Advertisement
E-Paper

সরকার-বিরোধী কথা বন্ধে বিধিতে বাঁধন

সংবাদমাধ্যমে রাজ্য সরকারের নীতির বিরোধিতা করলেই কি এ বার শাস্তির মুখে পড়বেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক বা কর্মচারীরা? বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রস্তাবিত নতুন বিধি সম্পর্কে আচার্যের দফতর থেকে যে পর্যবেক্ষণ এসেছে, তাতেই যুক্ত হয়েছে এমন সুপারিশ।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৯ অগস্ট ২০১৬ ০৪:০৩

সংবাদমাধ্যমে রাজ্য সরকারের নীতির বিরোধিতা করলেই কি এ বার শাস্তির মুখে পড়বেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক বা কর্মচারীরা? বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রস্তাবিত নতুন বিধি সম্পর্কে আচার্যের দফতর থেকে যে পর্যবেক্ষণ এসেছে, তাতেই যুক্ত হয়েছে এমন সুপারিশ। এমনকী, কোনও শিক্ষক বা কর্মচারীর আচরণ রাজ্য বা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বার্থের পরিপন্থী বলে মনে হলেই তাঁর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলা হয়েছে ওই সংযোজনে। স্বাভাবিক ভাবেই এ হেন প্রস্তাব ঘিরে উত্তপ্ত যাদবপুরের অন্দর।

তৃণমূল সরকার ক্ষমতায় আসার পরে রাজ্যে নতুন বিশ্ববিদ্যালয় আইন পাশ হয়েছে। তার পরেই বিধি ঘষামাজার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে রাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় বছর তিনেক আগে তাদের সংশোধিত বিধি পাঠায় আচার্যের দফতরে। রাজ্যের উচ্চশিক্ষা দফতরের প্রিন্সিপ্যাল সেক্রেটারিই পদাধিকার বলে আচার্যের সচিব। অন্য সব ফাইলের মতো সংশোধিত বিধিও তাঁর কাছেই পাঠানো হয়।

বিধি সংশোধনের প্রক্রিয়াটি হল: বিধানসভায় পাশ হওয়া আইনের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠানো বিধির সামঞ্জস্য আছে কি না, তা গোড়ায় খতিয়ে দেখা হয়। কোনও সংযোজন, পরিমার্জনের প্রস্তাব থাকলে তা জানিয়ে বিধি ফেরত পাঠানো হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে। বিশ্ববিদ্যালয় সেই সংশোধন বিবেচনা করে। শেষ পর্যন্ত দুই পক্ষের মতামত এক জায়গায় মিললে চূড়ান্ত খসড়ায় সই করেন আচার্য। তার পর তা কার্যকর হয়। আপাতত সংশোধিত বিধিতে কিছু সংযোজন যুক্ত হয়ে আচার্যের সচিবের কাছ থেকে তা বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে পৌঁছেছে।

কী ধরনের সংযোজন? বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে বলা হচ্ছে, কোনও শিক্ষক, আধিকারিক বা শিক্ষাকর্মী সংবাদমাধ্যমে সরকারের নীতির বিরোধিতা করলে তা শৃঙ্খলাভঙ্গ হিসেবে বিবেচনা করার প্রস্তাব করা হয়েছে। সেই সঙ্গে বলা হয়েছে, যদি বিশ্ববিদ্যালয় বা রাজ্য সরকারের মনে হয় যে কোনও কাজ বিশ্ববিদ্যালয় বা রাজ্য সরকারের ক্ষতি করছে তবে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির বিরুদ্ধে শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগ আনা হবে।

রয়েছে শাস্তির প্রসঙ্গও। প্রাথমিক ভাবে তদন্ত কমিটি গড়ার কথা বলা হয়েছে। সেই কমিটির রিপোর্ট পেশ করা হবে বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মসমিতিতে। দোষী সাব্যস্ত হলে গোড়ায় ভর্ৎসনা। তার পর বেতনবৃদ্ধি অথবা পদোন্নতি আটকে যেতে পারে। এমনকী চাকরিও যেতে পারে, বা পাঠানো হতে পারে বাধ্যতামূলক অবসরে। আর এতেই উঠেছে আপত্তির ঝড়। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধি কমিটির অন্যতম সদস্য পার্থপ্রতিম বিশ্বাস বলেন, ‘‘যে খসড়া বিধি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আচার্যের কাছে সর্বসম্মত সিদ্ধান্তক্রমে যায় তাতে এই জাতীয় শাস্তির বিধান ছিল না। এটা দুর্ভাগ্যজনক।’’

বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেকেরই মতে, নামে আচার্যের দফতরে পাঠানো হলেও আদতে এই পর্যায়ে বিধি পর্যালোচনা করে উচ্চশিক্ষা দফতরই। ফলে এই সব সুপারিশ আসলে রাজ্য সরকারেরই। সে কথা অস্বীকার করেননি নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক উচ্চশিক্ষা দফতরের এক কর্তাও। তাঁর কথায়, ‘‘এই নিয়ন্ত্রণ জারি করার ভাবনা মূলত রাজ্য সরকারের। তবে উচ্চশিক্ষা দফতরের প্রিন্সিপ্যাল সেক্রেটারি আচার্যের সচিব হওয়ার সুবাদে তাঁর (আচার্য) সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে হয়তো আলোচনা করেও থাকতে পারেন।’’ এই সূত্রে শিক্ষক সংগঠন আবুটার যুগ্ম সম্পাদক গৌতম মাইতি বলেন, ‘‘সরকার বিশ্ববিদ্যালয়ের টুঁটি টিপে ধরতে চাইছে।’’

এর পর কোন পথে হাঁটবে বিশ্ববিদ্যালয়? বিধির বাঁধন যাদের উপর বর্তানোর কথা, সেই শিক্ষক, আধিকারিক, শিক্ষাকর্মী সংগঠনগুলির কাছে প্রস্তাবের প্রতিলিপি পাঠানো হয়েছে। তাদের মতামত এলে বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মসমিতি তা বিবেচনা করবে। তাদের সিদ্ধান্ত ফের পাঠানো হবে আচার্যের দফতরে। বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্দরের যা মনোভাব, তাতে সংযোজনের প্রস্তাব খারিজ হওয়ারই সম্ভাবনা। জুটার সভাপতি নীলাঞ্জনা গুপ্ত এ দিনই বলেছেন, ‘‘উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে শাস্তির বিষয়টি বিধির অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। পরবর্তী আন্দোলন কী ভাবে করা হবে তা নিয়ে শুক্রবার আলোচনায় বসব।’’

ফলে যাদবপুরে আবার একটা সংঘাতের ক্ষেত্র তৈরি হচ্ছে বলেই অনেকের মত। উচ্চশিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে এ নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘‘আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মসমিতি তাদের বক্তব্য জানাক। তার পর আমরা যা বলার বলব।’’

Recommendation Jadavpur University
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy