Advertisement
E-Paper

এফআইআর নিয়ে উল্টো দাবি শিবানীর

অতীতে পরিবারটির দাবি ছিল, পুলিশ জোর করে তাঁদের দিয়ে সাদা কাগজে সই করিয়ে নিয়ে নিজের মতো অভিযোগপত্র লিখেছে। ওই এফআইআর তাঁদের দায়ের করা নয়। অভিযোগ জানাতে গেলে ফিরিয়ে দিয়েছে থানাও। এমন অবস্থান থেকে ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে গেলেন অভিযোগকারী নিজেই। সাগর ঘোষ হত্যা মামলায় আদালতে সাক্ষ্য দিতে এসে নিহতের পুত্রবধূ শিবানী ঘোষ দাবি করলেন, ‘‘শ্বাশুড়ি সরস্বতীদেবী পুলিশের কাছে যে লিখিত অভিযোগ করেছিলেন, তা আমিই লিখেছিলাম। লেখকের সইও আমার।’’

নিজস্ব সংবদদাতা

শেষ আপডেট: ২৬ মে ২০১৬ ০১:৩৯

অতীতে পরিবারটির দাবি ছিল, পুলিশ জোর করে তাঁদের দিয়ে সাদা কাগজে সই করিয়ে নিয়ে নিজের মতো অভিযোগপত্র লিখেছে। ওই এফআইআর তাঁদের দায়ের করা নয়। অভিযোগ জানাতে গেলে ফিরিয়ে দিয়েছে থানাও। এমন অবস্থান থেকে ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে গেলেন অভিযোগকারী নিজেই। সাগর ঘোষ হত্যা মামলায় আদালতে সাক্ষ্য দিতে এসে নিহতের পুত্রবধূ শিবানী ঘোষ দাবি করলেন, ‘‘শ্বাশুড়ি সরস্বতীদেবী পুলিশের কাছে যে লিখিত অভিযোগ করেছিলেন, তা আমিই লিখেছিলাম। লেখকের সইও আমার।’’

বুধবার সকালে সিউড়ি জেলা আদালতে জেলা জজ ইন্দ্রনীল ভট্টাচার্যের এজলাসে এ ভাবেই নিজেদের আগের দাবিকে খণ্ডন করল নিহতের পরিবার। এ দিন সাক্ষ্য দিতে এসে পাশাপাশি শিবানীদেবী আদালতকে খুনের পুঙ্খানুপুঙ্খ বর্ণনাও দিলেন। চিহ্নিত করলেন অভিযুক্ত আট জনকেও। সরকারি আইনজীবী রণজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, ‘‘নিহতের পুত্রবধূ শিবানীদেবী এ দিন আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছেন। তাঁর স্বামী হৃদয় ঘোষ এবং নন্দাই অনুপকুমার পালেরও সাক্ষ্য দেওয়ার কথা ছিল। সময়ের অভাবে এ দিন তা নেওয়া যায়নি। আজ, বৃহস্পতিবার ফের সাক্ষ্যগ্রহণ হবে।’’

২০১৩ সালে পঞ্চায়েত ভোটের মুখে খুন হন পাড়ুইয়ের বাঁধনবগ্রামের নির্দল প্রার্থী হৃদয় ঘোষের বৃদ্ধ বাবা সাগর ঘোষ। ওই ঘটনায় পাড়ুই থানায় দায়ের হওয়া এফআইআর-কে ভুয়ো বলে দাবি করে জেলা তৃণমূল সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল-সহ ৪১ জনের বিরুদ্ধে ডাকযোগে জেলার পুলিশ সুপারের কাছে খুনের অভিযোগ জানিয়েছিলেন শিবানীদেবী। ঘটনার সিবিআই তদন্ত চেয়ে সাগরবাবুর পরিবার সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত ছুটেছিলেন। পরে অবশ্য সেই মামলা তাঁরা তুলে নেন। গত ২০১৪ সালের ১৬ জুলাই অনুব্রতর নাম বাদ রেখেই ওই হত্যা মামলায় তৃণমূলের অঞ্চল কমিটির সম্পাদক শেখ মুস্তফা, তৃণমূলের কসবা অঞ্চল সভাপতি শেখ ইউনুস, জলধর দাস, জগন্নাথ দাস, প্রিয় মুখোপাধ্যায়, ভগীরথ ঘোষ, সুব্রত রায় এবং শেখ আসগরের (মুস্তফার ছেলে) বিরুদ্ধে চার্জশিট জমা দিয়েছিল হাইকোর্টের নির্দেশে গঠিত বিশেষ তদন্তকারী দল (সিট)। মঙ্গলবার ওই মামলার বিচার পর্বেই নিহতের স্ত্রী সরস্বতীদেবী সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ দিন শিবানীদেবী-সহ পরিবারের তিন সদস্যের সাক্ষ্য দেওয়ার দিন ধার্য হয়েছিল।

সরস্বতীদেবীর মতোই শিবানীদেবী আদালতকে জানান, সে দিন রাতে তিনি, তাঁর শাশুড়ি ও শ্বশুর ছিলেন। রাত সাড়ে ১০টা থেকে পৌনে ১১টা নাগাদ দুষ্কৃতীরা দরজায় কড়া নাড়ে। ‘কে?’—বলে প্রশ্ন করলে বাইরে থেকে উত্তর এসেছিল, ‘পুলিশের লোক’। তাদের সাড়া দিয়ে শোয়ার ঘর থেকে বেরিয়ে গ্রিলঘেরা বারান্দায় এসে দাঁড়িয়েছিলেন সাগরবাবু। শিবানীদেবীর দাবি, তার আগেই সীমানা প্রাচীর টপকে কয়েক জন বাড়ির উঠোনে পৌঁছে গিয়েছিল। তাদের অন্যতম সুব্রত রায়ই শিবানীদেবীর শ্বশুরকে লক্ষ করে প্রথম গুলিটা চালায়। পরের গুলি চালায় ভগীরথ ঘোষ। তার পরে একটি গুলি চালায় ইউনুস। তৃতীয় গুলিটি লক্ষভ্রষ্ট হয়। শিবানীদেবী আদালতকে বলেন, ‘‘একটি গুলি লাগে বাবা-র তলপেটে, অন্যটা হাতে। যন্ত্রণায় মধ্যেই বাবা বিস্মিত হয়ে বললেন, ‘ভগী (ভগীরথ), সুবু (সুব্রত) তোরা আমায় গুলি করলি’! যন্ত্রণায় প্রথমে টেবিল আঁকড়ে দাঁড়িয়ে পড়েন বাবা। তার পরেই কোনও রকমে রান্নাঘরে ঢুকে যান।’’

সে দিন ঘটনার আকস্মিকতায় ভয় পেয়ে শিবানীদেবীরা পিছিয়ে যান। পরে রান্নাঘরের জানালা দিয়েও ভগীরথ ফের গুলি চালায় বলে তাঁর অভিযোগ। শিবানীদেবীর কথায়, ‘‘শুধু ঘরের মধ্যেই নয়, দুষ্কৃতীরা গোটা বাড়ি ঘিরে রেখেছিল। সকলকেই আমি দেখেছি।’’ সরকারি আইনজীবী জানতে চান, কী করে তিনি অভিযুক্তদের চিনলেন। শিবানীদেবীর জবাব, ‘‘যারা উঠোনে ছিল, তাদের চিনেছিলাম। আহত শ্বশুরের মুখ থেকে ওদের নামও শুনেছি। আমি জ্যোৎস্না রাতে ছাদে উঠে দেখেছি, যারা বাড়ি ঘিরে রেখেছিল ওদের (অভিযুক্ত আট) মধ্যে সকলেই ছিলেন।’’ এর পরেই শিবানীদেবী আদালতকে জানান, পুলিশ ঘণ্টাদেড়েক পরে এসে আহত শ্বশুরকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছিল। ঘটনাস্থল থেকে একটি কার্তুজের খোল উদ্ধার করে। উদ্ধার হওয়া সেই খোল এ দিন শিবানীদেবীকে দেখানোও হয়। সেটি তিনি চিহ্নিতও করেন। এর পরেই সরকারি আইনজীবীর প্রশ্নের উত্তরে শিবানীদেবী আদালতের কাছে দাবি করেন, পাড়ুই থানায় দায়ের হওয়া এফআইআর তাঁদেরই দায়ের করা।

এ দিকে, শিবানীদেবীর গোটা সাক্ষ্যকে মিথ্যা বলে দাবি করেছেন এ দিন আদালতে উপস্থিত অভিযুক্ত এবং তাঁদের আত্মীয়েরা। সুব্রত রায়, ভগীরথ ঘোষ এবং শেখ মুস্তফারও দাবি, ‘‘সাগরবাবু পারিবারিক অশান্তির জেরে খুন হয়েছেন। ঘটনায় জড়িত না থাকলেও আমাদের উপরে তার দায় চাপানো হয়েছে।’’

murder sagarghosh
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy