অনুব্রত মণ্ডলের বদলে যাওয়া সুর দেখে হতভম্ব অনেকেই। —ফাইল চিত্র।
মেরেছো কলসির কানা, তা বলে কি প্রেম দেব না? অনুব্রত মণ্ডলের গোটা ভাষণ জুড়ে এখন এই সুর। ‘দবঙ্গ’ অনুব্রত মণ্ডল এখন যেন কেষ্ট ‘বোষ্টম’!
মাঠে জমজমাট ভিড়। আবার গরমাগরম কিছু শোনা যাবে। চড়াম চড়াম বাজবে কেষ্টদা’র ঢাক! আশায় ছিলেন সম্ভবত অনুগামীরা।
কিন্তু কেষ্টদা মঙ্গলবার বেজায় চমকে দিলেন ‘গুণমুগ্ধ’ শ্রোতাদের, অনুগামীদের, কর্মী-সমর্থকদের। এ আবার কোন কেষ্টদা? হতভম্ব গোটা জমায়েত। ‘বোম মারুন’, ‘ঘরটাকে জ্বালিয়ে দিন’, ‘গুড়বাতাসা খাইয়ে দিন’— এ সবই যাঁর অত্যন্ত পরিচিত বুলি, সেই অনুব্রত মণ্ডল সিউড়িতে বিজেপির পাল্টা সভা করতে গিয়ে কী বললেন? বললেন, ‘‘আমি বেইমানি করব না, আমি ঠগবাজি করব না, আমি মানুষের সঙ্গে থাকব, আমি মানুষের উপকার করব।’’
অনুব্রত মণ্ডল মঙ্গলবার যে ভাষণ দিলেন, সেই ভাষণের এই একটা মাত্র লাইন উল্লেখযোগ্য বা কয়েকটা লাইন উল্লেখযোগ্য, এমন কিন্তু নয়। গোটা ভাষণটাই চমকে দেওয়ার মতো। অনুব্রতর বেলাগাম কথাবার্তার জন্য এক সময়ে সাফাই দিতে হয়েছিল খোদ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। বলতে হয়েছিল, কেষ্টর মাথায় অক্সিজেন কম যায়। বীরভূম জেলা তৃণমূলের সেই ‘দবঙ্গ’ সভাপতির গলায় যে সুর এ দিন শোনা গেল, তার সঙ্গে যাত্রাদলের বিবেকের কণ্ঠস্বরকে মেলানো গেলেও যেতে পারে। কিন্তু চেনা অনুব্রত মণ্ডলের কণ্ঠস্বরকে কিছুতেই মেলানো যাচ্ছে না।
রবিবার দিলীপ ঘোষ এবং মুকুল রায়ের নেতৃত্বে সিউডিতে বড়সড় মিছিল করেছিল বিজেপি। পাল্টা মিছিল এবং জমায়েত হবে, জানিয়ে দিয়েছিল তৃণমূল। মঙ্গলবার দলের দোর্দণ্ডপ্রতাপ জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের নেতৃত্বে তৃণমূলও বড়সড় মিছিলই করল। কিন্তু জমায়েতের সামনে যখন ভাষণ দিলেন অনুব্রত, তখন একবারের জন্যও চিরচেনা আক্রমণাত্মক অনুব্রতকে খুঁজে পাওয়া গেল না।
কী বললেন অনুব্রত, দেখে নিন এক ঝলক:
বিজেপি নেতারা বীরভূমে এসে উস্কানি দিয়ে গিয়েছেন, রাজনৈতিক হিংসার পরিবেশ তৈরি করতে চেয়েছেন— অভিযোগ করলেন অনুব্রত মণ্ডল। দিলীপ ঘোষ ব্রাহ্মণদের অপমান করেছেন— বললেন অনুব্রত মণ্ডল। ‘‘এ ভাবে মানুষকে অপমান তো তুমি করতে পার না, কাউকে অপমান করার অধিকার তো তোমাকে কেউ দেয়নি’’, বার বারই ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে এই বাঁধা গত আউড়ে গেলেন অনুব্রত। মানুষের উপর অত্যাচার তিনি করবেন না, মানুষকে আঘাত তিনি কিছুতেই করবেন না, সব সময় মানুষের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করবেন, মানুষের উপকার করার চেষ্টা করবেন— এমন কথাই শোনা গেল অনুব্রত মণ্ডলের মুখে। দিলীপ ঘোষরা চ্যালেঞ্জ ছুড়ে গিয়েছেন এবং সে চ্যালেঞ্জ তিনি গ্রহণ করছেন, বললেন বীরভূমের কেষ্টদা। বিজেপি-কে রাজনীতির ময়দানে উপযুক্ত জবাবই তিনি দেবেন, সে কথাও শুনিয়ে দিলেন। কিন্তু প্রবল দাপট দেখিয়ে আর হাড় হিম করা হুঁশিয়ারি দিয়ে যে ভাবে বিরোধী কণ্ঠস্বরকে মাটিতে মিশিয়ে দেওয়ার প্রবণতা টের পাওয়া যেত অনুব্রত মণ্ডলের কথাবার্তায়, এ দিন তার লেশমাত্র দেখা যায়নি। কোনও ভাবেই হিংসার আশ্রয় তাঁর দল নেবে না, এই বার্তাই বার বার দিতে চাইলেন কেষ্ট।
আরও পড়ুন: মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে সম্পর্ক কি তলানিতে? ভারতীর বদলিতে জোর গুঞ্জন
হঠাৎ এমন বদল কেন? তৃণমূল সূত্রের খবর, দলনেত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রীর ধমকেই ‘পথে এসেছেন’ কেষ্টদা। সম্প্রতি বীরভূমে এক প্রকাশ্য সভামঞ্চে দাঁড়িয়ে অনুব্রত মণ্ডলকে ধমক দিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। অনুব্রত একের পর এক বিতর্কিত মন্তব্য যে ভাবে দলকে বার বার অস্বস্তিতে ফেলছে, তা তিনি আর বরদাস্ত করবেন না বলে মমতা জানিয়েছিলেন। মঞ্চে বসে থাকা অনুব্রতকে সরাসরি সম্বোধন করে মমতা বলেছিলেন, ‘‘শেষ বার সতর্ক করছি।’’ মঙ্গলবার সিউড়ির সভা বুঝিয়ে দিল, অনুব্রত বেজায় সতর্ক হয়ে গিয়েছেন।
আরও পড়ুন: অ্যাম্বুল্যান্সে মদের কার্টন, হাসপাতালে বেলি ডান্স!
মাসখানেক আগেই আবদুল মান্নান, বিকাশ ভট্টাচার্যদের হাত-পা ভেঙে দেওয়ার হুমকি দিয়েছিলেন কেষ্ট। জমি অধিগ্রহণের বিরোধিতা করে বিক্ষোভ দেখিয়েছিলেন যাঁরা, তাঁদের গ্রেফতার করার জন্য পুলিশকে সময় বেঁধে দিয়েছিলেন। কয়েক ঘণ্টার মধ্যে পুলিশ ব্যবস্থা না নিলে তিনি নিজে সক্রিয় হবেন, তাণ্ডব চলবে— টেলিভিশন ক্যামেরার সামনে এমন হুমকি দিয়েছিলেন। কিন্তু দলনেত্রীর চূড়ান্ত সতর্কবার্তার পরে আমূল বদল কেষ্টদার কণ্ঠস্বরে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy