Advertisement
E-Paper

‘ভাই’ রেকর্ড ভাঙছেন, অনশন ভাঙাবেন ছোড়দা

আগে রেকর্ড ভাঙুক। তার পরেই অনশন ভাঙানো হবে! ‘ভাই’য়ের অনশন ভাঙাতে জেলে যাবেন ‘ছোড়দা’!

সঞ্জয় সিংহ

শেষ আপডেট: ০৫ নভেম্বর ২০১৫ ০৪:১৬
কুণাল ঘোষ ও সোমেন মিত্র

কুণাল ঘোষ ও সোমেন মিত্র

আগে রেকর্ড ভাঙুক। তার পরেই অনশন ভাঙানো হবে! ‘ভাই’য়ের অনশন ভাঙাতে জেলে যাবেন ‘ছোড়দা’!

একদা তাঁর স্নেহধন্য ‘ভাই’য়ের দম কতটা, তা পরখ করতে চান ‘দাদা’। জেলবন্দি ‘ভাই’ অনশন করছেন। তাঁর শরীরের হাল খারাপ। তাই ‘ভাই’য়ের কয়েক জন শুভানুধ্যায়ী তাঁদের নিজস্ব উদ্যোগে ‘ছোড়দা’র কাছে আর্জি জানিয়েছেন— দাদা, আপনিই পারবেন ওঁর অনশন ভাঙাতে!

দাদাও আর্জি মানতে রাজি। তবে দাদার আশা, ভাই ২৬ দিন যখন অনশন টানতে পেরেছেন, তখন আজ, বৃহস্পতিবার ২৭ দিন পার করতে পারবেনই। আর তা হলেই রেকর্ড ভাঙবেন। আর এই রেকর্ড ভাঙলেই বাংলায় ‘বড় কোনও পরিবর্তন’ হতে পারে বলে আশা দাদার। কেন? বুধবার সন্ধ্যায় প্রদেশ কংগ্রেসের সদর দফতর বিধান ভবনের পাঁচ তলায় বসে স্মিত হেসে ‘ছোড়দা’ সোমেন মিত্র বলেন, ‘‘কুণাল তো আমার ভাইয়ের মতো! ওঁর প্রতি আমার দুর্বলতা আছে। কারণ, আমার ৪৮ নম্বর ওয়ার্ডের রক্তদান শিবিরে এসেই তো ও রাজ্য সরকারের বিষ নজরে পড়ে!’’

সারদা কেলেঙ্কারিতে অভিযুক্ত কুণাল ঘোষ এখন প্রেসিডেন্সি জেলে বন্দি। কিন্তু এ দিনই কুণালের শুভানুধ্যায়ীদের অনুরোধে সোমেনবাবু কেন অনশন ভাঙাতে গেলেন না? তাঁর জবাব, ‘‘এ রাজ্যে ২৬ দিনের অনশনের রেকর্ড আছে তো! সেই ২৬ দিনের অনশনে তো বাংলার পট পরিবর্তন হয়েছে বলে দাবি করা হয়। তা হলে ২৭ দিনে সেই রেকর্ড ভাঙলে আরও বড় কোনও পরিবর্তন হতে পারে!’’ তিনি স্পষ্ট করে না বললেও এ দিন তাঁর ঘরে যারা বসেছিলেন, তাঁরা সকলে এক বাক্যে সোমেনবাবুর ইঙ্গিতকে সমর্থন করে জানান, এখন বাংলায় সত্যি বড় পরিবর্তন দরকার!

সিঙ্গুরে জমি ফেরতের আন্দোলন করতে গিয়ে ধর্মতলায় তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ২৬ দিনের অনশনকে নিশানা করেই সোমেনবাবু যে ওই মন্তব্য করছেন, তা বুঝে শাসক শিবিরের নেতারা অবশ্য ব্যাপারটাকে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছেন না। রাজ্যের গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী ও তৃণমূলের প্রথম সারির নেতা সুব্রত মুখোপাধ্যায় কার্যত সোমেনবাবুর আশাকে ‘দুরাশা’ বলে অভিহিত করেছেন! তাঁর তির্যক মন্তব্য, ‘‘২৬ দিন কেন, ২৬০০ দিনের রেকর্ড করলেও হবে না। কুণালকে নিয়ে প্রতিযোগিতায় নেমে সোমেনবাবুর লাভ নেই। কুণাল তো প্রতিযোগিতায় অংশই নিতে পারবে না! কারণ মমতা হাজার মানুষের চোখের সামনে অনশন করেছিলেন। আর কুণাল জেলের কুঠুরিতে বসে কী করছে, তা কে জানছে?’’ আসলে কুণালকে সামনে রেখে সোমেনবাবুরা ‘রাজনীতি’ করতে চাইছেন বলে তৃণমূলের নেতৃত্বের একাংশের ধারণা। সুব্রতবাবুর মন্তব্য, ‘‘সোমেনবাবু ঘোলা জলে মাছ ধরতে নেমেছেন। ওতে কোনও লাভ হবে না!’’ তৃণমূল নেত্রীর ২৬ দিনের রেকর্ড ভেঙে মাদ্রাসা শিক্ষকদের অনশনও এখন ৩৫ দিনে পড়েছে। শাসক দলের নেতৃত্ব অবশ্য সেই অনশনকেও বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছেন না।

কুণালের অনশন নিয়ে সোমেনবাবুর মন্তব্যকে ‘নাটকীয়’ আখ্যা দিয়েছেন বিজেপি বিধায়ক শমীক ভট্টাচার্যও। কিন্তু একদা তৃণমূলের সাংসদ সোমেনবাবুরাই যে মমতাকে সরকারে আনার ব্যাপারে মাঠে নেমেছিলেন, তার উল্লেখ করে শমীক এ দিন বলেন, ‘‘২০১১ সালে পালা বদল হলেও পটের কোনও পরিবর্তন হয়নি। একটা ভয়-সন্ত্রাস, বাধ্য থাকার পরিবেশ এখানে রয়েছেই! আজ সোমেনবাবু-সহ অনেকেই এই অবস্থাটা বুঝতে পারছেন। ওই পরিবেশ শিথিল হলেই তালিকাটা আরও লম্বা হবে।’’ কিন্তু ‘অনশনের রেকর্ড’ ভেঙে রাজনৈতিক ভাবে লাভের লাভ সোমেনবাবুরা পাবেন না বলেই মনে করেন শমীকও।

প্রেসিডেন্সি জেল সূত্রের খবর, টানা ২৬ দিন অনশনের জেরে এ দিন কুণালের শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়েছে। জেল হাসপাতালে তাঁকে বেশ কয়েক ঘণ্টা অক্সিজেন দিতে হয়েছে। মঙ্গলবার পর্যন্ত তিনি ডাক্তারও দেখাতে চাইছিলেন না। ডাক্তার দেখতে এলে অসহযোগিতা করছিলেন। কারা দফতরের এক কর্তা কুণালকে হাসপাতালে স্থানান্তরিত করাই উচিত বলে নবান্নকে জানিয়েছিলেন। কিন্তু নবান্ন থেকে এ দিন সাফ জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, প্রয়োজনে হাসপাতাল জেলে নিয়ে যেতে হবে! কিন্তু জেল থেকে বাইরে নিয়ে আসা যাবে না কুণালকে! নবান্নের এক কর্তার কথায়, ‘‘কুণাল জেলে থাকলেই মঙ্গল। বাইরে এসে আবার কী নাটক করবে, এই আশঙ্কা থেকেই তাঁকে জেলে রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে!’’ জেল সূত্রে দাবি করা হয়েছে, এ দিন জেল হাসপাতালে এসএসকেএমের চিকিৎসকেরা কুণালকে দেখে গিয়েছেন।

somen mitra kunal ghosh fast request end sanjoy sinha
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy