Advertisement
E-Paper

বিহার, নেপাল হয়ে পাঁচ বছরের সন্তানকে নিয়ে পালিয়েছেন রাশিয়ান মা! কী করে পারলেন? সুপ্রিম কোর্টে প্রশ্নের মুখে কেন্দ্র

গত ১৭ জুলাই শুনানিতে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়ে চন্দননগরের বাসিন্দা সৈকত বসু জানিয়েছিলেন, তাঁর পাঁচ বছরের সন্তানকে নিয়ে উধাও হয়ে গিয়েছেন রাশিয়ান স্ত্রী ভিক্টোরিয়া। সোমবারের শুনানিতে কেন্দ্র আদালতে জানায়, ওই মহিলা কী ভাবে ভারত ছেড়ে রাশিয়ায় পালিয়েছেন।

আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২১ জুলাই ২০২৫ ২০:৪৬
Russian mother absconded with five-year-old child, Centre tells Supreme Court

(বাঁ দিকে) সুপ্রিম কোর্ট এবং রাশিয়ান মা ভিক্টোরিয়া (ডান দিকে)। —ফাইল চিত্র।

বিহার, নেপাল হয়ে উড়ে গিয়েছিলেন দুবাই। তার পরে সেখান থেকে সোজা রাশিয়ায়! পাঁচ বছরের পুত্রসন্তানকে নিয়ে এ ভাবেই ভারত ছেড়েছেন রাশিয়ান মা। সোমবার সুপ্রিম কোর্টে এমনই জানাল কেন্দ্র। কী ভাবে তারা এই তথ্য জানতে পেরেছে, তা-ও শীর্ষ আদালতে জানিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। পাশাপাশি, এ-ও জানিয়েছে, গোটা ঘটনার তদন্ত করা হচ্ছে।

গত ১৭ জুলাই শুনানিতে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়ে চন্দননগরের বাসিন্দা সৈকত বসু জানিয়েছিলেন, তাঁর পাঁচ বছরের সন্তানকে নিয়ে উধাও হয়ে গিয়েছেন রাশিয়ান স্ত্রী ভিক্টোরিয়া। গত ৭ জুলাই থেকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না দু’জনকে। সেই শুনানিতে অবিলম্বে ওই রাশিয়ান মহিলাকে খুঁজে বার করার নির্দেশ দিয়েছিল আদালত। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক এবং বিদেশ মন্ত্রককে লুকআউট নোটিস জারি করতে বলেছিল সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি সূর্য কান্ত এবং বিচারপতি জয়মাল্য বাগচীর ডিভিশন বেঞ্চ। সেই সঙ্গে দিল্লি পুলিশকেও পদক্ষেপের নির্দেশ দেওয়া হয়। পরের দিনই কেন্দ্র আদালতে জানায়, নির্দেশ মতো দেশের সর্বত্র লুকআউট নোটিস জারি করা হয়েছে। শুধু তা-ই নয়, ওই মহিলা যাতে দেশ ছেড়ে পালাতে না-পারে সেই জন্য সব রকম পদক্ষেপ করা হয়েছে। তবে সোমবার কেন্দ্রের তরফে আদালতে জানানো হয়, তাদের লুকআউট নোটিস জারির আগেই সন্তানকে নিয়ে ভারত ছেড়েছেন ভিক্টোরিয়া!

সোমবার বিচারপতি সূর্য কান্ত এবং বিচারপতি জয়মাল্য বাগচীর ডিভিশন বেঞ্চে কেন্দ্রের অতিরিক্ত সলিসিটর জেনারেল ঐশ্বর্য ভাটি জানিয়েছেন, ওই রাশিয়ান মহিলার মোবাইলের আইপি অ্যাডড্রেস খতিয়ে দেখে জানা গিয়েছে, তিনি গত ৮ জুলাই তিনি বিহারে ছিলেন। তার পর সেখান থেকে পাড়ি দেন নেপাল। পরে নেপাল থেকে পৌঁছোন দুবাইয়ে। সেখান থেকে গত ১৬ জুলাই রাশিয়ায় গিয়েছেন ভিক্টোরিয়া। কেন্দ্রের অতিরিক্ত সলিসিটর জেনারেল আরও জানিয়েছেন, তারা এই তথ্য যাচাই করার জন্য বিভিন্ন এয়ারলাইন্সের সঙ্গে যোগাযোগ করছে। তাদের কাছে ওই মহিলার যাত্রা সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয়েছে। সেই তথ্য মিললে বিষয়টি পুরোপুরি নিশ্চিত হবে।

আদালতের প্রাথমিক পর্যবেক্ষণ, কেন্দ্রের এই তথ্য জানার পরে মনে হচ্ছে যে রুশ দূতাবাসের কিছু আধিকারিক এবং ভারতীয় কর্তৃপক্ষের কেউ কেউ ওই মহিলার দেশ ছেড়ে পালানোর নেপথ্যে রয়েছেন! কেন এমন মনে হচ্ছে, তা-ও আদালত তার পর্যবেক্ষণে জানিয়েছেন। বেঞ্চের মতে, ওই শিশুর পাসপোর্ট আদালতে জমা রয়েছে। তার পরেও তাকে নিয়ে কী ভাবে ওই মহিলা দেশ ছাড়লেন? বিষয়টি নিয়ে কেন্দ্রের অতিরিক্ত সলিসিটর জেনারেল আদালতে বলেন, ‘‘আমরা পুরো বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করছি। যদি পুরোপুরি নিশ্চিত হয়ে যাই উনি (ভিক্টোরিয়া) রাশিয়ায় পৌঁছে গিয়েছেন তবে আমরা কূটনৈতিক পদক্ষেপ গ্রহণ করব।’’

বিচারপতি সূর্য কান্ত মন্তব্য করেন, ‘‘এই ঘটনা আমরা কোনও ভাবেই মেনে নিতে পারি না।’’ তার পরেই কেন্দ্রের অতিরিক্ত সলিসিটর জেনারেলের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘‘আপনি যা বললেন তা হলফনামা আকারে আদালতে জমা দিন। তার পরে আমরা নির্দেশ দেব। এটা স্পষ্ট আদালত অবমাননাকর ঘটনা।’’ বেঞ্চের মন্তব্য, ওই মহিলার বিরুদ্ধে রেড কর্নার নোটিস জারি করতে হবে। ব্যবস্থা নিতে হবে কূটনৈতিক পদ্ধতিতে। আগামী সপ্তাহে এই মামলার পরবর্তী শুনানি।

উল্লেখ্য, পশ্চিমবঙ্গের হুগলি জেলার চন্দননগরের বোসপাড়ার বাসিন্দা সৈকত। বিদেশে কাজের সূত্রে তাঁর সঙ্গে আলাপ হয়েছিল ভিক্টোরিয়ার। তাঁরা বিয়ে করেন। ২০২০ সালে তাঁদের সন্তানের জন্ম হয়। কিন্তু সংসারে নানা অশান্তির কারণে একটা সময়ের পর স্বামী-স্ত্রী আলাদা থাকতে শুরু করেন। দীর্ঘ দিন ধরেই ছেলের হেফাজত নিয়ে বাবা এবং মায়ের আইনি লড়াই চলছিল। আদালতের নির্দেশে তিন দিন ছেলেকে নিজের কাছে রাখার অনুমতি পেয়েছিলেন রাশিয়ান মহিলা। সপ্তাহের বাকি দিনগুলিতে শিশুর তার বাবার কাছে থাকার কথা ছিল। অভিযোগ, ৭ জুলাই স্কুলের সময়ের পর থেকে শিশু বা তার মায়ের কোনও খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। সেই মামলার শুনানিতে সোমবার আদালতে ওই মহিলার দেশ ছেড়ে পালানোর কথা জানাল কেন্দ্র।

Supreme Court Russia Chandannagar
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy