Advertisement
E-Paper

অচেনার আনাগোনা, গুজব রটিয়ে উধাও

ছেলেধরা গুজব রটিয়ে গণধোলাইয়ের ঘটনা ঘটছে এ রাজ্যেও। হয়েছে মৃত্যুও। কারা রটাচ্ছে এই গুজব? কেন? আনন্দবাজারের প্রতিবেদন।মালদহের একাংশের মানুষের প্রশ্ন, ওই দম্পতি যদি ছেলেধরাই হবে, তাহলে পরদিন কেন একই জায়গায় ফিরে এল? প্রশ্নের সূত্র ধরে যে ব্যাখ্যায় পৌঁছনো গেল, তার সঙ্গে পূর্ব মেদিনীপুরের তফাত নেই।

স্যমন্তক ঘোষ

শেষ আপডেট: ১০ জুলাই ২০১৮ ০৪:৪৬
গুজবকে কেন্দ্র করে গণধোলাইয়ের অন্তত ১০টি ঘটনা ঘটেছে মালদহের হবিবপুর, পুরাতন মালদহ এবং ইংরেজবাজারে। প্রতীকী ছবি।

গুজবকে কেন্দ্র করে গণধোলাইয়ের অন্তত ১০টি ঘটনা ঘটেছে মালদহের হবিবপুর, পুরাতন মালদহ এবং ইংরেজবাজারে। প্রতীকী ছবি।

তৃণমূলের পার্টি অফিসে বসে বছরদশেকের বালক। অভিযোগ, সপ্তাহখানেক আগে তাকেই চুরি করার চেষ্টা করেছিল ‘ছেলেধরা’ দম্পতি। সেই দম্পতি আপাতত হাজতে।

থমথমে মুখে শিশুটি যে গল্প বলল, তাতে এটুকু বোঝা যায়, অস্বাভাবিক কিছু ঘটেছে। জানা গেল, ওই দম্পতি পাখা সারাতে এসেছিল তাদের বাড়িতে। দাদুর কাছে খুচরো ছিল না বলে ওই দম্পতির সঙ্গে নাতিকে কাছের দোকানে পাঠিয়েছিলেন তিনি। অভিযোগ, সেই সুযোগে ওই দম্পতি তাকে গাড়িতে তুলে চম্পট দেওয়ার চেষ্টা করে। তবে বেশি দূর যেতে পারেনি। সুযোগ বুঝে শিশুটি গাড়ি থেকে ঝাঁপিয়ে নেমে পড়ে। এলাকাবাসীর দাবি, পরদিন একই জায়গায় ওই দম্পতি ফিরে আসে। তখন শুরু হয় গণধোলাই।

মালদহের একাংশের মানুষের প্রশ্ন, ওই দম্পতি যদি ছেলেধরাই হবে, তাহলে পরদিন কেন একই জায়গায় ফিরে এল? প্রশ্নের সূত্র ধরে যে ব্যাখ্যায় পৌঁছনো গেল, তার সঙ্গে পূর্ব মেদিনীপুরের তফাত নেই। সোশ্যাল মিডিয়ায় ‘ছেলেধরা’ গুজব ছড়িয়ে পড়েছে এলাকায়। যেখানে একটি ধর্মীয় সম্প্রদায়কে নিশানা করে ‘ছেলেধরা’র বার্তা রটানো হচ্ছে। অনেকেই যার পিছনে রাজনীতির গন্ধ পাচ্ছেন।

মালদহের যে অঞ্চলে ছেলেধরা গুজব ঘুরপাক খাচ্ছে, সেখানে সদ্য সমাপ্ত পঞ্চায়েত ভোটে ফল ভাল করেছে বিজেপি। পুরাতন মালদহের সাহাপুর এলাকায় ২৩টি গ্রাম পঞ্চায়েতের মধ্যে বিজেপির দখলে ১৩টি। ৩টি পঞ্চায়েত সমিতির মধ্যে বিজেপি পেয়েছে দু’টো। একটি জেলা পরিষদও বিজেপির দখলে। আইহো এলাকাতেও ৫টি গ্রাম পঞ্চায়েত পেয়েছে বিজেপি।

হবিবপুরে তৃণমূলের ব্লক সভাপতি প্রভাস চৌধুরীর অভিযোগ, ‘‘ধর্মীয় মেরুকরণ করে ভোটে ফায়দা তোলার জন্য এমন ঘটনা ঘটাচ্ছে বিজেপি। মানুষের মধ্যে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে।’’ মালদহ বিজেপি’র সাধারণ সম্পাদক মানবেন্দ্র চক্রবর্তীর পাল্টা জবাব, ‘‘তৃণমূল ভোটে ব্যাপক সন্ত্রাস চালিয়েও ওইসব অঞ্চলে আমাদের হারাতে পারেনি। তাই কৌশলে এলাকায় উত্তেজনা ছড়ানোর চেষ্টা করছে।’’

ঘটনা হল, সেই গুজবকে কেন্দ্র করে ইতিমধ্যেই গণধোলাইয়ের অন্তত ১০টি ঘটনা ঘটেছে মালদহের হবিবপুর, পুরাতন মালদহ এবং ইংরেজবাজারে। মৃত্যু হয়েছে একজনের। এবং যাঁরা মার খাচ্ছেন, তাঁদের অনেকেই সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষ।

বুলবুলচণ্ডীর মাঠে গোলপোস্টে বেঁধে পিটিয়ে মেরে ফেলা হয়েছিল যে যুবককে, তাঁর পরিচয় অবশ্য এখনও জানা যায়নি। ঘটনার পর পুরুষশূন্য গ্রাম। পুলিশ তল্লাশি চালাচ্ছে প্রতিদিন। গ্রামের মহিলাদের মুখবন্ধ। পুরাতন মালদহের সাহাপুর অঞ্চলে যে ঘটনা ঘটেছে, সেখানে মার খেয়েছেন কালিয়াচক অঞ্চলের এক শিক্ষক। খবর, সাহাপুরে নিয়মিত পড়াতে আসতেন তিনি। গ্রামেরই এক যুবক রাকেশের সঙ্গে তাঁর ব্যক্তিগত বিবাদ ছিল। এলাকাবাসীর অভিযোগ, ‘ছেলেধরা’ আতঙ্ক কাজে লাগিয়ে স্বার্থসিদ্ধির চেষ্টা করেছিল রাকেশ। অনেকটা মেদিনীপুরের কায়দায়। রাকেশ এখন পুলিশি হেফাজতে।

সাহাপুরের প্রবীণ সিপিএম নেতা অবনী মণ্ডলের বক্তব্য, ‘‘ছেলেধরা গুজবটি রাজনৈতিক। ইদানীং পাড়ার চায়ের দোকানে অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিদের দেখা যাচ্ছে। নানারকম গুজব রটিয়ে বেপাত্তা হয়ে যাচ্ছে তারা।’’ অবনীবাবুর সন্দেহ, ধর্মীয় বিভেদের রাজনীতি করার জন্যই একটি দল এ ধরনের গুজব রটাচ্ছে। কারা গুজব রটাচ্ছে, তা নিয়ে মন্তব্য করতে চায়নি পুলিশ-প্রশাসন। মেসেজের উৎস খুঁজছে জেলার সাইবার থানা। তবে মালদহের বাসিন্দাদের বড় অংশের অভিমত, লোকসভা নির্বাচনের সময় যত কাছে আসছে, কোনও কোনও রাজনৈতিক দল সামাজিক সংগঠনের আড়ালে বিদ্বেষের বীজ পুঁতছে।

‘ছেলেধরা’ তেমনই এক বিষবৃক্ষ।

Rumour Lynching
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy