Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪
স্বামীকে খুনের নালিশ

খুলি-হাড় মিলল চৌবাচ্চা থেকে, গ্রেফতার মহিলা

স্বামী নিখোঁজ—পুলিশে ডায়েরি করেছিল স্ত্রী। কিন্তু পড়শি-পরিজনদের সন্দেহ কাটেনি। প্রায় চোদ্দো মাস পরে সেই মহিলাকে প্রেমিকের সঙ্গে হাত মিলিয়ে স্বামীকে খুন করে পুঁতে রাখার অভিযোগে গ্রেফতার করল পুলিশ। বধূটিকে ধরিয়ে দিল একটি মুখ ঢালাই করা চৌবাচ্চা ও তার পাশে পড়ে থাকা দু’টি দাঁত।

ধৃত রিঙ্কু। — নিজস্ব চিত্র

ধৃত রিঙ্কু। — নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
অন্ডাল শেষ আপডেট: ২১ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০৪:০৫
Share: Save:

স্বামী নিখোঁজ—পুলিশে ডায়েরি করেছিল স্ত্রী। কিন্তু পড়শি-পরিজনদের সন্দেহ কাটেনি। প্রায় চোদ্দো মাস পরে সেই মহিলাকে প্রেমিকের সঙ্গে হাত মিলিয়ে স্বামীকে খুন করে পুঁতে রাখার অভিযোগে গ্রেফতার করল পুলিশ। বধূটিকে ধরিয়ে দিল একটি মুখ ঢালাই করা চৌবাচ্চা ও তার পাশে পড়ে থাকা দু’টি দাঁত।

সোমবার রাতে বর্ধমানের অন্ডালে নিখোঁজ শত্রুঘ্ন নুনিয়ার (৪৫) বাড়িতে ওই চৌবাচ্চা খুঁড়ে একটি খুলি ও কিছু হাড়গোড় পায় পুলিশ। শত্রুঘ্নবাবুর ভাই অশোক নুনিয়া দাবি করেন, সেগুলি তাঁর দাদার। বৌদি রিঙ্কু নুনিয়া ও তাঁর প্রেমিক অরুণ শীল শত্রুঘ্নবাবুকে খুন করে পুঁতে রেখেছিল বলে পুলিশে অভিযোগ করেন তিনি। মঙ্গলবার রিঙ্কুকে গ্রেফতার ধরা হয়। পুলিশ সূত্রের দাবি, জেরায় সে তাদের কাছে খুনের কথা মেনে নিয়েছে। অরুণ অবশ্য পলাতক। উদ্ধার হওয়া দেহাবশেষ ফরেন্সিক পরীক্ষায় পাঠানো হচ্ছে। আসানসোল-দুর্গাপুর কমিশনারেটের এক কর্তা বলেন, ‘‘খুনের আগে মারধর করা হয়েছিল বলে অনুমান। তখনই দাঁত ভেঙে গিয়ে থাকতে পারে।’’

অন্ডালের গাইঘাটায় রিকশা চালাতেন শত্রুঘ্নবাবু। তাঁর বাবা খনিকর্মী ছিলেন। তিনি কুলটির বড়ধেমোয় বাড়ি তৈরি করে চলে গেলেও স্ত্রী-মেয়েকে নিয়ে শত্রুঘ্নবাবু খনি আবাসনেই ছিলেন। থাকতেন অশোকবাবুও। তাঁর ও পড়শিদের একাংশের অভিযোগ, পাশের গ্রামের সুদের কারবারি অরুণের সঙ্গে রিঙ্কুর ‘ঘনিষ্ঠতা’ ছিল। তা নিয়ে অশান্তি হতো। অরুণ ও রিঙ্কু মাঝেমধ্যে শত্রুঘ্নবাবুকে মারধরও করতেন বলে অভিযোগ। অশোকবাবু জানান, বছর দেড়েক আগে তিনি বাবার কাছে চলে যান। তার মাস চারেক পরে শোনেন, শত্রুঘ্ন নিখোঁজ। রিঙ্কু মেয়েকে নিয়ে অরুণের সঙ্গে থাকছে।

দিন চারেক আগে গাইঘাটায় এসে তালা বন্ধ আবাসনটি খুলে থাকছিলেন অশোকবাবু। সেখানে একটি চৌবাচ্চার মুখে সিমেন্টের ঢাকনা চাপা দেওয়া ছিল। সোমবার সেই ঢাকনা সরাতে গিয়ে না পারলেও, সেই সময়ে চৌবাচ্চার কাছে পড়ে থাকা দু’টি দাঁত তাঁর নজরে পড়ে। তিনি পুলিশে খবর দেন। পুলিশ ওই চৌবাচ্চার ঢাকনা ভেঙে খোঁড়াখুঁড়ি করতেই বেরোয় খুলি-হাড়গোড়। রাতেই রিঙ্কুকে আটক করা হয়। তবে অরুণ আগেই পালিয়ে যায়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পড়শিদের একাংশের দাবি, নিখোঁজ হওয়ার আগে রিঙ্কু ও অরুণের মারধরে শত্রুঘ্নবাবুকে চেঁচাতে শুনেছিলেন তাঁরা। পরে তাঁর খোঁজ না মেলায় সন্দেহও হয়। কিন্তু এলাকায় ‘প্রভাবশালী’ অরুণের ভয়ে কেউ অভিযোগ করেননি। পুলিশকে শত্রুঘ্ন-রিঙ্কুর মেয়ে জানিয়েছে, বাবা নিখোঁজ হওয়ার সময়ে সে আত্মীয়ের বাড়ি গিয়েছিল। তাকে বলা হয়েছিল, তার বাবা কোথাও চলে গিয়েছেন।

ঘটনাটা ঠিক কী ঘটেছিল, আরও কেউ তাতে জড়িত কি না, তা জানতে রিঙ্কুকে বিশদে জেরা করবে পুলিশ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Skeleton
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE