রায়ের পরে। সৌরভের মা মিতা চৌধুরী। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক।
ছেলের ছিন্নভিন্ন দেহ দেখেও কান্নার রোল তোলেননি তিনি। পাথর হয়ে গিয়েছিলেন শোকে, মর্মব্যথায়। বারাসত আদালত শুক্রবার তাঁর ছেলের হত্যাকাণ্ডে অভিযুক্তদের দোষী সাব্যস্ত করার পরেই কান্নায় ভেঙে পড়লেন বামুনগাছির প্রতিবাদী যুবক সৌরভ চৌধুরীর মা মিতা চৌধুরী। ‘‘ওদের ফাঁসি চাই আমরা,’’ কাঁদতে কাঁদতেই বললেন মা।
বারাসত আদালত-চত্বরে এ দিন ভিড় করেছিলেন মিতাদেবীর পাড়ার মানুষজন। অভিযুক্তদের এক জন, অনুপ তালুকদার বেকসুর খালাস পাওয়ার পরেই ক্ষোভে ফেটে পড়েন তাঁরা। ‘‘পাড়ার সকলে নাওয়াখাওয়া ভুলে প্রথম থেকেই আমাদের পাশে থেকেছে। থাকবে না-ই বা কেন! সকলেই যে খুব ভালবাসত সৌরভকে,’’ বললেন মিতাদেবী।
স্মৃতির ঘরের দোর খুলে যায় এ বার। মিতাদেবী বলতে থাকেন, ‘‘এই তো সে-দিন পাড়ার বাচ্চাদের নিয়ে মাঠে খেলতে নেমেছিল ঘন্টু (সৌরভের ডাকনাম)। কারও বিপদ শুনলেই দৌড়ে যেত। আমার কোল খালি করে ওকে সরিয়ে দিল ওরা।’’
অভিযুক্ত ১৩ জনের মধ্যে ১২ জনকেই এ দিন দোষী সাব্যস্ত করেছে আদালত। সাজা ঘোষণা হয়নি। তাই স্বস্তি নেই মিতাদেবীর। তাঁদের গোটা পরিবারই দোষীদের ফাঁসি চায়। সৌরভের বাবা সরোজ চৌধুরীর আক্ষেপ, ‘‘আমাদের দেশের আইন ব্যবস্থা এমন যে, বিচার পেতে জীবন শেষ হয়ে যায়। অনেকে তো শেষ দেখেও যেতে পারেন না। আমরা লড়ছি। আমরা শেষ দেখে ছাড়ব।’’
ভাল ছেলে বলে পরিচিত ছিলেন বিরাটি কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র সৌরভ। অন্যায়ের প্রতিবাদ করায় ঘরের সামনে থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে খুন করে দুষ্কৃতীরা তাঁর ক্ষতবিক্ষত দেহ ফেলে রেখে যায় রেললাইনের ধারে। পাড়ায় বেআইনি মদ ও সাট্টার ঠেকের প্রতিবাদ করায় এক তরুণের এই পরিণতি মেনে নিতে পারেনি কেউই। প্রতিবাদে সরব হয়েছিল গোটা রাজ্য।
সরোজবাবু জানান, শ্যামল আর তার দলবল দুষ্কৃতী বলেই পরিচিত। ‘‘আমাদের পাড়া থেকে কিছু দূরেই ওদের বাড়ি। মুখচেনা ছিল। কিন্তু শ্যামলদের সঙ্গে সৌরভের সদ্ভাব বা সংঘাত, কোনওটাই ছিল না,’’ বললেন সরোজবাবু। মিতাদেবী জানাচ্ছেন, ছেলে-বুড়ো সকলের সঙ্গেই আশ্চর্য বন্ধুত্ব ছিল তাঁর ছেলের। ‘‘ওকে হারিয়ে দু’বছর যে কী ভাবে কাটিয়েছি! এখন তো ওর স্মৃতিটুকুই সম্বল,’’ স্বর আটকে আসে মায়ের।
আজ, শনিবার সাজা ঘোষণা করার কথা আদালতের। শুক্রবার রাতে তাই ঘুম আসবে না, জানেন সৌরভের দাদা সন্দীপ। গোটা দিনের ধকল তাঁর চোখেমুখে। সন্দীপ বললেন, ‘‘আমরা ফাঁসি চাই। কিন্তু সাজা যা-ই হোক, আমার ভাইকে তো আর ফিরে পাব না! সেই কষ্টের মধ্যে এটুকুই শান্তি যে, প্রতিবাদীকে মেরে প্রতিবাদকে মারা যায় না। বিচার এক দিন ঠিকই হয়!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy