Advertisement
E-Paper

ভরদুপুরে ডাকাতি মল্লারপুরের ব্যাঙ্কে

ছ’জন অপরিচিত যুবক হন্তদন্ত হয়ে ঢুকে পড়ল ব্যাঙ্কে। দু’ জনের মুখ ঢাকা দেখে ততক্ষণে উঠে পড়েছেন ক্যাশিয়ার। কিন্তু তিনি কিছু করার আগেই তাঁর জামা টেনে ধরল একজন যুবক। অন্য দিকে, এক গ্রাহককে টানতে টানতে আগ্নেয়াস্ত্র দেখিয়ে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দিয়ে ম্যানেজারের ঘরের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। তাঁকে এবং ব্যাঙ্ক কর্মীদের মাটিতে মাথা নীচু করে বসে থাকতে বলে, মাথায় বন্দুক ঠেকিয়ে হাতিয়ে নিচ্ছে ভল্টের চাবি, ক্যাশ!

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৪ মে ২০১৬ ০২:০৩
ব্যাঙ্কের ভিতরে তদন্তে পুলিশ।

ব্যাঙ্কের ভিতরে তদন্তে পুলিশ।

ছ’জন অপরিচিত যুবক হন্তদন্ত হয়ে ঢুকে পড়ল ব্যাঙ্কে। দু’ জনের মুখ ঢাকা দেখে ততক্ষণে উঠে পড়েছেন ক্যাশিয়ার। কিন্তু তিনি কিছু করার আগেই তাঁর জামা টেনে ধরল একজন যুবক। অন্য দিকে, এক গ্রাহককে টানতে টানতে আগ্নেয়াস্ত্র দেখিয়ে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দিয়ে ম্যানেজারের ঘরের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। তাঁকে এবং ব্যাঙ্ক কর্মীদের মাটিতে মাথা নীচু করে বসে থাকতে বলে, মাথায় বন্দুক ঠেকিয়ে হাতিয়ে নিচ্ছে ভল্টের চাবি, ক্যাশ!

কোনও হিন্দি সিনেমার দৃশ্য নয়।

সোমবার ঠিক এমন করেই প্রায় কুড়ি মিনিটের অপারেশন সেরে ছ’ জনের একটি সশস্ত্র দুষ্কৃতী দল ময়ূরেশ্বর থানার মল্লারপুরে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক থেকে নগদ প্রায় ৩৫ লক্ষ টাকা ডাকাতি করে বেমালুম পালিয়ে গেল। যাওয়ার সময় তারা ওই ব্যাঙ্কের সিসিটিভি-র ফুটেজের হার্ড ডিক্স নিয়ে যায়। পুলিশ ঘটনার তদন্তে নেমেছে। প্রাথমিক তদন্তে তাঁদের অনুমান, দলটি বহিরাগত। তাৎপর্যপূর্ণ ব্যাপার হল, ওই ব্যাঙ্কে কোনও নিরাপত্তা রক্ষীর ব্যবস্থাই নেই! ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষের যুক্তি, নির্দেশ না মেলায় ব্যাঙ্কে কোনও পাহারাদার রাখা হয়নি।

প্রসঙ্গত, মাস দু’য়েকের ব্যবধানে রামপুরহাট মহকুমা এলাকায় ফের বড় সড় ব্যাঙ্ক ডাকাতির ঘটনা ঘটল। গত ১৭ মার্চ মল্লারপুর থেকে ছ’কিমি দূরে রামপুরহাট থানার কাষ্টগড়া এলাকায় পশ্চিমবঙ্গ গ্রামীণ ব্যঙ্কের শাখায় প্রায় সাত লক্ষ টাকা ডাকাতি করে পালায় সশস্ত্র দুষ্কৃতী দল। ওই ডাকাতির কিনারা না হতেই পুনরায় জনবহুল এলাকায় থাকা একটি ব্যাঙ্কে এ দিন এই ডাকাতির ঘটনা ঘটল।

‘‘দুষ্কৃতী দল অফিসের ভিতরে থাকা ছ’জন কর্মী ও দশ বারো জন গ্রাহককে একটি ঘরে বসিয়ে রাখে। আমার কাছে এসে একজন প্রথমে কানের কাছে আগ্নেয়াস্ত্র ধরে রেখে চুপচাপ মোবাইল দিয়ে দিতে বলেন। পরে আমার সামনে থাকা সিসিটিভি-র সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়। পরে মুখ ঢেকে থাকা একজন দুষ্কৃতী, কাছে থাকা অ্যালার্ম বেলে হাত দিতে নিষেধ করে। পরে ব্যাঙ্কের একজন মহিলা কর্মীকে আগ্নেয়াস্ত্র দেখিয়ে ভয় দেখিয়ে ভল্ট খোলার জন্য ভল্টের কাছে নিয়ে যায়। ভল্টে থাকা প্রায় ১৪ লক্ষ টাকা নেওয়ার পর সমস্ত কর্মী-সহ দশ জন গ্রাহককে ভিতরে ঢুকিয়ে বাইরে থেকে দরজা বন্ধ করে দেয় ওরা’’, বলেন ব্যাঙ্কের ম্যানেজার অরুণ কুমার হিমাংশু।

ভাঙা সিসিটিভি। —নিজস্ব চিত্র

এ দিন দুপুরে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, মল্লারপুর তেমাথা মোড় থেকে বাহিনা মোড় যাওয়ার রাস্তার উপর একটি তিনতলা বাড়ির দোতলায় ওই ব্যাঙ্কের সামনে পুলিশের গাড়ি দাঁড়িয়ে। স্থানীয় মানুষের ভিড় গাড়িটিকে ঘিরে। তিনতলা বাড়িটির নীচের তলায় একটি কাপড়ের দোকান। কিন্তু সোমবার মল্লারপুর বাজার বন্ধ থাকার জন্য কাপড়ের দোকান-সহ অন্যান্য দোকান-বাজারও বন্ধ। অন্যান্য দিন বাজার খোলা থাকার জন্য রাস্তায় লোক সমাগম বেশি থাকে। এ দিন রাস্তা ফাঁকাই ছিল।

ব্যাঙ্কে ঢুকে দেখা মিলল মল্লারপুর এলাকার বাসিন্দা গোলাম রসুলের সঙ্গে। গোলাম রসুল ব্যাঙ্কে এসেছিলেন। দুষ্কৃতী দল ব্যাঙ্কে যখন ঢোকে তখন তিনি ব্যাঙ্কের ভিতর গ্রাহকদের বেঞ্চে বসেছিলেন। গোলাম জানালেন, ‘‘আনুমানিক পঁচিশ– তিরিশ বছর বয়সের হবে ওরা। ক্যাশিয়ারের জামা টেনে ধরে কিছু একটা বলছে মনে হল। তারপরেই আমাকে দেখতে পেয়ে একজন আমাকে টানতে টানতে আগ্নেয়াস্ত্র দেখিয়ে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দিয়ে ম্যানেজারের ঘরে নিয়ে যায়।’’ ব্যাঙ্কের ক্যাশিয়ার সারদারঞ্জন মিশ্র বলেন, ‘‘আমার জামার কলার ধরে মাথায় পিস্তল জাতীয় আগ্নেয়াস্ত্র দেখিয়ে প্রাণে মারার হুমকি দিয়ে আমার কাছে থাকা আজকের কালেকশন বাবদ প্রায় ২১ লক্ষ টাকা ছিনিয়ে নেয়। আমাকে ম্যানেজারের রুমের কাছে নিয়ে গিয়ে মাথা নিচু করে বসে থাকতে বলে মোবাইল কেড়ে নেয়।’’ অরুণ শঙ্কর নামে এক কর্মী এ দিন দুষ্কৃতীদের মারে অসুস্থ হয়ে পড়ে।

জেলার পুলিশ সুপার সব্যসাচী রমণ মিশ্র বলেন, ‘‘বিষয়টা দেখছি। তদন্ত শুরু হয়েছে।’’ কেন ব্যাঙ্কে সুরক্ষা কর্মী ছিল না, বা এত টাকা লেনদেনের দিনই কীভাবে ঘটনা ঘটল— তদন্তে খতিয়ে দেখছে জেলা পুলিশ। দুষ্কৃতীরা গাড়িতে করে এসেছিল এমন বলছেন গ্রাহকদের কেউ কেউ। সেক্ষেত্রে পাশের রাজ্য ঝাড়খণ্ডে ডাকাত দলটির পালিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনাও উড়িয়ে দিচ্ছেন না তদন্তকারীরা।

bank robbery
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy