E-Paper

সৎপথে চাকরি তো? বিয়ের বাজারে হবু পাত্রের টেট পাশের শংসাপত্রও দেখতে চাইছেন অনেকে!

টোপর মাথায় বিয়ে করতে গিয়ে ছাদনাতলায় ‘গ্রুপ ডি’ বর খবর পেয়েছেন, হাই কোর্টের নির্দেশে তাঁর নিয়োগ বাতিল হয়েছে, এমন নজিরও জলপাইগুড়িতে রয়েছে।

অনির্বাণ রায়

শেষ আপডেট: ০১ এপ্রিল ২০২৩ ০৬:৫০
marriage.

শিক্ষা ক্ষেত্রে নিয়োগে ‘দুর্নীতির’ বাজারে কেউ কেউ আবার শিক্ষা দফতরে হবু পাত্র-পাত্রী‌র ‘টেট’ পাশের শংসাপত্রও চেয়ে বসছেন। প্রতীকী ছবি।

পাত্র হিসাবে গঙ্গারাম কেমন, সুকুমার রায়ের ‘সৎ পাত্র’ কবিতায় জানার চেষ্টা হয়েছিল। কিন্তু মেয়ে বা ছেলের বিয়ে যাঁর সঙ্গে ঠিক হয়েছে, তাঁর স্কুলের চাকরিটা ‘সৎ’ ভাবে পাওয়া কি না, সে প্রশ্ন স্কুল পরিদর্শকের দফতরের সরকারি আধিকারিক থেকে শুরু করে শিক্ষক সংগঠনের নেতা-নেত্রীদের হামেশা শুনতে হচ্ছে জলপাইগুড়িতে। শিক্ষা ক্ষেত্রে নিয়োগে ‘দুর্নীতির’ বাজারে কেউ কেউ আবার শিক্ষা দফতরে হবু পাত্র-পাত্রী‌র ‘টেট’ পাশের শংসাপত্রও চেয়ে বসছেন।

সম্প্রতি কলকাতা হাই কোর্টে চলতে থাকা একাধিক মামলার নির্দেশে কয়েক দফায় শতাধিক শিক্ষক-শিক্ষিকা এবং শিক্ষাকর্মীর নিয়োগ বাতিল হয়েছে। টোপর মাথায় বিয়ে করতে গিয়ে ছাদনাতলায় ‘গ্রুপ ডি’ বর খবর পেয়েছেন, হাই কোর্টের নির্দেশে তাঁর নিয়োগ বাতিল হয়েছে, এমন নজিরও জলপাইগুড়িতে রয়েছে। শিক্ষক নিয়োগ সংক্রান্ত আরও কয়েকটি মামলার শুনানিতে পুরো নিয়োগ-প্রক্রিয়ার নথি চেয়ে রেখেছে হাই কোর্ট। সে কারণে সংশয়-উদ্বেগ রয়েছে শিক্ষক পাত্র বা পাত্রী পাওয়া পরিবারগুলির একাংশে।

জলপাইগুড়ি জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের এক আধিকারিক শোনালেন তাঁর অভিজ্ঞতা। দিন কয়েক আগে এক ভদ্রলোক তাঁর ঘরে ঢুকে পকেট থেকে একটি কাগজ বের করে দেন। কাগজে এক শিক্ষকের নাম, জন্ম তারিখ এবং স্কুলের নাম লেখা। আধিকারিক বললেন, “ভদ্রলোক বললেন, ‘কাগজে যাঁর নাম লেখা, তাঁর সঙ্গে আমার মেয়ের বিয়ে ঠিক হয়েছে। একটু দেখে দেবেন, হবু জামাইয়ের চাকরিটা ঠিকঠাক পরীক্ষা দিয়ে পাওয়া তো?’ ভদ্রলোকের সংশয় দেখে মনে হল, এমন ভাবনা যে কারও হতে পারে।’’

শিক্ষকদের নিয়োগ নিয়ে এমন ‘সংশয়’ জনমানসে তৈরি হয়েছে বলে মনে করেছেন খোদ জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের চেয়ারম্যান তথা তৃণমূল নেতা লৈক্ষ্যমোহন রায়ও। তাঁর কথায়, “অনেকেই এমন প্রশ্ন জিজ্ঞেস করছে। আমি বলেছি, আমাদের জেলায় এখনও কোনও প্রাথমিক শিক্ষক-শিক্ষিকার চাকরি যায়নি। আমরা সব নিয়োগের নথি পাঠিয়েছি। তাতেও কোনও সমস্যা নেই। গ্রুপ ডি-তে কিছু চাকরি গিয়েছে।” চেয়ারম্যানের সংযোজন, “বলতে দ্বিধা নেই, অনেকে আবার টেট পাশের শংসাপত্রও চাইছেন।”

শিক্ষিকা পাত্রীর চাকরি নিয়েও প্রশ্ন আসছে। বামপন্থী শিক্ষক সংগঠন ‘নিখিলবঙ্গ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি’র জেলা সম্পাদক বিপ্লব ঝা বলেন, “এমন এক পাত্রীর নাম জানিয়ে আমার কাছে প্রশ্ন এসেছে। কিন্তু উত্তর দিতে পারিনি!’’

শিক্ষক পাত্রের চাকরি নিয়ে খোঁজখবর চালানো এক পরিবারের গৃহকর্তার মন্তব্য, ‘‘আগে লোকে পাকা চাকরি কি না, বেতন, স্বভাব-চরিত্রের খোঁজ নিত। এখন চাকরি কী ভাবে পেয়েছে, সেটাও জানতে হচ্ছে। আদালতের রায়ে চাকরি গেলে, আর্থিক দুর্দশার সঙ্গে মানসিক অসম্মানও জুটবে। সেটা বরদাস্ত করা কঠিন।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Marriage Recruitment Scam TET

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy