E-Paper

বাংলাদেশে ফিরতে চান ওঁরা, পাশে স্থানীয় লোক

শীতে জল কমায় স্বরূপনগরের সোনাই নদী এখন ফুট ত্রিশেক চওড়া। অন্য পারে বাংলাদেশের কলোরোয়া। এ-পারে নদীর ফুট দশেক আগে বিএসএফ পাহারা দেয়। তারও কিছুটা আগে ওই বাসস্ট্যান্ড।

নির্মল বসু 

শেষ আপডেট: ২০ নভেম্বর ২০২৫ ০৬:৩৬
হাকিমপুরে।

হাকিমপুরে। —নিজস্ব চিত্র।

এলাকাবাসীর কেউ এগিয়ে দিচ্ছেন চিঁড়ে-মুড়ি, কেউ দুধ, কেউ বা জলের বোতল।

কম্বল-চাদর সঙ্গে আছে। কিন্তু সে ভাবে খাবারের সংস্থান নেই। উত্তর ২৪ পরগনার স্বরূপনগরের সীমান্তবর্তী হাকিমপুরে বিএসএফ চেকপোস্টের কাছে বাসস্ট্যান্ড লাগোয়া ফাঁকা চত্বরে প্রতিদিন জড়ো হওয়া কয়েকশো বাংলাদেশির ওই খাবারটুকুই ভরসা। এসআইআর-আবহে তাঁরা চান দেশে ফিরতে। চান বিএসএফের সাহায্যও। কারণ, বৈধ ভিসা-পাসপোর্ট নেই।

কিছু দিন আগেও ওই জায়গায় খোলা আকাশের নীচে কাটাচ্ছিলেন তাঁরা। এখন ত্রিপল জুটেছে। দলে শিশু, মহিলা, বৃদ্ধেরা রয়েছেন। সঙ্গে বড় ব্যাগে জামাকাপড়ই বেশি। কেউ হাঁড়ি, কড়া, খুন্তি-সহ গৃহস্থালির সরঞ্জামও এনেছেন।

শীতে জল কমায় স্বরূপনগরের সোনাই নদী এখন ফুট ত্রিশেক চওড়া। অন্য পারে বাংলাদেশের কলোরোয়া। এ-পারে নদীর ফুট দশেক আগে বিএসএফ পাহারা দেয়। তারও কিছুটা আগে ওই বাসস্ট্যান্ড। সেখানে জমে ওঠা ভিড়ে থাকা রহিমা বিবি বলেন, “বাংলাদেশের সাতক্ষীরা থেকে বছর তিনেক আগে ঘুরপথে এ দেশে আসি। উত্তর ২৪ পরগনার বিরাটিতে থাকছিলাম। এসআইআরের জন্য পরিচারিকার কাজ চলে গিয়েছে। বিএসএফ যদি ফেরানোর ব্যবস্থা করে, তাই এসেছি।” সাতক্ষীরার সরমা পাল সোনারপুরে নুডলস্‌ কারখানায় কাজ করতেন। তাঁর কথায়, “ভারতে যে সুবিধে পেয়েছি, ভোলার নয়। এখনও পাচ্ছি। বাচ্চাদের জন্য খাবার জোগাড় করে দিচ্ছেন এখানকার লোকজন। ফিরতে পারলে বাঁচি।” ওই দলের স্বপ্না বিবি বলেন, “আট বছর আগে এসেছি। সল্টলেকে পরিচারিকার কাজ করতাম। আমার নামে আধার কার্ড আছে। ‘লক্ষীর ভান্ডার’ও পেতাম।”

স্থানীয় সূত্রের দাবি, বিএসএফ অনুপ্রবেশকারীদের পরিচয় নথিভুক্ত করার পরে, বাংলাদেশে ‘পুশ ব্যাক’ করছে। বিএসএফের দক্ষিণবঙ্গ ফ্রন্টিয়ারের জনসংযোগ আধিকারিক আশিসকুমার আর্যের দাবি, “এটা রুটিন-প্রক্রিয়া। এসআইআর আবহে এখন সংখ্যাটা খানিক বেশি। তাই নজরে পড়ছে।” বসিরহাট পুলিশ-জেলার সুপার হোসেন মেহেদি রহমান বলেন, “স্বরূপনগরে আসা বাংলাদেশিদের নিয়ে যাতে কোনও রকম সমস্যা না হয়, সেটা আমরা দেখছি। বাকিটা বিএসএফ দেখছে।”

প্রশাসনিক নিয়ম-নীতির দিকে না তাকিয়ে হাকিমপুর বাসস্ট্যান্ড এলাকার বাসিন্দারা ওই ভিড়ে থাকা মানুষের জন্য খাবার, জলের বন্দোবস্ত করেছেন। এলাকার পরিমল মণ্ডল বলেন, “এত মানুষ অভুক্ত থাকবেন, হতে পারে না। তাই পাশে আছি।” আর এক বাসিন্দা জিয়াউর রহমানের কথায়, “মানবিকতার খাতিরে মুখ ফিরিয়ে থাকা যায় না।”

তথ্য সহায়তা: অর্ণব ব্রহ্ম

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Special Intensive Revision India-Bangladesh Border Border Security Force Bangladeshis

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy