E-Paper

সমস্যা পানীয় জল নিয়ে, আজ ফের সফরে মুখ্যমন্ত্রী

জল অন্য কারণেও ভোগাচ্ছে। শুক্রবার রাতে জলপাইগুড়ির নাগরাকাটায় গাঠিয়া নদীর জল আচমকা বেড়ে টানাটানি সেতু সংযোগকারী রাস্তা ফের ধসিয়ে দেয়।

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ১২ অক্টোবর ২০২৫ ০৯:৫২
—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

দুর্যোগের পরে, জল নিয়ে নাকাল পাহাড়-ডুয়ার্স।

দার্জিলিঙের পাহাড়ি গ্রামগুলিতে ধসে কোথাও পানীয় জলের পাইপ ফেটেছে, কোথাও পাইপের অস্তিত্বই নেই। আলিপুরদুয়ারের অনেক এলাকায় বন্যার জল সরে পলিতে ঢেকেছে নলকূপ, কুয়োর মুখ। জলাভাব সেখানেও। দার্জিলিঙের বিজেপি সাংসদ রাজু বিস্তা ফাঁকা কলে মুখ লাগিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্দেশ্যে ‘জল নেই’ বলে ফোন করার ঢঙে ‘রিল’ দিয়েছেন সমাজমাধ্যমে। কেন্দ্রের ‘জল জীবন মিশন’ প্রকল্পে রাজ্যের বরাদ্দ আটকে রাখার অভিযোগ তুলে উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী উদয়ন গুহের দাবি, পানীয় জল পরিষেবা স্বাভাবিক করার কাজ চলছে পুরোদমে। এই আবহে আজ, রবিবার মুখ্যমন্ত্রীর ফের উত্তরবঙ্গে পৌঁছনোর কথা। আলিপুরদুয়ারে প্রশাসনিক সভা করার কথা তাঁর।

জল অন্য কারণেও ভোগাচ্ছে। শুক্রবার রাতে জলপাইগুড়ির নাগরাকাটায় গাঠিয়া নদীর জল আচমকা বেড়ে টানাটানি সেতু সংযোগকারী রাস্তা ফের ধসিয়ে দেয়। টানাটানি সেতু সংযোগকারী রাস্তা ধসেই বামনডাঙার মডেল গ্রাম বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছিল। শুক্র এবং শনিবার সংস্কার চলাকালীন ফের কিছু বালির বস্তা ধসে পড়ে। কাজের মান নিয়ে এ দিন বিক্ষোভ দেখান এলাকাবাসী। তাঁদের অভিযোগ, যথাযথ ভাবে কাজ হচ্ছে না। দুদিনের মধ্যে কাজ ঠিকঠাক শেষ না হলে, আন্দোলনের হুঁশিয়ারিও দেওয়া হয়। জলপাইগুড়ি জেলা পরিষদের বাস্তুকার মঞ্জিলাল মুর্মু বলেন, ‘‘হঠাৎ নদীর জল বেড়ে যায়। দ্রুত কাজ শেষ করা হবে।’’ মুখ্যমন্ত্রী বামনডাঙায় আসতে পারেন ধরে নিয়ে এলাকায় বৈঠক করার মতো পরিকাঠামো গড়ছে প্রশাসন।

পরিস্রুত পানীয় জলের অভাবে পাহাড়ের ধসবিধ্বস্ত এলাকার বাসিন্দাদের মধ্যে ডায়রিয়া, জ্বরের মতো রোগ সংক্রমণের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এখনও পাহাড়ে জল সরবরাহ পরিকাঠামোর মেরামতি অর্ধেকও করা যায়নি বলে সূত্রের দাবি। ‘গোর্খাল্যান্ড টেরিটোরিয়াল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন’ (জিটিএ) এবং প্রশাসনেরতরফে কোথাও মোটা প্লাস্টিকের ট্যাঙ্ক ভরে পানীয় জল দেওয়া হচ্ছে। কোথাও দেওয়া হচ্ছে প্লাস্টিকের পাউচ ভর্তি পানীয় জল। তবে স্থানীয় সূত্রের খবর, প্রত্যন্ত এলাকায় পাহাড়ি ঝোরার জল পান করছেন বাসিন্দারা।স্বাস্থ্য দফতর হ্যালোজেন ট্যাবলেট বিলি করলেও, তা সর্বত্র পৌঁছয়নি। দুধিয়ায় মুখ্যমন্ত্রী যে দিন দুর্গতদের সঙ্গে কথা বলতে গিয়েছিলেন, সে দিন সেখানে মেয়াদ উত্তীর্ণ ঠান্ডা পানীয় বিলি করা হয়েছিল বলে অভিযোগ উঠেছে। প্রশাসন অভিযোগ মানেনি।

পাহাড়ে প্রায় ৮০০ বাসিন্দা এখনও বিভিন্ন ত্রাণশিবিরে রয়েছেন। ক্ষতিগ্রস্ত ঘরবাড়ি ঠিক করা বা গৃহহীনদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা কবে হবে, তা নিয়ে এ দিনও স্পষ্ট ইঙ্গিত মেলেনি। মিরিকের তাবাকোশিতে জলস্রোত এবং পলিতে আটকে পড়া পর্যটকদের তিনটি গাড়ি এ দিন উদ্ধার করা হয়েছে। যান চলাচলে নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখে শিলিগুড়ি থেকে কালিম্পং ও সিকিমগামী ধসে বিধ্বস্ত ১০ নম্বর জাতীয় সড়কে আগামী ১৩ থেকে ১৬ অক্টোবর সমস্ত যান চলাচল বন্ধ করা হয়েছে।

আলিপুরদুয়ারের শালকুমারহাট ১ পঞ্চায়েত-সহ বিস্তীর্ণ এলাকায় বন্যার জল সরে গিয়ে পলিতে ঢেকেছে নলকূপ, কুয়োর মুখ। অভিযোগ, বাসিন্দারা পরিস্রুত পানীয় জল পাচ্ছেন না। জেলাশাসক আর বিমলা বলেন, ‘‘পরিস্রুত পানীয় জলের ব্যবস্থা করা হয়েছে প্রশাসনের তরফে। পলিতে নষ্ট হয়ে যাওয়া নলকূপ এবং কুয়োগুলিকে স্বাভাবিক করার কাজও চালানো হচ্ছে।’’

বামনডাঙায় ত্রাণ দিতে গিয়ে গত সোমবার টানাটানি সেতুর কাছেই হামলার মুখে পড়েছিলেন বিজেপি সাংসদ খগেন মুর্মু, বিধায়ক শঙ্কর ঘোষ-সহ প্রতিনিধি দল। এ দিন শঙ্কর ফের ত্রাণ দিতে আসেন নাগরাকাটার দলীয় কার্যালয়ে। তবে হামলার জায়গায় যাননি। তিনি বলেন, “দলের স্থানীয় নেতৃত্ব ঠিক করেছেন, কোথায় কর্মসূচি হবে। ওঁরা মনে করেছেন, ওই এলাকার পঞ্চায়েত সদস্যদের মাধ্যমে ত্রাণবণ্টনই বর্তমানে ভাল।’’ গত কয়েকদিনে বামনডাঙায় নতুন করে পাঁচটি দেহ উদ্ধার হয়েছে। মৃতদের পরিবারগুলির হাতে মন্ত্রী বুলু চিক বরাইক পাঁচ লক্ষ টাকা করে চেকতুলে দিয়েছেন।

রাজ্য বিধানসভার বিরোধী দলনেতা বিজেপির শুভেন্দু অধিকারী সমাজমাধ্যমে একটি পোস্টে মুখ্যমন্ত্রীর সফরের আগে পুলিশের ভূমিকার সমালোচনা করেছেন। তাঁর কটাক্ষ, ‘বিপর্যস্ত মানুষের পরিষেবায় পুলিশের ভূমিকা লবডঙ্কা। পুলিশ শাসকের দলদাসে পরিণত হয়েছে’। উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী পাল্টা বলেন, ‘‘পুলিশ তৃণমূলের পতাকা লাগাবে এমন দুর্দিন দলের আসেনি। পুলিশ মানুষের পাশে রয়েছে।’’ উদয়নের সংযোজন: ‘‘পানীয় জলের ক্ষেত্রে কোথাও পাম্প হাউস, কোথাও পাইপ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পাইপে নোংরা জল ঢুকেছে। ঠিক করা সময়সাপেক্ষ। তবে কাজ চলছে পুরোদমে।’’ উত্তর ২৪ পরগনার গোপালনগরে সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম বলেন, ‘‘উত্তরবঙ্গে বন্যা হচ্ছে। বিজেপি-তৃণমূল নকল যুদ্ধ করছে।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Dooars Darjeeling Drinking Water Crisis

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy