দু’টি সমস্যার একটাই সমাধান। ‘টিচার-অন-কল’ প্রকল্পে সহজপাঠ। এবং পুরোটাই বিনামূল্যে। চাই শুধু খাতা-কলম আর একটি ফোন।
রাজ্যের শিক্ষা কমিশনের প্রাক্তন চেয়ারম্যান এবং কর্পোরেট জগতের কয়েক জন মিলে তৈরি করেছেন ‘সহজপাঠ’ নামে একটি অলাভজনক বেসরকারি সংস্থা। তাদের হাত ধরেই মোবাইল ফোনের মাধ্যমে শিক্ষক-শিক্ষিকারা মুশকিল আসান হয়ে পৌঁছে যাচ্ছেন পড়ুয়াদের কাছে। দেশের মধ্যে প্রথম এই অভিনব প্রক্রিয়ায় খুশি বাংলার শিক্ষা শিবির।
কী ভাবে চলছে এই প্রক্রিয়া?
মোবাইল থেকে ১৮০০-৩০০০-৮০০৩ টোল-ফ্রি নম্বরে ফোন করলেই শোনা যাচ্ছে এক মহিলার কণ্ঠ: ‘‘ভৌতবিজ্ঞানের জন্য এক নম্বর বোতামটি টিপুন। অঙ্কের জন্য তিন আর ইংরেজির জন্য চার।...’’
একটি বোতাম টেপার কিছু পরেই মোবাইলের ও-পার থেকে অন্য কেউ শিক্ষকসুলভ সুরে জানতে চাইলেন, ‘‘কী বুঝতে অসুবিধা হচ্ছে তোমার?’’
পড়ুয়ার আর্জি, ‘‘ভয়েস চেঞ্জের অ্যাকটিভ আর প্যাসিভ ভয়েস ব্যাপারটা ঠিক বুঝতে পারছি না। একটু বুঝিয়ে দেবেন প্লিজ।’’
পুরো বিষয়টি বুঝিয়ে দিলেন ওই শিক্ষক। বাড়িতে বসেই মোবাইলের মাধ্যমে শিক্ষকদের সাহায্য পাচ্ছে ছাত্রছাত্রীরা। একদম বিনামূল্যে।
রাজ্যের শিক্ষা কমিশনের প্রাক্তন চেয়ারম্যান সমীর ব্রহ্মচারী, কর্পোরেট জগতের অলোক মুখোপাধ্যায়, অমিত মুখোপাধ্যায়, কল্যাণ করকে সঙ্গে নিয়ে শুরু হয়েছে এই প্রকল্প। সমীরবাবু জানান, পঞ্চম থেকে নবম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ুয়ারা যে-কোনও দিন সকাল ৯টা থেকে রাত ৯টার মধ্যে ওই টোল-ফ্রি নম্বরে ফোন করতে পারে। প্রাথমিক ভাবে সাহায্যের বিষয় হিসেবে অঙ্ক, ইংরেজি, ভৌতবিজ্ঞান আর জীবনবিজ্ঞানকে বেছে নেওয়া হয়েছে। সেই অনুযায়ী প্রতিটি বিষয়ে নিয়োগ করা হয়েছে পাঁচ জন শিক্ষক-শিক্ষিকাকে। তাঁরাই পড়ুয়াদের সব প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছেন। ইতিমধ্যে প্রায় এক হাজার প়ড়ুয়ার নাম রেজিস্ট্রেশন বা নথিভুক্ত হয়ে গিয়েছে বলে জানান সমীরবাবু।
এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছে শিক্ষাজগৎ। শিক্ষাবিদ পবিত্র সরকার বলেন, ‘‘এটা খুবই প্রশংসনীয়। প্রযুক্তির সাহায্যে বিনামূল্যে পড়ুয়ারা উপকৃত হবে। এটাই সব থেকে ভাল।’’ সমীরবাবু জানাচ্ছেন, ২০১৬ সালে কমিশনের তরফ থেকে রাজ্য সরকারকে এই ধরনের কিছু একটা করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। তার পরেই বেসরকারি উদ্যোগে কাজ শুরু হয়। সূচনা হয় ছ’মাস আগে। আর চলতি বছরের শিক্ষক দিবসে চালু করা হয়েছে টোল-ফ্রি নম্বর।
শিক্ষা মহলের পর্যবেক্ষণ, স্কুল থেকে বাড়ি ফেরার পরে বহু বিষয়েই অনেক পড়ুয়ার মধ্যে বাড়তি উৎসাহ দেখা যায়। অনেক সময়েই অঙ্ক করার সময়ে কোথাও আটকে গেলে সঙ্গে সঙ্গে শিক্ষকের সাহায্য পাওয়া দুরূহ হয়ে ওঠে। টোল-ফ্রি নম্বরের ব্যবস্থা চালু হওয়ায় এই সব সমস্যা মিটিয়ে নিতেও পড়ুয়াদের সুবিধা হবে বলেই মনে করছেন সমীরবাবুরা।
সহজপাঠের ইংরেজির শিক্ষিকা মৌসুমী মুখোপাধ্যায় জানান, তাঁর কাছে বীরভূম, কলকাতা, হলদিয়া-সহ বিভিন্ন জায়গার পড়ুয়ারা ফোন করেছে। মূলত গ্রামের দিকের পড়ুয়াদের কাছে এর উপকারিতা সব থেকে বেশি। কারণ, গ্রামের অধিকাংশ স্কুলেই শিক্ষকের আকাল। সম্প্রতি প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ হলেও মামলার জটে উচ্চ প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ আটকে আছে।
‘‘গ্রামের স্কুলে শিক্ষক-শিক্ষিকার বড়ই অভাব। এই প্রকল্পে বিশেষ করে ওই সব অঞ্চলের পড়ুয়ারা লাভবান হবে বলেই মনে করি,’’ সহজপাঠের তরফে বললেন অলোকবাবু।