নীলাদ্রি দাস। ফাইল চিত্র।
বিস্তর ঝুঁকির আশঙ্কায় তিনি নিয়োগ দুর্নীতির কালো টাকার নগদ লেনদেনের রাস্তা নেননি বলে মনে করছে সিবিআই। তাদের অভিযোগ, বড় অঙ্কের টাকা সরিয়ে ফেলার জন্য নীলাদ্রি দাস হাওয়ালার অপেক্ষাকৃত নিরাপদ পথ বেছে নিয়েছিলেন।
শিক্ষায় নিয়োগ দুর্নীতির কালো টাকা অনেকেই বাড়িতে বা ফ্ল্যাটে লুকিয়ে রেখেছিলেন, কেউ কেউ সেই টাকা যে নগদে হাতবদল করেছেন, তার ভূরি ভূরি প্রমাণ তারা ইতিমধ্যে পেয়েছে বলে তদন্তকারী সংস্থার অভিযোগ। কিন্তু সিবিআই জানাচ্ছে, যে-সংস্থার উপরে নিয়োগ পরীক্ষার দায়িত্ব বর্তেছিল, সেই নাইসা-র আধিকারিক নীলাদ্রি ‘ঘুরপথে’ টাকা তুললেও নগদ লেনদেনের পথ এড়িয়েছেন বাড়তি ঝুঁকি আছে বলেই। সিবিআইয়ের দাবি, প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় এবং এসএসসি বা স্কুল সার্ভিস কমিশনের প্রাক্তন চেয়ারম্যান সুবীরেশ ভট্টাচার্যের সঙ্গে যোগসাজশে ২০১৫ সাল থেকে নিয়োগ দুর্নীতিতে লিপ্ত ছিলেন নীলাদ্রি। নাইসার আধিকারিক পদে থেকেও নীলাদ্রি ২০১৫ সালেই উত্তরপ্রদেশের নয়ডায় ‘এনডি ইনফো সিস্টেম প্রাইভেট লিমিটেড’ নামে অন্য একটি সংস্থা খুলেছিলেন। নাইসার পাশাপাশি ওই সংস্থার মাধ্যমেও ‘ওএমআর শিট’ বা উত্তরপত্রের নম্বর বিকৃত করা হয়েছে বলে তদন্তকারীদের দাবি।
সিবিআই সূত্রের খবর, নীলাদ্রি নিজের ‘মিডলম্যান’ বা দালালদের নিয়ে একটি দল তৈরি করেছিলেন। পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুর, মুর্শিদাবাদ ও দক্ষিণ ২৪ পরগনায় তাঁর ন’জন দালাল সক্রিয় ছিলেন। তদন্তকারীদের দাবি, ওই ন’জনের সঙ্গে আরও অন্তত ৫০ জন দালালের যোগসূত্র পাওয়া গিয়েছে। শিক্ষা ছাড়াও রাজ্য পুলিশ, খাদ্য দফতর, রেল ও সেনাবাহিনীতে নিয়োগের প্রতিশ্রুতি দিয়ে কোটি কোটি কালো টাকা লুটের অভিযোগও উঠেছে নীলাদ্রির বিরুদ্ধে।
তদন্তকারীদের দাবি, ২০১৯ সালের জানুয়ারিতে মামলা দায়ের করে নিয়োগ দুর্নীতির তদন্ত শুরু করে সিআইডি। তখনই নীলাদ্রির ওই ন’জন দালালকে গ্রেফতার করা হয়। চাকরি বিক্রির কালো টাকা ওই দালালেরা হাওয়ালা মারফত নীলাদ্রির কাছে পৌঁছে দিতেন বলে চার্জশিটে উল্লেখ করেছিল সিআইডি-ও। তারা চার্জশিটে এটাও উল্লেখ করেছিল যে, ওই মামলায় বড়বাজারের এক ব্যবসায়ীকে শনাক্ত করা গিয়েছে। কিন্তু ওই মামলায় কোনও হাওয়ালা ব্যবসায়ীকে শেষ পর্যন্ত গ্রেফতার করা হয়নি। চার্জশিট থেকেও বাদ দেওয়া হয়েছিল নীলাদ্রির নাম।
সিবিআইয়ের প্রশ্ন, নিজের দালালদের মাধ্যমে হাওয়ালায় টাকা নেওয়া সত্ত্বেও নীলাদ্রির বিরুদ্ধে সিআইডি কোনও পদক্ষেপ করেনি কেন? এক সিবিআই-কর্তা বলেন, ‘‘ওই মামলার সমস্ত নথি সংগ্রহ করা হয়েছে। সেগুলির পর্যালোচনা চলছে। প্রয়োজনে উচ্চ আদালতেও তা পেশ করা হবে। পাশাপাশি ওই মামলায় সিআইডি-র তরফে যাঁরা তদন্ত করেছিলেন, তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ করার প্রস্তুতিও চলছে।’’সিআইডি-র এক কর্তার পাল্টা দাবি, ‘‘সঠিক পথেই তদন্ত হয়েছে। ওই মামলার বিচার প্রক্রিয়া চলছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy