Advertisement
E-Paper

সল্টলেকে তৃণমূলের হোলি সম্মিলনীতে আমন্ত্রিত সব নেতা, ব্রাত্য শুধু সব্যসাচী

বিধাননগরের মেয়র এবং উত্তর ২৪ পরগণা জেলার দাপুটে তৃণমূল নেতা সব্যসাচী দত্তকে এ নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘‘কেন ডাকেনি বলতে পারব না। যিনি ডাকেননি, তাঁকেই জিজ্ঞাসা করুন।’’

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৯ মার্চ ২০১৯ ১৯:০০
সব্যসাচী দত্ত এবং সুজিত বসু। ফাইল চিত্র।

সব্যসাচী দত্ত এবং সুজিত বসু। ফাইল চিত্র।

সব্যসাচী দত্তকে নিয়ে ধোঁয়াশা আরও বাড়ল। গত ৮ মার্চ বিধাননগরের মেয়র সব্যসাচী দত্তের বাড়িতে গিয়ে বিজেপি নেতা মুকুল রায়ের ‘লুচি-আলুর দম’ খাওয়া নিয়ে যে জল্পনার শুরু হয়েছিল, তা জারি থাকল হোলি পরবর্তী সপ্তাহেও।

এর মধ্যে অবশ্য দোলের দিন সল্টলেকেই মারোয়াড়ি সমাজের একটি অনুষ্ঠানে ‘ভারত মাতা কি জয়’ বলে সেই জল্পনায় আরও ইন্ধন জুগিয়েছিলেন সব্যসাচী নিজেই। জানিয়েছিলেন, মেয়র-বিধায়ক থাকুন বা না থাকুন, তিনি তাঁদের ঘরের ছেলে হয়ে থাকতে চান। এ বার সল্টলেকের সেই একই জায়গায় তৃণমূল নেতা তথা রাজ্যের মন্ত্রী সুজিত বসু আয়োজিত হোলির প্রীতি সম্মেলনে আমন্ত্রিতের তালিকায় তাঁকে রাখা হল না। সল্টলেকের বুকে খোদ মেয়রের নিজের ওয়ার্ডে আয়োজিত একটি হোলি সম্মেলনে তাঁকে না ডাকা কি খুব স্বাভাবিক ঘটনা? এই প্রশ্নের উত্তরে সব্যসাচী অবশ্য পাল্টা প্রশ্ন ছুড়লেন, ‘‘কেউ না ডাকলে কি ভিক্ষাপাত্র হাতে নিয়ে নিমন্ত্রণ চাইতে যাব?’’

জল্পনার শুরুটা হয়েছিল লোকসভা নির্বাচনের নির্ঘণ্ট ঘোষণার ঠিক দু’দিন আগে। সে দিন রাতে সল্টলেকে সব্যসাচী দত্তের বাড়িতে গিয়ে লুচি-আলুর দম খেয়ে এসেছিলেন মুকুল রায়। বিধাননগরের দাপুটে মেয়র এবং উত্তর ২৪ পরগণার জেলা তৃণমূলের অন্যতম মাথা কি তা হলে বিজেপিতে যাচ্ছেন? এই প্রশ্নটাই সে দিন জোরালো হয়ে উঠেছিল রাজনৈতিক মহলে। তখন সরাসরি কোনও ব্যাখ্যা না দিলেও কয়েক দিন পর ফের মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছিল এই বিতর্ক। দোলের দিন সল্টলেকেই মারোয়াড়ি সমাজের একটি অনুষ্ঠানে একের পর এক বিতর্কিত মন্তব্য করে বসেন তিনি। তিনি বলেছিলেন, ‘‘মেয়র থাকি বা না থাকি, বিধায়ক থাকি বা না থাকি, আমি আপনাদের ঘরের ছেলে থাকতে চাই।’’ একই অনুষ্ঠানে তাঁকে ‘ভারত মাতা কি জয়’ বলতেও শোনা গিয়েছিল। ‘ভারত মাতা কি জয়’ এই শব্দবন্ধ অরাজনৈতিক হলেও তা রাজনৈতিক পরিসরে স্লোগান হিসেবে ব্যবহার করে থাকে বিজেপি শিবিরই। তাই সব্যসাচীকে নিয়ে জল্পনা আরও ঘনীভূত হয়েছিল।

আরও পড়ুন: সোনা কাণ্ড নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে অভিযোগ জানাল সিবিআই

এর আগে নজরুল মঞ্চেও মারোয়াড়ি সমাজের একটি অনুষ্ঠান ছিল। সেই অনুষ্ঠানে মূল বক্তা ছিলেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ওই অনুষ্ঠানে বিধানগরের বিধায়ক সুজিত বসু হাজির থাকলেও সব্যসাচীকে দেখা যায়নি। তৃণমূল সূত্রে জানা গিয়েছে, মারোয়াড়ি সমাজের সঙ্গে দলের সমন্বয় রাখার দায়িত্বটা সব্যসাচীকেই দেওয়া হয়েছিল। সে দিন প্রশ্ন উঠেছিল, সব্যসাচী কেন হাজির থাকলেন না ওই অনুষ্ঠানে?

সেই ধারা জারি রেখেই জল্পনা আরও তীব্র হয়েছিল গত শনিবার। সে দিন রাতে সল্টলেকের সিই ব্লকের একটি বাড়িতে সব্যসাচীর সঙ্গে রাজ্য বিজেপি সভাপতি দিলীপ ঘোষের একটি বৈঠকের খবর পাওয়া যায় বিভিন্ন সূত্র থেকে। এ প্রসঙ্গে জানতে চাওয়া হলে দিলীপ বলেন, ‘‘একসঙ্গে খেয়েছি। ওঁর সঙ্গী ছেলেরা ছিল।’’ সব্যসাচীর বিজেপিতে যাওয়া নিয়ে কোনও কথা হয়েছে কি? দিলীপের উত্তর ছিল, ‘‘সে রকম কোনও কথা হয়নি।’’ এ নিয়ে বিশেষ কথা বাড়াতে চাননি বিধাননগরের মেয়রও।

আরও পড়ুন: সোশ্যাল মিডিয়ায় পাল্টা ধাক্কা তৃণমূলের, হু হু করে ভাইরাল র‌্যাপ ভিডিয়ো

এ বার খোদ সল্টলেকের বুকেই বিধাননগরের বিধায়ক এবং রাজ্যের মন্ত্রী সুজিত বসু আয়োজিত একটি অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিতের তালিকায় রাখা হল না সব্যসাচী দত্তকে। আগামী রবিবার সল্টলেকের বিএফ পার্কের এই হোলি প্রীতি সম্মেলনে উপস্থিত থাকছেন উত্তর ২৪ জেলার প্রায় সমস্ত হেভিওয়েট তৃণমূল নেতাই। থাকছেন স্থানীয় সাংসদ কাকলি ঘোষদস্তিদার, জেলারই মন্ত্রী এবং বিধায়ক পূর্ণেন্দু বসু এবং ব্রাত্য বসু, জেলা তৃণমূল সভাপতি জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক এবং কলকাতার মেয়র ববি হাকিম। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে মারোয়াড়িদের দোলের অনুষ্ঠানে হাজির ছিলেন সব্যসাচী। আর এই ওয়ার্ড তাঁর নিজের ওয়ার্ড। মেয়রের খাসতালুকে তাঁকে বাদ দিয়েই তৃণমূল নেতাদের এই সমাবেশ নিয়ে চরমে উঠল চলতে থাকা রাজনৈতিক জল্পনা।

এই আমন্ত্রণপত্রেই নাম নেই মেয়র সব্যসাচী দত্তের। নিজস্ব চিত্র।

বিধাননগরের মেয়র এবং উত্তর ২৪ পরগণা জেলার দাপুটে তৃণমূল নেতা সব্যসাচী দত্তকে এ নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘‘কেন ডাকেনি বলতে পারব না। যিনি ডাকেননি, তাঁকেই জিজ্ঞাসা করুন।’’ কিন্তু যে বিধাননগরের তিনি মেয়র, সেই বিধাননগরে ‘হোলি প্রীতি সম্মেলন’ আয়োজিত হচ্ছে স্থানীয় তৃণমূল বিধায়কের উদ্যোগে, রাজ্যের পুরমন্ত্রী, স্থানীয় সাংসদ, জেলা তৃণমূলের সভাপতি এবং পার্শ্ববর্তী দু’টি এলাকার বিধায়করা সেখানে ডাক পাচ্ছেন, কিন্তু বিধাননগরের মেয়র ব্রাত্য? এটা কি খুব স্বাভাবিক? সব্যসাচীর পাল্টা প্রশ্ন, ‘‘যাঁর অনুষ্ঠান, তিনি যদি না ডাকেন, তা হলে কি ভিক্ষাপাত্র হাতে নিয়ে নিমন্ত্রণ চাইতে যাব?’’

এর আগে সব্যসাচী দত্তকে নিয়ে মোটের উপর নরম-গরম নীতি নিয়ে চলছিল তৃণমূল। মুকুল রায়ের সঙ্গে ‘লুচি-আলুর দম’ পর্বের কয়েক দিনের মধ্যেই উত্তর ২৪ পরগনা জেলা তৃণমূলের সভাপতি জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক স্পষ্ট জানিয়েছিলেন, বিধাননগরের জন্য নতুন মেয়র বাছা হবে। কিন্তু তার পর সুজিত বসুর ক্লাব শ্রীভূমি স্পোর্টিংয়ে একটি বৈঠকের পর জ্যোতিপ্রিয়, সব্যসাচী ও সুজিতকে পাশে নিয়ে সাংবাদিক সম্মেলন করে ফিরহাদ হাকিম বুঝিয়ে দিয়েছিলেন, মেয়র পদ থেকে আপাতত সরানো হচ্ছে না সব্যসাচী দত্তকে। একই সঙ্গে তাঁর দাবি ছিল, তৃণমূলের অন্দরে সন্দেহের পরিবেশ তৈরি করতেই মুকুল রায় শুক্রবার রাতে সল্টলেকে সব্যসাচী দত্তের বাড়িতে গিয়েছিলেন। ফিরহাদ বলেন যে, ‘‘মুকুল রায়ের অভিসন্ধি বুঝতে পারেননি সব্যসাচী দত্ত।’’

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

যদিও সেই সন্ধিবৈঠকের পরও বেশ কয়েক কদম এগিয়েছিলেন সব্যসাচী। সরাসরি কিছু না বললেও কিছু একটা রাজনৈতিক বার্তা তিনি দিতে চাইছেন, তা ছিল অত্যন্ত স্পষ্ট। তাহলে কি সব্যসাচীর খাসতালুকে এই পাল্টা ‘হোলি প্রীতি সম্মেলন’ তাঁকে চরম বার্তা দিতেই। নির্বাচনের আগে এই প্রশ্নটাই এখন বড় হয়ে উঠল রাজনৈতিক মহলে। এ বিষয়ে সুজিত বসুকে ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা হলে তিনি ফোন ধরেননি। জবাব দেননি এসএমএসেরও।

Sabyasachi Dutta Sujit Basu TMC Holi BJP
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy