সারা দেশে প্ল্যাটফর্ম টিকিটের দাম ১০ টাকা। অথচ সাত সপ্তাহের জন্য তাদের স্টেশনে প্ল্যাটফর্ম টিকিটের দাম দ্বিগুণ অর্থাৎ ২০ টাকা করে দিচ্ছে দক্ষিণ-পূর্ব রেল। ওই রেলের কর্তারা বলছেন, উৎসবের মরসুমে প্ল্যাটফর্মে ভিড় এড়াতেই এই ব্যবস্থা।
এই সিদ্ধান্তকে ঘিরে প্রশ্ন আর বিতর্ক শুরু হয়েছে রেল মহলেও। রেল সূত্রের খবর, ২০ সেপ্টেম্বর থেকে দক্ষিণ-পূর্ব রেলের সব স্টেশনে প্ল্যাটফর্মে ঢুকতে গেলে ২০ টাকা দিতে হবে। ওই বর্ধিত মূল্য নেওয়া হবে ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত।
প্রশ্ন উঠছে, ভারত জুড়ে প্ল্যাটফর্ম টিকিট ১০ টাকায় মিললে শুধু দক্ষিণ-পূর্ব রেলের মতো একটি জোনে দ্বিগুণ দাম নেওয়া যায় কী ভাবে? রেলের প্রাক্তন ও বর্তমান অনেক কর্তার বক্তব্য, মুম্বইয়ের গণেশ পুজো, দক্ষিণ ভারতের পোঙ্গল এবং বিহারের ছট পুজোর মতো সব উৎসবেই রাস্তাঘাটে কয়েক দিন ধরে মানুষের ঢল নামে। কিন্তু উৎসব উপলক্ষে কখনও কোনও রেল জোনকে প্ল্যাটফর্ম টিকিটের দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিতে দেখা যায়নি। দক্ষিণ-পূর্ব রেল হঠাৎ এ ব্যাপারে পথিকৃৎ হয়ে উঠতে চাইছে কেন?
দক্ষিণ-পূর্ব রেলের কর্তাদের কথায়, ‘উৎসবের মরসুমে প্রচুর সাধারণ মানুষ বিভিন্ন স্টেশনে ভিড় জমান। ভিড় কমাতেই এই ব্যবস্থা।’
যাত্রীদের বক্তব্য, দক্ষিণ-পূর্ব রেলের কোনও স্টেশনেই মল বা বড় রেস্তোরাঁ নেই। পুজোয় ভিড় হয় রাস্তায়। যাঁরা শহরতলি থেকে কলকাতায় আসবেন, তাঁরা তো টিকিটই কেটেই ট্রেন উঠবেন। তাই প্ল্যাটফর্ম টিকিটের দাম বাড়িয়ে ভিড় কমানোর যুক্তি ধোপে টেকে না।
যাত্রীরা জানাচ্ছেন, উৎসবে যাঁরা দূর থেকে বাড়ি ফিরছেন বা উৎসব শেষে যাঁরা কর্মস্থলে ফিরছেন, তাঁদের নিতে বা বিদায় জানাতে অনেক সময়ে বাড়ির লোকজন স্টেশনে যান। এটা দেখা যায় মূলত প্রান্তিক স্টেশনগুলিতে। রেল সময়মতো ট্রেন চালালে ওই ভিড়ও জমে থাকবে না। এ-দিক থেকেও উৎসবে ভিড় সামলাতে প্ল্যাটফর্ম টিকিটের দাম বাড়ানো যুক্তিগ্রাহ্য হতে পারে না।
৪২ দিন বা প্রায় ছ’সপ্তাহ প্ল্যাটফর্ম টিকিটের বাড়তি দাম চালু রাখা হচ্ছে কেন, উঠছে সেই প্রশ্নও। দক্ষিণ-পূর্ব রেলেরই কিছু কর্তার বক্তব্য, শুধু দুর্গাপুজোয় ওই টিকিটের বাড়তি দাম নেওয়া হচ্ছে— এ ভাবে দেখলে হবে না। ওই সময়ের মধ্যে পড়ছে ছটপুজোও। অর্থাৎ ছটপুজোর সময়েও প্ল্যাটফর্ম টিকিটের বর্ধিত মূল্য বহাল রাখা হচ্ছে। প্রশ্ন উঠছে, রেলে ন্যূনতম টিকিট পাঁচ টাকা। কেউ স্টেশনে অপেক্ষা করতে চাইলে তিনি তো তেমনই একটা টিকিট কেটে নিতে পারেন। ২০ টাকা খরচ করে প্ল্যাটফর্ম টিকিট কিনতে যাবেন কেন?
প্রশ্ন আছে আরও। দক্ষিণ-পূর্ব রেলের প্রধান স্টেশন হাওড়ায় তো পূর্ব রেলেরও বিশাল কর্মকাণ্ড চলে। অথচ পূর্ব রেল জানাচ্ছে, তাদের প্ল্যাটফর্ম টিকিটের দাম বাড়ানোর কোনও পরিকল্পনাই নেই। একই স্টেশনে রেলের একটি জোন প্ল্যাটফর্ম টিকিটের বাড়তি দাম নেবে আর অন্য জোন নেবে না— এটা কী করে হয়?
এই প্রশ্নের সূত্রেই মাথা তুলছে অন্য একটি প্রশ্ন। হাওড়া স্টেশনে পুরনো ভবন থেকে পূর্ব রেলের এবং নতুন ভবন থেকে দক্ষিণ-পূর্ব রেলের ট্রেন চলে। কিন্তু দু’টি ভবনই পূর্ব রেলের অধীন। প্রশ্ন উঠছে, দুই ভবনেই কি প্ল্যাটফর্ম টিকিটের দাম বাড়বে, নাকি একটিতে? রেলের একটি মহলের মতে, পূর্ব রেল তো দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্তই নেয়নি। তাই তাদের ট্রেন যে-ভবন থেকে যায়, সেখানে প্ল্যাটফর্ম টিকিটের দাম একই থাকছে। যে-ভবন থেকে দক্ষিণ-পূর্ব রেল ট্রেন চালায়, সেখানেও তারা ওই টিকিটের বাড়তি দাম নিতে পারে না। কেননা ওই ভবনেরও দেখভালও করে পূর্ব রেল। তারা তো প্ল্যাটফর্ম টিকিটের দাম বাড়াচ্ছেই না।
অর্থাৎ প্ল্যাটফর্ম টিকিটের দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হাওড়াতেই হোঁচট খাচ্ছে বলে মনে করছেন রেলকর্তাদের একাংশ। সে-ক্ষেত্রে দক্ষিণ-পূর্ব রেলের বড় স্টেশন বলতে বাকি থাকে খড়্গপুর, টাটানগরের মতো কয়েকটি। বাড়তি দাম নেওয়া হবে কি শুধু সেগুলিতেই? কেন? রেলের তরফে সদুত্তর নেই। তবে রসিক যাত্রীরা বলছেন, পুজোর আগে রিকশা থেকে ট্যাক্সি সকলেই ভাড়ার সঙ্গে বোনাস চায়। এ বার রেলও চাইছে। এত প্রশ্নের কী আছে?
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy