ফের এ রাজ্যের সীমানা লাগোয়া ঝাড়খণ্ডের মারদু গ্রামে খাঁচাবন্দি হল রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার। বুধবার ভোরে মারদু গ্রামের এক বাসিন্দার বাড়িতে ঢুকে পড়ে বাঘটি। বাড়ির মালিক কোনও ক্রমে ঘর থেকে বেরিয়ে দরজায় শিকল তুলে দেওয়ায় বাঘটি ওই ঘরে বন্দি হয়ে পড়ে। দিনভর বন্দি থাকার পর অবশেষে বুধবার সন্ধ্যায় বন দফতর ঘরের দরজায় খাঁচা পেতে বাঘটিকে খাঁচাবন্দি করে। আপাতত খাঁচাবন্দি বাঘটিকে পালামো নিয়ে যাওয়া হবে বলে জানিয়েছে বন দফতর।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বুধবার ভোর সাড়ে ৪টে নাগাদ এ রাজ্যের একেবারে সীমানা লাগোয়া ঝাড়খণ্ডের শিলি বনাঞ্চলের মারদু গ্রামে পুরন্দর মাহাতো নামের এক বাসিন্দার বাড়িতে ঢুকে পড়ে পূর্ণ বয়স্ক একটি রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার। যে বাড়িতে বাঘটি ঢুকে পড়েছিল, সেই বাড়িতে তখন দুই কন্যাসন্তান-সহ পরিবারের লোকেরা ঘুমোচ্ছিলেন। আচমকাই পরিবারের একজন বাঘটি দেখতে পেয়ে হতচকিত হয়ে পড়েন। এর পর অত্যন্ত সন্তর্পণে ওই ঘরে থাকা প্রত্যেককে বাড়ির বাইরে নিয়ে আসেন ওই ব্যক্তি। পরে ঘরের দরজার শিকল বাইরে থেকে তুলে দিলে বাঘটি ঘরের মধ্যে আটকে পড়ে। বিষয়টি জানাজানি হতেই বুধবার সকাল থেকে ভিড় জমতে থাকে পুরন্দরের বাড়িতে। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছোন স্থানীয় পুলিশ ও বন দফতরের কর্মীরা। খবর পেয়ে বুধবার দুপুরেই গ্রামে হাজির হন ঝাড়খণ্ডের মুখ্য বনপাল (বন্যপ্রাণ) পরিতোষ উপাধ্যায়। বুধবার সন্ধ্যার মুখে ওই ঘরের দরজা খুলে পাতা হয় খাঁচা। সন্ধ্যা পৌনে ৬টা নাগাদ সেই খাঁচায় ধরা দেয় বাঘটি।
পুরন্দর বলেন, ‘‘বাড়িতে তিনটি ঘর। একটি ঘরে আমাদের বাড়ির দুই মেয়ে শুয়ে ছিল। আমি ভোরবেলায় দরজা খুলে ছাগল ও গরু বাঁধছিলাম। আচমককাই দেখি একটি বাঘ লাফ দিয়ে খোলা দরজা দিয়ে ঘরের মধ্যে ঢুকে পড়ল। আমিও বাঘের পিছন পিছন ঘরে ঢুকে পড়ি। দেখি খাটের তলায় বাঘটি আশ্রয় নিয়েছে। কোনও ক্রমে দুই মেয়েকে ঘর থেকে বার করে দিয়েছিলাম। কিন্তু আমি বেরোতে পারিনি। প্রায় এক ঘণ্টা ধরে বাঘের সঙ্গে ছিলাম। বাঘটি আমাকে আক্রমণ করেনি। তবে সমানে গর্জন করে যাচ্ছিল। পরে বাঘটি পাশের রুমে চলে যেতেই আমি বাইরে বেরোনোর সুযোগ পেয়ে যাই। বাইরে বেরিয়েই আমি দরজার শিকল তুলে দেওয়ায় বাঘটি আটকে পড়ে।”
ঝাড়খণ্ডের বন দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, বাঘটিকে প্রাথমিক ভাবে পালামো নিয়ে যাওয়া হবে। সেখানে শারীরিক পরীক্ষার পর পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন রাঁচির ডিএফও শ্রীকান্ত বর্মা। এ রাজ্যের সীমানা লাগোয়া মারদু গ্রামে ওই বাঘটি কী ভাবে এল, তা খতিয়ে দেখছে বন দফতর। রাঁচির ডিএফও বলেন, “কিছু দিন আগে দলমা পাহাড়ে একটি বাঘ বন দফতরের নজরে এসেছিল। এই বাঘের উচ্চতা ও বয়স দেখে মনে হচ্ছে, সেই বাঘটিই কোনও ভাবে এই গ্রামে চলে এসেছিল। প্রাথমিক ভাবে ধারণা, দলমা পাহাড়ে প্রবল বৃষ্টির কারণে আশ্রয়ের খোঁজে বাঘটি এই গ্রামে চলে আসতে পারে।”