Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

বিধায়ক খুনে অভিযুক্ত চার জনই তৃণমূল ছেড়ে বিজেপি ঘনিষ্ঠ হয়েছিলেন

মুকুল ছাড়াও আরও চার জনের নামে অভিযোগ দায়ের হয়েছে। তার মধ্যে কার্তিক মণ্ডল ওরফে মিঠুন এবং সুজিত মণ্ডল নামে দু’জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে রবিবার। কিন্তু খুব কাছ থেকে যে বিধায়কের মাথায় গুলি করেছিল বলে অভিযোগ, বগুলা কলেজের সেই প্রাক্তন টিএমসিপি নেতা অভিজিৎ পুণ্ডারীকে রবিবার রাত পর্যন্ত ধরা যায়নি।

 রবিবার কলকাতায় সাংবাদিক বৈঠকে মুকুল রায়। পিটিআই

রবিবার কলকাতায় সাংবাদিক বৈঠকে মুকুল রায়। পিটিআই

সুস্মিত হালদার
কৃষ্ণগঞ্জ শেষ আপডেট: ১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০৩:০৫
Share: Save:

তৃণমূল বিধায়ক সত্যজিৎ বিশ্বাস খুনের ঘটনায় মুকুল রায়ের নামে ষড়যন্ত্রের অভিযোগ আনা হল। বেআইনি অর্থ লগ্নি সংস্থার মামলায় নাম জড়ানোর পরে তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে চলে যাওয়া মুকুল অবশ্য এই অভিযোগকে ‘ষড়যন্ত্র’ বলে অভিহিত করছেন। তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে সিআইডি-কে।

মুকুল ছাড়াও আরও চার জনের নামে অভিযোগ দায়ের হয়েছে। তার মধ্যে কার্তিক মণ্ডল ওরফে মিঠুন এবং সুজিত মণ্ডল নামে দু’জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে রবিবার। কিন্তু খুব কাছ থেকে যে বিধায়কের মাথায় গুলি করেছিল বলে অভিযোগ, বগুলা কলেজের সেই প্রাক্তন টিএমসিপি নেতা অভিজিৎ পুণ্ডারীকে রবিবার রাত পর্যন্ত ধরা যায়নি। ধরা পড়েনি কার্তিকের জেঠার ছেলে কালিদাস মণ্ডলও। এই চার জনই ইদানীং তৃণমূল ছেড়ে বিজেপি করছিল বলে স্থানীয় সূত্রের খবর। এ দিন বিকেলে ঘটনাস্থলে এসে ফরেন্সিক দল বিভিন্ন নমুনা সংগ্রহ করে।

শনিবার রাতে হাঁসখালির ফুলবাড়ি গ্রামে নিজের পাড়ায় সরস্বতী পুজোর অনুষ্ঠান চলাকালীন খুন হন সত্যজিৎ। গভীর রাতে পুলিশে অভিযোগ দায়ের করেন তাঁর ছায়াসঙ্গী বলে পরিচিত, ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী মিলন সাহা। এ দিন এসপি রূপেশ কুমার জানান, ‘আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় ব্যর্থতার দায়ে’ হাঁসখালি থানার ওসি অনিন্দ্য বসুকে সাসপেন্ড করা হয়েছে। প্রভাস মণ্ডল নামে যে কনস্টেবল বিধায়কের ব্যক্তিগত নিরাপত্তারক্ষী হিসেবে কাজ করতেন, তিনিও সাসপেন্ড হয়েছেন। পুলিশ সূত্রের খবর, দফতরে কিছু না জানিয়ে বিধায়ককে বলে শনিবার ছুটি নিয়েছিলেন তিনি।

আরও পডু়ন: অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসই কি কাল হল সত্যজিতের? প্রশ্ন উঠছে পুলিশের নিষ্ক্রিয়তা নিয়েও

২০১৫ সালে উপ-নির্বাচনে কৃষ্ণগঞ্জ কেন্দ্র থেকে প্রথম বার জিতে আসা সত্যজিৎ নিজের এলাকায় যথেষ্ট প্রভাবশালী ছিলেন। গত পঞ্চায়েত ভোটে প্রায় সব আসনেই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হয় তৃণমূল। বিজেপির দাবি, সত্যজিতের ‘দাপটে’ দলে অনেকেই কোণঠাসা হয়ে পড়ছিলেন। অভিযুক্ত অভিজিতের সঙ্গেও আগে বেশ কয়েক বার তাঁর বচসা হয়েছে। মাটি ও জমি মাফিয়াদের সঙ্গে সত্যজিতের যোগাযোগের অভিযোগও ছিল ইদানীং।

তৃণমূলের নদিয়া জেলা সভাপতি গৌরীশঙ্কর দত্ত অবশ্য এ দিন দাবি করেন, ‘‘মাটি মাফিয়াদের গল্প করে লাভ নেই। সত্যজিতের উত্থানে আমাদের দলের কেউ শঙ্কিত ছিলেন কি না জানি না, তবে মুকুল রায় ছিলেন, এটুকু জানি। আমাদের কাছে প্রমাণ আছে, মুকুল রায়ের প্রত্যক্ষ মদতেই এই খুন।’’

সন্ধ্যায় কলকাতায় বিজেপির সদর দফতরে সাংবাদিক বৈঠক করে মুকুল দাবি করেন, ‘‘রাজ্যের শাসক দলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে কোনও খুন হলে বা দুষ্কৃতীরা কোনও অপরাধ করলে, সঙ্গে সঙ্গে সেই ঘটনায় বিজেপি নেতাদের নাম জড়ানোর রেওয়াজ হয়েছে ইদানীং।’’ গৌরীশঙ্করকে আইনজীবীর নোটিস পাঠানো হয়েছে বলেও তিনি জানান। গৌরীশঙ্কর উত্তরে বলেন, ‘‘আইনি নোটিস পাঠালে আইনের পথেই তার উত্তর পাবেন।’’

তবে প্রত্যক্ষদর্শী এবং স্থানীয় মানুষের মনে বেশ কিছু প্রশ্ন উঁকি দিচ্ছে। প্রথমত, সত্যজিতের মতো নেতাকে মারতে তাঁর নিজের পাড়ায় ওয়ানশটার (যাতে একটাই গুলি থাকে) নিয়ে এক জন চড়াও হল কী করে? দ্বিতীয়ত, গুলি চালিয়ে আততায়ী সবার চোখের সামনে পালাল কী করে? তৃতীয়ত, সন্ধ্যায় ওই এলাকায় বারবার বিদ্যুৎ চলে যাচ্ছিল কেন? খুনের সময়ে যদিও বিদ্যুৎ ছিল। স্থানীয় চিত্রশালী বিদ্যুৎ সরবরাহ কেন্দ্রের ‌স্টেশন ম্যানেজার বাসুদেব দে দাবি করেন, যান্ত্রিক গোলযোগেই বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যাহত হয়েছিল।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE