বিভিন্ন শিক্ষক সংগঠনের যাবতীয় দাবি এবং আন্দোলন সত্ত্বেও রাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের পুনর্নিয়োগের ব্যবস্থা স্থগিতই থাকছে বলে জানিয়ে দিয়েছে রাজ্য সরকার। তবে পুনর্নিযুক্ত যে-সব শিক্ষকের অধীনে পিএইচডি ছাত্রছাত্রী রয়েছেন, তাঁদের কিছু ছাড় দেওয়ার ভাবনাচিন্তা শুরু হয়েছে সরকারি মহলে। ছাড় মানে ওই সব শিক্ষককে তাঁদের পুনর্নিযুক্তির মেয়াদটুকু অন্তত শেষ করার সুযোগ দেওয়া হতে পারে।
কেন এটা ভাবতে হচ্ছে, সোমবার শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় নিজেই তার ব্যাখ্যা দেন। ‘‘যাঁদের অধীনে পিএইচডি পড়ুয়ারা রয়েছেন, সেই সব শিক্ষক বা শিক্ষিকার পুনর্নিয়োগের মেয়াদ শেষ করতে দেওয়ার কথা ভাবতে হচ্ছে গবেষকদের স্বার্থেই। ওই সব শিক্ষকের পুনর্নিযুক্তিতে হঠাৎ ছেদ টেনে দিলে ক্ষতি হতে পারে গবেষকদেরই। সেটা বাঞ্ছনীয় নয়। দেখা যাক, কী হয়,’’ বলেন পার্থবাবু।
শিক্ষা শিবিরের একাংশের প্রশ্ন, গবেষকদের স্বার্থে পুনর্নিযুক্ত শিক্ষক-শিক্ষিকাদের মেয়াদ শেষ করতে দেওয়ার ভাবনা নিশ্চয়ই যুক্তিযুক্ত। একই যুক্তিতে তো পুনর্নিয়োগের বন্দোবস্ত চালু রাখার আবেদন ও দাবি জানাচ্ছে বিভিন্ন শিক্ষক সংগঠন। সেটা বিবেচনা করা হবে না কেন? বহু কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়েই অজস্র শিক্ষক-পদ খালি। পঠনপাঠন মার খাচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে পড়ুয়াদের ক্ষতি এড়াতেই তো অবসরের পরেও দক্ষ শিক্ষকদের রেখে দেওয়ার প্রথা চলে আসছিল। গবেষকদের ক্ষতির কথা ভাবলে সাধারণ পড়ুয়াদের স্বার্থই বা দেখা হবে না কেন?
সরকারের তরফে এর সদুত্তর মিলছে না। নভেম্বরে নির্দেশিকা জারি করে রাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে অবসরের পরে শিক্ষকদের পুনর্নিয়োগ স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেছিল সরকার। তার পরেও যাদবপুরের মতো কিছু প্রতিষ্ঠান নিজেদের সিদ্ধান্তে অবসরপ্রাপ্ত কিছু শিক্ষককে রেখে দেয়। তাতে ক্ষিপ্ত হয়ে শিক্ষামন্ত্রী তথা সরকার জানিয়ে দেন, কোনও ভাবেই পুনর্নিয়োগ চালিয়ে যেতে দেওয়া হবে না।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে ৭ জানুয়ারির শিক্ষা সম্মেলনে ঘোষণা করেন, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকদের অবসরের বয়স ৬০ থেকে ৬২ করা হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন বা ইউজিসি-র নিয়ম অনুযায়ী কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের অবসরের বয়স হওয়া উচিত ৬৫ বছর। কিন্তু এই রাজ্যে সেই ব্যবস্থা কার্যকর হয়নি। দীর্ঘদিন ধরেই ৬০ বছরে অবসরের পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের ৬৫ বছর পর্যন্ত পুনর্নিয়োগের সুযোগ দেওয়া হচ্ছিল। শিক্ষাজগতের পর্যবেক্ষণ, পুনর্নিয়োগ আর পঁয়ষট্টিতে অবসরের দাবি এ ভাবেই পরস্পরের সঙ্গে যুক্ত। পুনর্নিয়োগ স্থগিতের পরে অবসরের বয়স ৬২ করে দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী সেই দাবি আংশিক ভাবে মেনে নিয়েছেন। বন্ধ করে দিয়েছেন পুনর্নিয়োগের দাবিতে আন্দোলনের রাস্তাও।
তার পরে গবেষকদের বিভিন্ন গাইডের পুনর্নিয়োগের মেয়াদ শেষ করতে দেওয়ার কথা তুলে শিক্ষকদের ক্ষোভে আরও একটু মলম লাগিয়ে দেওয়া হচ্ছে বলেই মনে করছে শিক্ষা মহলের একটি বড় অংশ।
সরকার-বিরোধী বিভিন্ন শিক্ষক সংগঠন অবশ্য এখনও ৬৫ বছরে অবসরের দাবিতে অনড়। সেই সঙ্গে যে-সব শিক্ষকের পুনর্নিয়োগের ব্যবস্থা করেও তা স্থগিত রাখা হয়েছে, তাঁদের মেয়াদ শেষ করতে দেওয়ার দাবি জানাচ্ছে তারা। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি (জুটা)-র প্রতিনিধিরা শনিবার শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেন। পার্থবাবু ওই প্রতিনিধিদের জানান, পুনর্নিয়োগের বদলে নতুন শিক্ষক নিয়োগেই বেশি আগ্রহী তাঁরা। জুটার সহ-সম্পাদক পার্থপ্রতিম রায় এ দিন বলেন, ‘‘৬৫ বছরে অবসরের দাবি জানানো হয়েছে। প্রয়োজনে আমরা বৃহত্তর আন্দোলনের পথে যাব।’’ একই দাবিতে রাজ্যের সব বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতিকে নিয়ে ১১ ফেব্রুয়ারি একটি সম্মেলনের ডাক দিয়েছে অন্যতম শিক্ষক সংগঠন ওয়েবকুটা।