বড়দিন, পৌষ পার্বণে সংহতি জানান দিয়েছিলেন বড়রা (মতভেদে পলিট‘বুড়ো’রা)। প্রেম-পার্বণে তাঁদের দেখা মিলল না। তবে নামলেন ছোটরা। বাৎসরিক প্রেম দিবসে (১৪ ফেব্রুয়ারির ভ্যালেন্টাইন’স ডে) সামাজিক বার্তা নিয়ে হাজির হয়েছে সিপিএমের ছাত্র সংগঠন এসএফআই। সমাজমাধ্যমে পোস্ট করে তারা জানিয়েছে, প্রেমিক-প্রেমিকারা কোনও ঝক্কির মধ্যে পড়লে তাঁরা এসএফআই কর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন। তাঁরা ঝাঁপিয়ে পড়বেন ভালবাসার পক্ষ নিয়ে।
শুক্রবার সকালেই বঙ্গ এসএফআইয়ের ফেসবুক পেজ থেকে একটি ‘সতর্কীকরণ’ পোস্টার পোস্ট করা হয়েছে। তাতে লেখা রয়েছে, ‘‘এ দেশ ভালবাসার, এ দেশ সৌহার্দ্যের, এ দেশ সম্প্রীতির। ভালবাসার যেমন নির্দিষ্ট দিনের প্রয়োজন না-ও হতে পারে, তেমনই হতে পারে প্রতিদিনই ভালবাসার। কোথায় ঘুরব, কী খাব, কী পরব, কার সাথে থাকব তা বেছে নেওয়ার অধিকার এ দেশ দিয়েছে সকলকে। পশ্চিমবঙ্গে কোথাও সেই অধিকারে কেউ বা কারা বিঘ্ন ঘটাতে এলে যোগাযোগ করো এসএফআই কর্মীদের সঙ্গে। আমরা ভালবাসার সাথে আছি।’’
পোস্টারে একটি স্কেচ রয়েছে সাইকেল প্রেমের। চালকের আসনে প্রেমিক। পিছনে বসে খোলাচুলের প্রেমিকা। তাঁর হাতে ধরা লাল বেলুনের সুতো। বেলুনটি ভালবাসার চিহ্নের। তাতে ‘স্মাইলি’।
আরও পড়ুন:
সংগঠন দুর্বল হলেও এখনও অনেক জায়গায় মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার সময়ে ‘হেল্প ডেস্ক’ করে এসএফআই। কিন্তু এত দিন সবই হত পড়াশোনাকেন্দ্রিক। এ বার প্রেমের জন্যেও ‘হেল্প ডেস্ক’ খুলল তারা।
সাধারণ ভাবে বামপন্থীরা মনে করেন, ফেব্রুয়ারির এই কয়েক দিনে যে সব ‘দিবস’ পালন করা হয়, তা বাজার অর্থনীতির তৈরি। তাই সেই স্রোতে তাঁরা গা ভাসান না। আবার বিভিন্ন সংগঠন মনে করে, এই সব দিবসের সঙ্গে ভারতীয় সংস্কৃতির কোনও সম্পর্ক নেই। তাই এ সব বন্ধ। অতীতে বিভিন্ন রাজ্যে বিভিন্ন সংগঠন প্রেম দিবসে কোনও যুগলকে ধরে হেনস্থা করছে, এমন ঘটনা দেখা গিয়েছে। এসএফআই হঠাৎ প্রেমের জন্য ‘হেল্প ডেস্ক’ খুলল কেন? সংগঠনের রাজ্যনেত্রী দীধিতী রায় বলেন, ‘‘আমরা দেখলাম গত কয়েক দিন ধরে বজরং দলের ফতোয়া লেখা একটা পোস্টার ঘুরছে। যাদবপুরের ছাত্রী হস্টেলেও তেমন পোস্টার পড়েছে। আমরা মনে করি না, ভালবাসার কোনও নির্দিষ্ট দিন হয়। কিন্তু কেউ যদি কাউকে বাধা দেয়, আমরা সেটায় বাধা দেব।’’
বড়দিনে রাজ্য সিপিএমের পেজ থেকে যে পোস্ট করা হয়েছিল, তাতে কাস্তে-হাতুড়ি চিহ্নের হাতুড়ির মাথায় পরানো ছিল লাল রঙের সান্টা টুপি। আবার পৌষ পার্বণে দেশের উত্তর থেকে দক্ষিণ পর্যন্ত যে যে রাজ্যে যে যে উৎসব পালিত হয়, সেগুলি উল্লেখ করে লেখা ছিল ‘ইন্ডিয়া দ্যাট ইজ় ভারত।’ যে পোস্টারে ‘বৈচিত্রের মধ্যে ঐক্য’ বোঝানো হয়েছিল। কিন্তু প্রেম দিবসে যে কথাটা ছাত্র সংগঠন বলছে, সেটা সিপিএম বললে কী দোষ হত? দলের নেতারা আনুষ্ঠানিক ব্যাখ্যার মধ্যে যেতে চাননি। তবে এক প্রবীণ নেতা বলেন, ‘‘এ সব ছোটদের বিষয়। শিং ভেঙে বাছুরের দলে ঢুকে লাভ কী?’’
সিপিএম আদর্শগত ভাবে বস্তুবাদী দর্শনে বিশ্বাস করে। অর্থাৎ, তারা নিরীশ্বরবাদী। তবে বহু দিন ধরেই তারা ধর্মীয় উৎসবে অন্য ভাবে শামিল হয়। দুর্গাপুজো, কালীপুজোয় বুক স্টল দেয়। আবার ক্রিসমাসের সময়ে পার্ক স্ট্রিট কিংবা ইদের সময়ে রাজাবাজারে বইয়ের বিপণি সাজিয়ে বসে। সে ভাবেই ছাত্র সংগঠন প্রেম দিবসে সরাসরি না থাকলেও যুগলদের ‘ভ্যালেন্টাইন’ হতে চেয়েছে। কিন্তু তাতে ঢুকলেন না পলিট‘বুড়ো’রা।