে মিড-ডে মিল দেওয়া হচ্ছে কী ভাবে? শিক্ষকেরা জানালেন, আলু চোখা আর মুসুর ডাল হলে ওই বরাদ্দে সামলে নেওয়া যায়। অন্যান্য দিন খাবারের মান কমাতে হয়। আনাজের তরকারির দিনে পাতে আনাজ পড়ে নামমাত্র। সয়াবিন পাতে পড়ে দু’-তিনটি। সপ্তাহে দু’দিন ডিমের বদলে এক দিন ডিমের ঝোল, অন্য দিন ডিমের ভুজিয়া আর ডাল। একটি ডিমের ভুজিয়ায় দু’জন পড়ুয়া খেয়ে নিতে পারে।

রাজ্যের মিড-ডে মিল দফতরের এক কর্তা বললেন, “এটি কেন্দ্র ও রাজ্যের যৌথ প্রকল্প। কেন্দ্র দেয় ৬০ শতাংশ, রাজ্য ৪০ শতাংশ। কেন্দ্র না বাড়ালে আমরা বরাদ্দ বাড়াব কী ভাবে?” যদিও শিক্ষকেরা জানালেন, কেন্দ্র না বাড়ালেও রাজ্য নিজেদের বরাদ্দ বাড়িয়েছে— এমন ঘটনা অন্য রাজ্যে ঘটেছে। তাঁদের প্রশ্ন, রাজ্য ৪৫,৩৩৬টি পুজো কমিটিকে ১ লক্ষ ১০ হাজার টাকা করে দিচ্ছে। তা হলে মিড-ডে মিলের বরাদ্দ চার-পাঁচ টাকা কি বাড়ানো যায় না? এ বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুকে ফোন এবং মেসেজ করা হলেও কোনও উত্তর পাওয়া যায়নি।

মিড-ডে মিলের খরচ

প্রাথমিকে বরাদ্দ: মাথাপিছু ৬.৭৮ টাকা।

উচ্চ প্রাথমিকে: ১০.১৭টাকা।

ডিম-আলুর ঝোল, ভাতের দিন মাথাপিছু খরচ

ডিম ৬.৫০ টাকা, আলু ৩ টাকা, তেল-মশলা ৩ টাকা, রান্নার গ্যাস ২ টাকা, মোট ১৪.৫০ টাকা।

প্রাথমিকে ঘাটতি ৭.৭২ টাকা। উচ্চ প্রাথমিকে ঘাটতি ৪.৩৩ টাকা।

সয়াবিনের তরকারি, ভাতের দিনে মাথাপিছু খরচ

সয়াবিন ৫ টাকা, আলু ৩ টাকা, তেল-মশলা ৩ টাকা, রান্নার গ্যাস ২ টাকা, মোট ১৩ টাকা।

প্রাথমিকে ঘাটতি ৬.২২ টাকা। উচ্চ প্রাথমিকে ঘাটতি ২.৮৩ টাকা

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

West Bengal government mid-day meal scheme mid-day meal

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy