গত বছর বিশ্ববঙ্গ শিল্প সম্মেলনের মঞ্চ থেকে এক জাপানি সংস্থা ঘোষণা করে, ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক চাষিদের উৎপাদিত আনাজ কয়েক দিন কাঁচা রাখতে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রিত ছোট গুদাম বানাবে তারা। গুদাম চলবে সৌরশক্তিতে। সেই প্রতিশ্রুতি রাখতে এ বছর বিশ্ববঙ্গ সম্মেলন (২০-২২ জানুয়ারি) শুরুর আগেই প্রকল্প শুরু করতে চলেছে ওই সংস্থাটি। সৌরচালিত প্রথম আনাজের গুদামটি চালু হবে সিঙ্গুরের তাপসী মালিক কৃষক বাজারে।
প্রকল্প বাস্তবায়িত করতে মাস সাতেক আগে ওই জাপানি সংস্থার সঙ্গে মউ চুক্তি স্বাক্ষর করেছে পশ্চিমবঙ্গ শিল্প উন্নয়ন নিগম। সংস্থার এক কর্তা জানান, সিঙ্গুরে প্রথম গুদাম নির্মাণের জন্য জাপানি সংস্থাটিকে এক কোটি টাকা দেবে ‘জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি’ (জাইকা)। মউ-এ বলা হয়েছে, সৌরআলোয় প্রথম দু’বছর নির্মাণকারী সংস্থাই গুদাম চালাবে। তার পরে স্থানীয় লোকজনকে প্রশিক্ষণ দিয়ে সেটি কৃষি বিপণন দফতরের হাতে তুলে দেবে। তবে আনাজপাতি রাখার জন্য চাষিদের গুদাম ভাড়ার টাকা দিতে হবে, না রাজ্য সেই খরচ বহন করবে — তা এখনও চূড়ান্ত হয়নি।
কৃষি বিপণন দফতর সূত্রের খবর, সিঙ্গুরের পাশাপাশি আলিপুরদুয়ারের ফালাকাটাও মনে ধরেছে জাপানি সংস্থাটির। ইতিমধ্যে শীর্ষ কর্তারা এক দফা ঘুরেও এসেছেন এবং আনাজ চাষের বহর দেখে দ্বিতীয় গুদামটি সেখানেই তৈরির পরিকল্পনা রয়েছে। দফতরের মন্ত্রী তপন দাশগুপ্ত বলেন, ‘‘ফালাকাটার প্রকল্পটি পুরোটাই বাণিজ্যিক চুক্তিতে হবে। সরকার জমি দেবে। পরিকাঠামো তৈরি করবে ও গুদাম চালাবে জাপানি সংস্থা।’’ মন্ত্রী জানান, সিঙ্গুর ও ফালাকাটা লাভজনক হলে তারা রাজ্যের সব জেলায় সৌরচালিত গুদাম বানাবে।
সিঙ্গুরে যে গুদামটি হবে সেখানে সর্ব্বোচ্চ ১০ টন আনাজ রাখা যাবে। যে হেতু রিমোটে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রিত হবে তাই ৪-৫ দিন পর্যন্ত আনাজ অপরিবর্তিত থাকবে। এতে অনেকটাই আর্থিক সুরাহা হবে চাষির।
কেন?
কৃষিকর্তারা জানাচ্ছেন, হিমঘরে পণ্য ঢোকালেই এক ধাক্কায় খরচ বেড়ে যায়। পণ্য সতেজ রাখতে যে ধরণের বাতানুকূল পরিবেশ তৈরি করা হয়, তাতে বিদ্যুতের খরচ বাবদ মোটা টাকা দিতে হয় চাষিদের। ফলে খোলা বাজারে দাম বাড়ে আনাজের। কিন্তু জাপানি প্রযুক্তিতে তৈরি গুদামগুলির শীতাতপ যন্ত্র চলবে সৌরশক্তিতে। ফলে বিদ্যুতের খরচ থাকবে না। চাষিও অপেক্ষাকৃত কম দামে ফসল বেচতে পারবেন, লাভ পাবেন বেশি।
সৌরশক্তিতে আনাজ কাঁচা রাখার ব্যবস্থা করলে বিদ্যুতের খরচ বাঁচবে। কারণ, পর্যাপ্ত বিদ্যুৎ পেতে যে ট্রান্সফর্মার বসাতে হয়, এ ক্ষেত্রে দরকার পড়বে না। একই সঙ্গে জেলায় লো-ভোল্টেজের যে সমস্যা প্রকট হচ্ছে, তা থেকেও রেহাই মিলবে। সৌরআলোয় গুদামের ভিতরে তাপমাত্রা ও আর্দ্রতা বাড়িয়ে-কমিয়ে পাঁচ দিন পরেও সতেজ আনাজ বাজারে নিয়ে যেতে পারবেন চাষিরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy