বাড়ছে সস্তার টিকিটের যাত্রী। কিন্তু উচ্চ শ্রেণির যাত্রী-সংখ্যা হাতে-গোনা। বিদেশি বিমানের ক্ষেত্রেও একই হিসেব। আর তাতেই পরিষ্কার হয়ে যাচ্ছে, বিমান সংস্থার বাণিজ্যে বেশ পিছিয়ে রয়েছে পশ্চিমবঙ্গ।
কলকাতা থেকে হংকং যাওয়া বিমান সংস্থা ড্রাগন এয়ারের হিসেব অনুযায়ী, ভারতের ছ’টি শহর থেকে তাঁরা যে ব্যবসা করছেন, তার মধ্যে ৮ শতাংশ ব্যবসা আসছে কলকাতা থেকে। যার অর্থ, প্রতিটি শহরের গড় ব্যবসা যদি হয় ১৬ শতাংশ, কলকাতা দিচ্ছে তার অর্ধেক। অন্য দশটা বিমান সংস্থার মতো তাঁদের মানচিত্রেও কলকাতা রয়ে গিয়েছে মূলত সাধারণ শ্রেণির যাত্রীদের জন্যই।
এই কারণেই ইন্ডিগোর মতো সস্তার বিমান কলকাতায় ভাল ব্যবসা করছে। ট্রাভেল এজেন্ট ফেডারেশনের পূর্বাঞ্চলের চেয়ারম্যান অনিল পাঞ্জাবি জানাচ্ছেন, কলকাতা থেকে যাত্রী বাড়ছে ঠিকই। কিন্তু শুধু ইকনমি ক্লাসে। তাই ইন্ডিগো ভাল ব্যবসা করলেও মার খাচ্ছে এয়ার ইন্ডিয়া, জেট। বিদেশি বিমান সংস্থাগুলিও বেশির ভাগ যাত্রী পাচ্ছে সাধারণ শ্রেণিতে। যাঁদের মধ্যে একটা বড় অংশই আবার ‘ক্যারিয়ার’ অর্থাৎ যাঁরা কলকাতা থেকে ঢাকা, ব্যাঙ্কক, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া রুটে নিয়মিত যাতায়াত করেন। খুচরো জিনিস এখান থেকে নিয়ে যান, আবার বিদেশ থেকেও নিয়ে আসেন।
ড্রাগন এয়ারের দক্ষিণ এশিয়ার জিএম চার্লি স্টুয়ার্ট জানান, কলকাতা থেকে এ বার সপ্তাহে পাঁচটির জায়গায় ছ’টি উড়ান চালাবেন। কিন্তু, যে এয়ারবাস ৩২০ বিমান কলকাতার জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে, সেখানে বিজনেস ক্লাস বা উচ্চ শ্রেণির জন্য রয়েছে মাত্র ৮টি আসন। সাধারণ শ্রেণিতে ১৫০টি আসন। অথচ এই ড্রাগন এয়ারই বেঙ্গালুরু থেকে সপ্তাহে সাত দিন এয়ারবাস ৩৩০ বিমান চালায়। সেখানে ১৭৫টি সাধারণ শ্রেণির, ২৮টি প্রিমিয়াম শ্রেণির ও ৩৯টি বিজনেস শ্রেণির আসন রয়েছে।
চার্লি-র হিসেব, ক্যাথে প্যাসিফিক দিল্লি থেকে দিনে দু’টি, মুম্বই থেকে সপ্তাহে দশটি, চেন্নাই থেকে সপ্তাহে সাতটি হংকং-এর উড়ান চালায়। একমাত্র হায়দরাবাদে উড়ান-সংখ্যা কলকাতার থেকে কম, সপ্তাহে চার দিন। সেখানেও ব্যবহার করা হয় এয়ারবাস ৩৩০ বিমান। শুধু ড্রাগন এয়ার নয়, তুলনা করলে দেখা যাবে দেশের অন্য শহরের তুলনায় কলকাতায় অন্য সব সংস্থাও হয় ছোট বিমান চালায় অথবা উড়ান-সংখ্যা কম। ব্যতিক্রম এমিরেটস ও কাতার এয়ারওয়েজ। অনিল জানান, ব্রিটিশ এয়ারওয়েজ এবং লুফৎহানসা উড়ান তুলে নেওয়ার পরে কলকাতা থেকে ইউরোপ ও আমেরিকা যাওয়ার সরাসরি উড়ান নেই। এ শহর থেকে ওই দুই মহাদেশ যাওয়ার জন্য বেশির ভাগ মানুষই এখন প্রধানত এই দু’টি সংস্থার বিমানকেই বেছে নেন। অনিল বলেন, ‘‘গত চার-পাঁচ বছর ধরে কলকাতা থেকে উচ্চ শ্রেণির যাত্রী বাড়েনি। বড় শিল্প বা বাণিজ্যের সুযোগ থাকলে নিয়মিত উচ্চ শ্রেণির যাত্রীরা যাতায়াত করেন। তখন বাধ্য হয়ে বড় বিমান চালায় বিমান সংস্থা।’’ তা ছাড়া, এমন বহু যাত্রী রয়েছেন, যাঁরা নিয়মিত উচ্চ শ্রেণিতে যাতায়াত করেন, কিন্তু, কলকাতার বদলে দিল্লি বা মুম্বই থেকে উড়ান ধরেন। সেখান থেকে বিদেশ যাওয়ার অনেক বেশি বিকল্প রয়েছে।
শিল্পমহলও জানাচ্ছে, উৎপাদন-সহ বড় শিল্পের রমরমা নেই এ রাজ্যে। ব্যবসার যেটুকু চাকচিক্য, তা মূলত ‘ট্রেডিং’ বা খুচরো ব্যবসার। সেই ব্যবসাও এ রাজ্যে তলানিতে। যার প্রভাব পড়ছে বিমান ব্যবসায়। বেঙ্গল চেম্বার অব কমার্সের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট কল্লোল দত্ত চিনের উদাহরণ টেনে বলেন, ‘‘সে দেশে যাওয়ার প্রধান কারণ ট্রেডিং। ওই দেশ থেকে জিনিস এনে এখানে বিক্রি করা। কিন্তু স্থানীয় বাজারে তার চাহিদাও কম। কারণ, মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কম। দিল্লি, বেঙ্গালুরু বা হায়দরাবাদের মতো শহরে চাহিদা বেশি। সেখানে শিল্প-বাণিজ্যের বৃদ্ধির কারণে মানুষের সামর্থ্য বেশি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy