Advertisement
E-Paper

school: মহালয়ার দিনেই শুরু ‘বর্ণপরিচয়’

কার্যত বিদ্যুৎহীন এলাকাকে গ্রাস করছে অশিক্ষার আঁধার। বাল্যবিবাহ, বাল্যমাতৃত্ব, মদ্যপান— পাড়ার ৩০টি পরিবারের কাছে খুবই স্বাভাবিক বিষয়।

দেবমাল্য বাগচী

শেষ আপডেট: ০৭ অক্টোবর ২০২১ ০৬:২০
শুরু হল পাঠদান। বুধবার।

শুরু হল পাঠদান। বুধবার। নিজস্ব চিত্র।

স্থানীয় প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে পাড়াটির দূরত্ব মেরেকেটে আটশো মিটার। অথচ এমন এলাকার একমাত্র শিক্ষিত ব্যক্তিটি পঞ্চম শ্রেণির পরীক্ষায় অকৃতকার্য। কার্যত বিদ্যুৎহীন এলাকাকে গ্রাস করছে অশিক্ষার আঁধার। বাল্যবিবাহ, বাল্যমাতৃত্ব, মদ্যপান— পাড়ার ৩০টি পরিবারের কাছে খুবই স্বাভাবিক বিষয়। দেবীপক্ষের সূচনায় মহালয়ার দিনে এলাকায় ‘বর্ণপরিচয়’ পাঠশালা চালু করলেন দুই স্কুল শিক্ষক। আর সেই পাঠশালায় পড়ুয়াদের শিক্ষাদানের দায়িত্বে থাকছেন এক নারী। এলাকার যুবতী প্রিয়ঙ্কা ভুঁইয়া।

বুধবার সবংয়ের দণ্ডরা গ্রাম পঞ্চায়েতের খোল্যাগেড়িয়া গ্রামের স্কুল-বিমুখ বাগালপাড়া এমনই ঘটনার সাক্ষী থাকল। মহালয়ার সকাল থেকেই যাত্রা শুরু করে ‘বর্ণপরিচয়’। মোট ২৮ জন পড়ুয়া নিয়ে শুরু হওয়া এই পাঠশালার উদ্যোক্তা দুই স্কুল শিক্ষক। একজন সবংয়ের চাঁদকুড়ির বাসিন্দা মশাগ্রাম হাইস্কুলের টিচার-ইনচার্জ শান্তনু অধিকারী। অন্যজন পূর্ব মেদিনীপুরের হাউরের বাসিন্দা স্কুল শিক্ষক ভাস্করব্রত পতি। শান্তনু বিগত কয়েক বছর ধরেই এখানকার বাসিন্দাদের সামাজিক অবস্থা নিয়ে গবেষণা করছেন। সেই সূত্রেই বন্ধু ভাস্করব্রতের সঙ্গে যৌথ ভাবে পাঠশালা শুরু সিদ্ধান্ত নেন তিনি। এ দিন পাঠশালার উদ্বোধন করেন পাড়ারই অশীতিপর দেবেন বাগাল। তাঁর কথায়, “আমাদের কারও শিক্ষা নেই। এই পাঠশালার খুব প্রয়োজন ছিল। আমি সকলকে এখানে পাঠাব।’’

স্থানীয় পরিবারগুলির দাবি, তাঁদের পদবি ‘দেহরি’। কিন্তু ভোটার তালিকায় ওঁদের সকলের পদবি ‘বাগাল’। সেই থেকেই ‘বাগালপাড়া’। স্থানীয় অনেকের কাছেই নেই রেশন কার্ড। এমনকি ভোটার কার্ডও জমা থাকে অন্যের কাছে। বছর দু’য়েক আগে সংবাদমাধ্যমে বাগালপাড়ার পরিস্থিতি নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছিল। তার পরে সেখানে গিয়েছিলেন স্থানীয় নেতা-বিধায়করা। গিয়েছিলেন মন্ত্রী মানস ভুঁইয়াও। প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন রেশন কার্ড, রাস্তার। সেই প্রতিশ্রুতি পূরণে মূল সড়ক থেকে ঢালাই রাস্তা হলেও বাগালপাড়ায় সংযুক্ত হয়নি। পৌঁছয়নি শিক্ষার আলোও। শান্তনু-ভাস্করব্রতের দাবি, মদের নেশায় বুঁদ হয়ে থাকে বাগালপাড়ার শৈশব। নাবালিকা বিয়ে, গর্ভধারণ এখানকার নিত্য ঘটনা। শান্তনুর কথায়, “বাগালরা আসলে খেড়িয়া শবর। এঁদের প্রকৃত পদবি দেহরি। স্বভাবগত কারণেই ওঁরা মুখচোরা। সভ্যতা-বিচ্ছিন্ন হয়ে থাকতে এঁরা ভালবাসেন। ভোটার তালিকায় নাম তোলার সময়েই ঘটেছে পদবি বিভ্রাট। তাই মেলেনি তফসিলি জনজাতির স্বীকৃতি।’’

এ দিন পাঠশালার পড়ুয়াদের দেওয়া হয় নতুন পোশাক। দেওয়া হয় যাবতীয় শিক্ষা, আঁকা ও খেলাধুলার সরঞ্জামও। ‘বর্ণপরিচয়ে’ শিক্ষিকার দায়িত্বে থাকছেন খোল্যাগেড়িয়ার প্রিয়াঙ্কা ভুঁইয়া। তিনি বলছিলেন, ‘‘এমন উদ্যোগের সঙ্গে যুক্ত থাকতে পেরে ভাল লাগছে।’’ ভাস্করব্রতের কথায়, “আপাতত সপ্তাহে চারদিন চলবে এই পাঠশালা। শিক্ষাই পারে এখানকার বাসিন্দাদের প্রকৃত উন্নয়নের সরণীতে নিয়ে যেতে।’’

Durga Puja 2021 Sabar
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy