Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

‘বিধান ভয় পেয়ো না’, সাহায্য চাইছে খুদেরা

বছর এগারোর বিধান হাঁটতে পারছে না। তড়িঘড়ি তাকে চেন্নাই নিয়ে যাওয়া হয়। ধরা পড়ে, ব্লাড ক্যানসার।

বিধান রুইদাসের চিকিৎসার জন্য পথে পড়ুয়ারা। —নিজস্ব চিত্র।

বিধান রুইদাসের চিকিৎসার জন্য পথে পড়ুয়ারা। —নিজস্ব চিত্র।

অর্পিতা মজুমদার  
দুর্গাপুর শেষ আপডেট: ০১ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০১:১৩
Share: Save:

ডিসেম্বর, ২০১৮। ষষ্ঠ শ্রেণির বার্ষিক পরীক্ষায় সবাই এসেছে। অনুপস্থিত শুধু এক জন। বিধান রুইদাস। পূর্ব বর্ধমানের শালডাঙা নেতাজি উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা তার বাড়িতে গিয়ে দেখেন, বছর এগারোর বিধান হাঁটতে পারছে না। তড়িঘড়ি তাকে চেন্নাই নিয়ে যাওয়া হয়। ধরা পড়ে, ব্লাড ক্যানসার।

হাসপাতাল জানায়, গলসি ১-র চাকতেঁতুল পঞ্চায়েতের সাঁকুড়ি গ্রামের বিধানকে ‘কেমোথেরাপি’ দিতে হবে। সে জন্য আগামী আড়াই বছরে দরকার হবে প্রায় দশ লক্ষ টাকা, জানান বিধানের বাবা তপন রুইদাস। তাঁর কথায়, ‘‘দিনমজুরি করে কী ভাবে টাকা জোগাড় করব বুঝতে পারছিলাম না। তাই সাহায্য চেয়ে হাইস্কুলের পাশাপাশি, ছেলের পুরনো স্কুল মুন্সেফপুর অবৈতনিক প্রাথমিক বিদ্যালয়েও যোগাযোগ করি।’’

খবর পেয়ে পথে নামে খুদের দল। ছাপানো হয় পোস্টার। ফি দিন ক্লাস শুরুর আগে পোস্টার হাতে গেরস্থবাড়ি, বাজার, পরিচিতদের কাছে যাচ্ছে রিমি রুইদাস, কোয়েল আঁকুড়ে, দেব আঁকুড়ে, অনুরোধ বাউরি-সহ প্রাথমিক স্কুলের পড়ুয়ারা। পোস্টারে লেখা, ‘বিধান তুমি ভয় পেয়ো না, আমরা তোমার পাশে আছি’। আর কোয়েল, দেবদের প্রত্যয়, ‘‘বিধান দা’কে সুস্থ করবই।’’

ছাত্রের সাহায্যে পিছিয়ে নেই হাইস্কুলও। ভারপ্রাপ্ত শিক্ষক (টিচার ইনচার্জ) সুনির্মাণ মণ্ডল বলেন, ‘‘পানাগড় রেলপাড় হাইস্কুল, পানাগড় হিন্দি হাইস্কুল, কসবা হাইস্কুল-সহ আরও কয়েকটি স্কুলে সাহায্য চেয়েছি। পড়ুয়ারাও ক্লাসে-ক্লাসে চাঁদা তুলছে।’’

মুন্সেফপুর প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষক রাজীব দত্তের সহযোগিতায় জেলাশাসক (পূর্ব বর্ধমান) অনুরাগ শ্রীবাস্তবের মাধ্যমে চিঠি পাঠানো হয় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দফতরেও। বিষয়টি নজরে আনা হয়েছে প্রাথমিক স্কুলের বুদবুদ চক্রের পরিদর্শক জয়ন্ত বর্মণেরও। ওই চক্রের মোট ৫৪টি স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকাদের কাছে বিধানের জন্য আগামী ৬ ফেব্রুয়ারির মধ্যে সাহায্য করার আর্জি জানানো হয়েছে।

এই মুহূর্তে ছেলেকে নিয়ে চেন্নাইয়ে রয়েছেন তপনবাবু। সেখান থেকেই ফোনে বললেন, ‘‘যে ভাবে সবাই এগিয়ে এসেছেন, মনে হচ্ছে ছেলেটা আমার সুস্থ হবেই।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Blood Cancer Bardhaman Health
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE