Advertisement
E-Paper

চক্রের ‘কিংপিন’ জেলে, তার পরেও একাধিক চেক জালিয়াতি, মিলছে পাক যোগ

এই শহরেই বসে কি দেশ জুড়ে চলছে কোটি কোটি টাকার চেক জালিয়াতি চক্র? যে চক্রের প্রাথমিক যোগ খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে পাকিস্তান এবং দুবাইতেও! খাস কলকাতার বুকে পর পর তিনটি চেক জালিয়াতির ঘটনায় এমনটাই সন্দেহ করছেন গোয়েন্দারা।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৯ জানুয়ারি ২০১৯ ১৫:১৩
অলঙ্করণ: তিয়াসা দাস।

অলঙ্করণ: তিয়াসা দাস।

এই শহরেই বসে কি দেশ জুড়ে চলছে কোটি কোটি টাকার চেক জালিয়াতি চক্র? যে চক্রের প্রাথমিক যোগ খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে পাকিস্তান এবং দুবাইতেও! খাস কলকাতার বুকে পর পর তিনটি চেক জালিয়াতির ঘটনায় এমনটাই সন্দেহ করছেন গোয়েন্দারা।

সোমবার উল্টোডাঙা থানায় এ রকমই এক জালিয়াতির অভিযোগ দায়ের করেছেন একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের শ্যামবাজার শাখার ম্যানেজার শোভারানি।

তিনি তাঁর অভিযোগে জানিয়েছেন, গত ৭ ডিসেম্বর তাঁদের ব্যাঙ্কে দীনেশ সিংহ নামে এক ব্যক্তি ২৫ লাখ ১০ হাজার ৫০০ টাকার একটি চেক জমা দেন। চেকটি ডিএস এন্টারপ্রাইসের নামে ইস্যু করা হয়েছিল। চেকটি দিয়েছেন অনুরাধা দেবী। চেকটি ওই রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কেরই গুয়াহাটি শাখার। অ্যাকাউন্টটি একটি যৌথ অ্যাকাউন্ট অনুরাধা দেবী এবং তাঁর স্বামী অনিল কুমার গোস্বামীর, যাঁরা গুয়াহাটির ল্যাম্ব রোডের বাসিন্দা।

আরও পড়ুন: বিজেপিতে যোগ দিলেন তৃণমূল সাংসদ সৌমিত্র খান, রাজ্যে চাঙ্গা গেরুয়া শিবির

শোভারানি তাঁর অভিযোগে জানিয়েছেন, চেকটি নিয়মমাফিক ক্লিয়ার করে দেওয়া হয় এবং দীনেশ সিংহের অ্যাকাউন্টে টাকা জমা হয়ে যায়। এর পরই তাঁদের গুয়াহাটি শাখা থেকে উল্টোডাঙা শাখায় জানানো হয় যে, ওই চেকটি আদৌ কখনও দেননি অ্যাকাউন্টের মালিক অনিলবাবু বা তাঁর স্ত্রী অনুরাধা দেবী। অর্থাৎ একটি জাল চেক দেওয়া হয়েছিল ব্যাঙ্কের উল্টোডাঙা শাখায়। ব্যাঙ্কের পক্ষ থেকে দীনেশ সিংহের দেওয়া ঠিকানায় গিয়ে দেখা যায় সেই ঠিকানাও ভুয়ো। ওই ঠিকানায় দীনেশ সিংহ নামে কেউ থাকেন না।

এই ঘটনার ঠিক দু’সপ্তাহ আগে, ওই রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কেরই জোড়াসাঁকো শাখার ম্যানেজার প্রশান্তকুমার রায় ঠিক একই রকম প্রতারণার অভিযোগ জানিয়েছিলেন গিরিশ পার্ক থানায়। তিনি জানিয়েছিলেন, উপাসনা চৌধুরী নামে এক মহিলা ৩১ লাখ ১০ হাজার ৫০০ টাকার একটি চেক জমা দেন। ওই চেকটি ছিল ওই রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কেরই অসমের ধূলিয়াজান শাখার। ওই চেকটি আপাত ভাবে দিয়েছিলেন ধূলিয়াজান শাখার গ্রাহক বীণা বরদলই। অথচ পরে জানা যায়, ওই চেকটি আদৌ তিনি দেননি। এবং ওই নির্দিষ্ট চেকের পাতাটি তাঁর কাছেই রয়েছে। অর্থাৎ এ ক্ষেত্রেও ব্যবহার করা হয়েছিল জাল চেক। ঠিক একই কায়দায় ১০ লাখ টাকা খুইয়েছেন নাকতলার এক চিকিৎসক। সে ক্ষেত্রেও ঘটনাটি ঘটেছে একই রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে।

পর পর তিনটি ঘটনার তদন্তে নেমে কলকাতা পুলিশের ব্যাঙ্ক জালিয়াতি দমন শাখার আধিকারিকদের অনুমান, সব ক’টি জালিয়াতিই একই গ্যাং-এর। ইতিমধ্যেই তদন্তকারীরা গুয়াহাটিতে গিয়েছিলেন। কারণ গত বছর গুয়াহাটিতে বিশ্ব ব্যাঙ্কের চেক জাল করে টাকা তুলতে গিয়ে ধরা পড়ে সাত জনের একটি গ্যাং। সেই গ্যাংকে জেরা করে জানা গিয়েছিল, ফোনে তাদের কাছে নির্দেশ আসত। সেই ব্যক্তিই জাল চেকের পাতা থেকে শুরু করে কার অ্যাকাউন্ট জালিয়াতি হবে সমস্ত ব্যবস্থা করে দিত। ধৃতরা দাবি করেছিল তারা ফোনের সেই ব্যক্তিকে কখনও দেখেনি। ঠিক একই রকম ভাবে ডিসেম্বর মাসে হাওড়া পুলিশ পাকড়াও করেছিল সাত জনের একটি দলকে। এরা একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে সাড়ে ছ’লাখ টাকার একটি জাল চেক ভাঙানোর চেষ্টা করছিল। তারাও জানিয়েছিল, হোয়াটসঅ্যাপ কল করে কোনও ব্যক্তি তাদের নির্দেশ দিত। সেই নির্দেশ মতো কাজ করত তারা। সিআইডি ধৃতদের জেরা করে দিল্লি থেকে মহম্মদ উমর নামে এক জনকে গ্রেফতার করে। প্রাথমিক ভাবে তদন্তকারীরা মনে করেছিলেন যে ওই উমরই দেশ জুড়ে চলা চেক জালিয়াতি চক্রের পান্ডা। কিন্তু উমর গ্রেফতার হওয়ার পরও একের পর এক চেক জালিয়াতির ঘটনা প্রমাণ করছে যে, উমর নয়, পেছনে আছে আরও বড় চক্র।

আরও পড়ুন: জেলাশাসকের মারের পর এ বার পুলিশের চাপ? ‘নিখোঁজ’ বিনোদের সন্ধান মিলল রাতে

সিআইডির এক তদন্তকারী বলেন, “ধৃতদের কাছ থেকে পাওয়া জাল চেক আমাদের রীতিমতো তাজ্জব করে দিয়েছে। কারণ জালিয়াতরা যে কোনও চেকের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নিরাপত্তা ব্যবস্থা ম্যাগনেটিক ইঙ্ক ক্যারেকটার রেকগনিশন (এমআইসিআর) পর্যন্ত জাল করে নিয়েছে। আর সেই কারণেই জাল ধরার যে অত্যাধুনিক প্রক্রিয়া রয়েছে, সেই ইমেজ বেসড ক্লিয়ারিং সিস্টেমও ধরতে পারছে না।”

তদন্তকারীরা নিশ্চিত, এর পিছনে বড় কোনও চক্র রয়েছে এবং আছে আন্তর্জাতিক যোগ। উমরকে জেরা করতে গিয়ে তদন্তকারীরা গোটা চক্রের সঙ্গে দুবাই এবং পাকিস্তান যোগ খুঁজে পেয়েছেন। গুয়াহাটি এবং হাওড়াতে ধৃতদের জেরা করে জানা গিয়েছে জালিয়াতির টাকার বেশিটাই হাওয়ালা মারফৎ পাঠানো হত বিদেশে। মূলত পশ্চিম এশিয়ার কয়েকটি দেশে। তদন্তকারীদের ধারণা, হাওড়া বা গুয়াহাটির মতো অনেক আলাদা আলাদা মডিউল ছড়িয়ে আছে গোটা দেশে। আর বিদেশ থেকে নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে প্রতিটি মডিউলকে। যারা গত এক বছরে কম পক্ষে ৭৫ কোটি টাকার জালিয়াতি করেছে।

তদন্তকারীদের সন্দেহ ওই চক্রের সঙ্গে ব্যাঙ্কের এক শ্রেণির কর্মীর যোগাযোগ আছে। তা না হলে জালিয়াতদের পক্ষে জানা সম্ভব হত না কার অ্যাকাউন্টে কত টাকা রয়েছে এবং সেই ব্যক্তির সইয়ের নমুনা ব্যঙ্ক কর্মীদের একাংশের মাধ্যমেই জালিয়াতদের হাতে পৌঁছচ্ছে বলে মনে করছেন তদন্তকারীরা।

(বাংলার রাজনীতি, বাংলার শিক্ষা, বাংলার অর্থনীতি, বাংলার সংস্কৃতি, বাংলার স্বাস্থ্য, বাংলার আবহাওয়া -পশ্চিমবঙ্গের সব টাটকা খবরআমাদের রাজ্য বিভাগে।)

Crime Bank Fraud Cheque Fraud Guwahati Dubai Pakistan
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy