বাঙালি নির্যাতন ইস্যুতে ‘চাপে’ থাকা বিজেপি বাংলার ভোটের আগে হিন্দুত্বকেই হাতিয়ার করতে চাইছে। তার জন্য জোর দেওয়া হচ্ছে সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন বা সিএএ-তে। সিএএ কার্যকর হয়েছে, কিন্তু লক্ষ্যপূরণ এখনও অনেক দূর বলে মনে করা হচ্ছে। তাই ভোটের আগে নির্দিষ্ট উদ্দেশ্য নিয়েই মাঠে নামতে চাইছে পদ্মশিবির। এই কাজে পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির সঙ্গী হচ্ছে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘও (আরএসএস)। বিজেপিকে সঙ্গে নিয়ে অভিযানের কায়দায় সিএএ সংক্রান্ত লক্ষ্যপূরণের দিকে ঝুঁকছে তারা। কলকাতায় বৃহস্পতিবার সঙ্ঘের সর্বভারতীয় নেতৃত্বের প্রতিনিধির উপস্থিতিতে আরএসএস এবং বিজেপির বৈঠক হল। সঙ্ঘ এবং বিজেপি সূত্রের খবর, সে বৈঠকে সবচেয়ে বেশি জোর দেওয়া হয়েছে সিএএ-র আওতায় দ্রুত যত বেশি সম্ভব উদ্বাস্তুকে নাগরিকত্ব পাইয়ে দেওয়ার বিষয়ে। এ ছাড়া, ভোটার তালিকার বিশেষ নিবিড় সমীক্ষা (এসআইআর) নিয়েও এই বৈঠকে কথা হয়েছে বলে সূত্র মারফত জানা যাচ্ছে। বিজেপি এবং আরএসএস যৌথ অভিযানের ভঙ্গিতে সিএএ-লক্ষ্যপূরণে ময়দানে ঝাঁপাবে বলে বিজেপি সূত্রে খবর।
বৃহস্পতিবার বিধাননগরের একটি হোটেলে বিশেষ সমন্বয় বৈঠকে বাংলার বিজেপি নেতৃত্বকে ডেকেছিল আরএসএস। ছিলেন রাজ্য বিজেপির সভাপতি শমীক ভট্টাচার্য। বৈঠককে এতটাই গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে যে, বিজেপির সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক বিএল সন্তোষও কলকাতায় এসেছিলেন। সঙ্ঘের তরফ থেকে ছিলেন সর্বভারতীয় স্তরের পদাধিকারী প্রদীপ যোশী। এ ছাড়াও রমাপদ পাল, জলধর মাহাতো, জিষ্ণু বসুর মতো পদাধিকারীরা বৈঠকে ছিলেন, যাঁরা পূর্ব ভারতে সঙ্ঘের নানা দায়িত্বে রয়েছেন।
আরও পড়ুন:
রাজ্য বিজেপির তরফে শমীক ছাড়াও উত্তরবঙ্গের প্রতিনিধি হিসাবে ছিলেন বিধায়ক দীপক বর্মণ, মধ্যবঙ্গের প্রতিনিধি হিসাবে ছিলেন সাংসদ জগন্নাথ সরকার, দক্ষিণবঙ্গের প্রতিনিধি হিসাবে ছিলেন রাজ্য সাধারণ সম্পাদক জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায়। এ ছাড়া জেলাভিত্তিক প্রতিনিধি হিসাবে কয়েক জন বিধায়ক এবং অন্য নেতারা ছিলেন। উত্তরবঙ্গ, মধ্যবঙ্গ এবং দক্ষিণবঙ্গ থেকে বিজেপির যে তিন প্রতিনিধি বৃহস্পতিবারের বৈঠকে ছিলেন, বাংলার তিন এলাকায় মূলত তাঁরাই এই অভিযানের সামগ্রিক দেখভালের দায়িত্বে থাকছেন বলে বিজেপি সূত্রের দাবি।
সূত্রের খবর, সিএএ-র আওতায় যাঁরা পড়ছেন, তাঁদের সকলের আবেদন যাতে দ্রুত জমা পড়ে, সকলে যাতে নির্ভয়ে নাগরিকত্ব চেয়ে আবেদন জমা দিতে পারেন, তা নিশ্চিত করতে নির্দিষ্ট কর্মপন্থা স্থির হয়েছে বিজেপি-আরএসএস বৈঠকে। আবেদনকারীরা যাতে সকলে নাগরিকত্ব পেয়ে যান, তা-ও দেখা হবে। আরএসএস-এর ছাতার তলায় থাকা বিভিন্ন সংগঠন এর জন্য ময়দানে নামবে। তবে এই অভিযানে যে বিজেপিকেই মূল ভূমিকা নিতে বলা হচ্ছে, বৃহস্পতিবারের বৈঠকের পর অনেকেই সে বিষয়ে নিশ্চিত।
বিজেপি এবং আরএসএস-এর মধ্যে সমন্বয় বৈঠক অবশ্য নতুন কিছু নয়। নির্দিষ্ট সময় অন্তর নিয়মিত এই বৈঠক হয়। কিন্তু বিধাননগরে যে ভাবে বৈঠক হল এবং তাতে দুই সংগঠনের প্রতিনিধিত্বের যে বিন্যাস দেখা গেল, এই ধরনের বৈঠকে তা বেশ বিরল। জরুরি ভিত্তিতে কোনও বিষয় নিয়ে মাঠে নামার জন্যই যে এই বিশেষ সমন্বয় বৈঠক, তা আরও স্পষ্ট হল।