Advertisement
E-Paper

গরম ভাত চাই না, খুনিদের ধরুন

আদর-আপ্যায়ন দরকার নেই, ঠিকমতো তদন্তটা হোক। এনআরএসের হস্টেলে গণপ্রহারে নিহত কোরপান শা-র স্ত্রী-পরিজন ও প্রতিবেশীরা সবিনয় এই অনুরোধই জানিয়ে গেলেন পুলিশকে। বৃহস্পতিবার স্বামীর মৃত্যুর অভিযোগ লেখাতে উলুবেড়িয়া থেকে এন্টালি থানায় এসেছিলেন ওঁরা। পুলিশ শুধু তাঁদের সঙ্গে ভাল ব্যবহারই করেনি, রীতিমতো আপ্যায়নের ব্যবস্থা করে রেখেছিল।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২১ নভেম্বর ২০১৪ ০৩:১৪

আদর-আপ্যায়ন দরকার নেই, ঠিকমতো তদন্তটা হোক। এনআরএসের হস্টেলে গণপ্রহারে নিহত কোরপান শা-র স্ত্রী-পরিজন ও প্রতিবেশীরা সবিনয় এই অনুরোধই জানিয়ে গেলেন পুলিশকে।

বৃহস্পতিবার স্বামীর মৃত্যুর অভিযোগ লেখাতে উলুবেড়িয়া থেকে এন্টালি থানায় এসেছিলেন ওঁরা। পুলিশ শুধু তাঁদের সঙ্গে ভাল ব্যবহারই করেনি, রীতিমতো আপ্যায়নের ব্যবস্থা করে রেখেছিল। পুলিশের তরফে এই মানবিক মুখ উপস্থিত কয়েক জনকে মনে পড়িয়ে দিচ্ছিল সিনেমায় দেখা আইনরক্ষকের ছবি। কিন্তু সদ্য স্বামীহারা আরজিনা বিবি বা তাঁর সঙ্গে আসা পড়শিরা তাঁদের আসল জ্বালাটা ভুলে যাননি। যে পুলিশ এখনও কাউকে গ্রেফতারই করতে পারেনি, যে পুলিশের বিরুদ্ধে উঠছে উপযুক্ত তদন্ত না করার অভিযোগ সেই পুলিশের কাছ থেকে মধ্যাহ্নভোজের প্রস্তাব গ্রহণ করতে পারেননি ওঁরা। মুখে ক্ষোভ প্রকাশ না করেও কখনও সবিনয়ে, কখনও কোনও কথা না বলে ফিরিয়ে দিয়েছেন আপ্যায়ন। তাঁদের একটাই কথা, “কাজের কাজটা করুক পুলিশ। তাতেই আমরা খুশি হব।”

বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ন’টা নাগাদ স্বামীর হত্যাকারীদের উপযুক্ত শাস্তির দাবি জানাতে উলুুবেড়িয়ার খৈজুড়ি থেকে চার নাবালক সন্তানকে নিয়ে শহরে এসেছিলেন অন্তঃসত্ত্বা আরজিনা বিবি, তাঁর মা রিজিয়া বিবি এবং কোরপানের খুড়তুতো ভাই রওশন। এলাকায় তৃণমূলী পরিবার বলেই পরিচিত তাঁরা। সঙ্গে ছিলেন পড়শি আবদুল হান্নান, সুরপালি শা-সহ আরও কয়েক জন। থানায় অভিযোগ লেখার কাজের তদারকি করছিলেন হান্নানই। বেলা এগারোটা নাগাদ অভিযোগ লেখার কাজ সেরে তিনি ঢোকেন এন্টালি থানার ওসি-র ঘরে।

মিনিট দশেক পরে যখন বেরিয়ে এলেন হান্নান, তাঁর মুখে মৃদু হাসি। বললেন, “পুলিশের ব্যবহারের কোনও তুলনা হয় না। খুব ভাল।

বড়বাবু আমাদের ক্যান্টিনে গরম ভাত খেয়ে যেতে বললেন।” কিন্তু আদরযত্নে কি হত্যাকাণ্ডের ক্ষতে প্রলেপ পড়ে? হান্নান স্পষ্ট উচ্চারণে বললেন, “আমি ‘না’ বলে দিয়েছি। বলেছি গরম ভাতের দরকার নেই।” কেন? “এ সব করে কী হবে? পুলিশ কোরপানের খুনিদেরই তো ধরছে না!” হান্নানের কথা শেষ হতেই রওশন বলে ওঠেন, “এ সব না করে কাজের কাজটা করুক না পুলিশ। তাতেই আমরা খুশি হব।”

থানার কর্মীদের খাওয়ার জন্য এন্টালি থানার ভিতরেই একটা ক্যান্টিন রয়েছে। আরজিনাদের দুপুরে খাওয়ানোর জন্য থানার কর্তারা আগেই ক্যান্টিন কর্মীদের বাড়তি ব্যবস্থা রাখতে বলেছিলেন। ওসি-র ঘর থেকে বের হওয়ার পরে এক পুলিশকর্মীও আরজিনাদের বলেন, “আপনাদের জন্য ভিতরে ভাত খাওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে। খেয়ে যেতে পারেন।”

কিন্তু খাওয়ার জন্য আর দাঁড়াননি আরজিনা। থানা থেকে বেরিয়ে আসেন তিনি। তাঁর পিছুপিছু বেরিয়ে আসেন রওশন এবং সঙ্গীরাও। তাঁদের এই নীরব প্রত্যাখ্যানে হতভম্ব হয়ে যান পুলিশকর্মীরাও। তাঁদেরই এক জন পরে বলছিলেন, “আমাদের মুখে তো থাপ্পড় মেরে গেলেন ওঁরা। কত অভাবে দিন চলে এঁদের। তাঁরাও মেরুদণ্ড সোজা করে প্রতিবাদটা জানিয়ে গেলেন। আর আমাদের কর্তারা দোষীদের ধরার জন্য এখনও নেতাদের দিকে তাকিয়ে আছেন।”

শিরদাঁড়া টান করা প্রতিবাদ তো এর আগেও দেখিয়েছেন রাজ্যবাসী। কামদুনিতে নিহত কলেজছাত্রীর পরিবার প্রথমে সরাসরি মুখ্যমন্ত্রীর মুখের উপরে চাকরির প্রস্তাব নাকচ করে চলে এসেছিল। কিন্তু ক্রমাগত রাজনৈতিক চাপ এবং হুমকির মুখে অবস্থান বদলান তাঁরা। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র আন্দোলন তুঙ্গে ওঠায় নিগৃহীতা ছাত্রীর বাড়ি গিয়ে শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। এনআরএসে নিহত কোরপান শা-র বাড়িতে কিন্তু এ ক’দিনের মধ্যে শাসক দলের নেতা-মন্ত্রীদের পা পড়েনি।

এ দিন থানার ভিতরে নিজেকে অনেক কষ্টে সামলে রেখেছিলেন আরজিনা। কিন্তু বেরিয়ে আর সামলাতে পারলেন না। কাঁদতে কাঁদতে বললেন, “আমার স্বামীকে যাঁরা এই ভাবে মারল তাঁদের শাস্তি চাই। চারটি দুধের শিশুকে যাতে খাইয়ে-পরিয়ে বাঁচিয়ে রাখতে পারি তার ব্যবস্থা করতে চাই।” রাজ্য প্রতিবন্ধী সম্মিলনীর সভাপতি কান্তি গঙ্গোপাধ্যায় ঘটনার বিচারবিভাগীয় তদন্তের দাবি তুলেছেন।

আরজিনারা ফেরার পরে এ দিন বেলা তিনটে নাগাদ তাঁদের বাড়িতে আসে প্রদেশ কংগ্রেসের একটি প্রতিনিধিদল। দলের নেতৃত্বে ছিলেন ওমপ্রকাশ মিশ্র। তিনি ২৫ হাজার টাকা আরজিনাকে দিয়ে বলেন, “আমরা রাজ্য সরকারের কাছে ক্ষতিপূরণের দাবি জানাব। সরকার না মানলে আমি পাঁচ বছর ধরে প্রতি মাসে পাঁচ হাজার টাকা করে দেব।” কংগ্রেস বিধায়ক অসিত মিত্রও দু’হাজার টাকা আরজিনার হাতে তুলে দিয়ে বলেন, “আমি মাসে দু’হাজার টাকা করে দেব।” আরজিনার নিজের একটাই প্রশ্ন, “এখানে চোলাই খেয়ে মরলে যদি দু’লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ মেলে, তা হলে আমি ক্ষতিপূরণ পাব না কেন?”

NRS case entally police station police hospitality korpan shah's family hostel demands proper probe Relatives of korpan murdered state news online news
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy