শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়
সাবস্টেশন খাড়া হয়ে গিয়েছে বছরখানেক আগে। অথচ স্থানীয় বাধায় চালু করা যাচ্ছে না। সঙ্কটের উৎস খুঁজতে এবং সুরাহার দাওয়াই বাতলাতে এ বার ময়দানে নামলেন রাজ্যের নতুন বিদ্যুৎমন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় নিজেই।
ঘটনাস্থল— মধ্যমগ্রামের মহিষপোতা। বিদ্যুৎ উন্নয়নের জমির প্রশ্নে উত্তর ২৪ পরগনার গ্রামটিতে যে অচলাবস্থা দেখা দিয়েছে, তা নিয়ে আজ, মঙ্গলবার মন্ত্রী বৈঠক ডেকেছেন। বারাসতে ডিএম অফিসে বৈঠক বসবে। হাজির থাকবেন মহিষপোতার সংশ্লিষ্ট ৭০টি কৃষক পরিবার ও উত্তর ২৪ পরগনার তৃণমূল জেলা সভাপতি তথা রাজ্যের খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক-সহ জেলা প্রশাসনের তাবড় কর্তারা। আলোচনার মাধ্যমে একটা সমাধানসূত্র বার করা যাবে বলে প্রশাসনের মাথারা আশাবাদী। ওখানে পরিস্থিতিটা ঠিক কী?
সরকারি মহলের খবর: মহিষপোতায় ১৩২ কেভি’র সাবস্টেশনটি বানানো হয়েছে কয়েক কোটি টাকা খরচ করে। কিন্তু সংবহন লাইন টানতে গিয়ে ঝামেলা বাধে। সাবস্টেশন থেকে হাইটেনশন লাইন নিয়ে যেতে হলে মাটিতে চল্লিশ মিটার উঁচু ইস্পাতের চারপেয়ে খুঁটি বসানো দরকার। বিদ্যুৎকর্তারা জানাচ্ছেন, এতে চাষের জমির কোনও ক্ষতি হয় না। তবু স্থানীয় কিছু কৃষক পরিবার আপত্তি তুলে বাধার সৃষ্টি করেছে। খুঁটি পোতা ও জমির উপর দিয়ে লাইন টানার বিনিময়ে প্রায় দশ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দাবি করা হয়েছে। অনেকে আবার সরকারি চাকরিও চেয়েছেন।
এই সব দাবি-দাওয়ার ঠেলায় পাঁচ বছর ধরে নতুন সাবস্টেশন অকর্মণ্য হয়ে বসে রয়েছে। হাইটেনশন লাইনও হয়নি। বিদ্যুৎকর্তাদের বক্তব্য, সাবস্টেশনটি চালু হলে জেলার বিস্তীর্ণ অংশে লো-ভোল্টেজের সমস্যা মিটত। আরও অনেক বাড়িতে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়া যেত। ‘‘কিছুই হল না। উল্টে এখন প্রকল্পের উদ্দেশ্যটাই মাটি হওয়ার জোগাড়।’’— আক্ষেপ এক বিদ্যুৎকর্তার।
বহু আলোচনাতেও জট না-খোলায় এ বার স্বয়ং বিদু্ৎমন্ত্রী হাল ধরতে নেমেছেন। সোমবার শোভনদেববাবু জানান, কৃষকদের কোনও ক্ষতি তাঁরা চান না। অন্য দিকে রাজ্যের স্বার্থে ও মানুষের সুবিধার্থে সাবস্টেশন চালু করাও জরুরি। দু’দিকে ভারসাম্য বজায় রেখে একটা মীমাংসা-সূত্র বার করার চেষ্টা হবে। নতুন বিদ্যুৎমন্ত্রী এ-ও জানিয়েছেন, ক্ষতিপূরণের দাবির পিছনে যদি যুক্তি থাকে, তা হলে সরকার আইন অনুযায়ী ক্ষতিপূরণ দিতে রাজি।
আইন কী বলছে?
বিদ্যুৎ দফতরের খবর: খুঁটি গাড়লে বা জমির উপর দিয়ে লাইন টানলে মালিককে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে কি না, সে ব্যাপারে বিদ্যুৎ-আইনে স্পষ্ট কিছু বলা নেই। চাকরি দেওয়ারও নিয়ম নেই। ‘‘তবে লাইন টানার জন্য বাড়ি-ঘর বা শস্যের ক্ষতি হলে কিংবা বিশেষ কারণ ঘটলে ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করা হয়।’’— বলছেন দফতরের এক কর্তা।
যুক্তি থাকুক বা না-থাকুক, বিদ্যুতের জমি ঘিরে এ হেন জটিলতা নতুন নয়। বাম আমলে নিউটাউনে লাইন নিয়ে যাওয়ার জন্য খুঁটি পোঁতার জমি পেতে কয়েক বছর গড়িয়ে গিয়েছিল। জমানা বদলালেও ছবিটা বিশেষ পাল্টায়নি। গত ক’বছরে রাজ্যের বহু জায়গায় বিদ্যুতের লাইন টানতে গিয়ে কর্তাদের বিস্তর হয়রানি পোহাতে হয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে কাজ আটকে রয়েছে। ব্যতিক্রমও অবশ্য মজুত। কিছু জায়গায় স্থানীয় মানুষই সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। সেখানে সহজেই জট খুলে ফেলা গিয়েছে। কী রকম?
দৃষ্টান্ত হিসেবে উত্তর ২৪ পরগনারই হাবরা, গাইঘাটা ও বনগাঁর কথা উঠে আসছে। জেলা প্রশাসন সূত্রের খবর, ওখানে মহিষপোতার মতোই সমস্যা দেখা দিয়েছিল। বাসিন্দাদের আগ্রহে আলোচনার মাধ্যমে বাধা কেটেছে।
মহিষপোতার কৃষকদের সেই সব উদাহরণ দেওয়া হবে বলে প্রশাসন সূত্রের ইঙ্গিত। জ্যোতিপ্রিয়বাবুর কথায়, ‘‘জোর করে কোনও চাষির এক ছটাক জমিও নেব না। আমরা কারও ক্ষতি চাই না। তবে যেমন খুশি ক্ষতিপূরণ চেয়ে বসলে সরকারের দেওয়ার ক্ষমতা নেই।’’ জ্যোতিপ্রিয়বাবুরও আশ্বাস— বিদ্যুতের খুঁটি পুঁতলে চাষের জমি নষ্ট হবে না। যে যেখানে যেমন চাষ করছিলেন, তা-ই করবেন।
তবু সরকার সংবেদনশীল। ‘‘প্রায় সত্তরটি পরিবার যখন ক্ষতিপূরণ চেয়েছে, তখন বিচার-বিবেচনা করেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’’— মন্তব্য করেছেন শাসকদলের জেলা সভাপতি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy