দেশের প্রায় সব রাজ্যে জল জীবন মিশনের কাজ খতিয়ে দেখবে কেন্দ্রীয় দল। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে এ রাজ্যে সেই পর্যবেক্ষণের সংখ্যা দেশের অন্য বড় রাজ্যগুলির তুলনায় আগেই কম ছিল। সম্প্রতি সেই সংখ্যা আরও কমিয়েছে কেন্দ্র। এই সূত্রে সংশ্লিষ্ট প্রকল্পে বরাদ্দের দরজা ফের খুলবে বলেই আশা রাজ্য প্রশাসনের একাংশের। সংশ্লিষ্ট মহলের যুক্তি, আবাস এবং একশো দিনের কাজের প্রকল্পেও বরাদ্দ বন্ধ রয়েছে। সেগুলি খতিয়ে দেখতে কেন্দ্রের দল এসেছিল ঘনঘন। তবে তাতে এ রাজ্যই ছিল কেন্দ্রের অন্যতম নিশানায়।
শুরুতে স্থির ছিল, কেন্দ্রীয় দলগুলি যাবে বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, হাওড়া, দক্ষিণ ২৪ পরগনা, মালদহ এবং নদিয়ায়। নতুন যে সূচি কেন্দ্র পাঠিয়েছে, তাতে শুধুমাত্র বাঁকুড়া, পুরুলিয়া এবং মালদহেই কেন্দ্রীয় দলগুলি যাবে। অন্ধ্রপ্রদেশ, গুজরাত, কর্নাটক, কেরল, মধ্যপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র, ওড়িশা, রাজস্থান, তামিলনাড়ু, উত্তরপ্রদেশ, লাদাখ, ঝাড়খণ্ড, অসম, মণিপুর, মিজ়োরাম, নাগাল্যান্ড, হিমাচল প্রদেশও রয়েছে কেন্দ্রীয় দলের পর্যবেক্ষণের আওতায়। সংশ্লিষ্ট রাজ্যগুলির অনেকগুলিতেই বিজেপিশাসিত সরকার। এক কর্তার কথায়, “আগে স্থির ছিল, ১০০টি কেন্দ্রীয় দল ১২৬টি প্রকল্পের কাজ খতিয়ে দেখবে। সংশোধিত সূচিতে ৭৫টি দল দেখবে ১২২টি কাজ।”
২০২৪ সালে এই প্রকল্পের জন্য কেন্দ্র-রাজ্য মিলিয়ে খরচ হয়েছিল ৬২২৪ কোটি টাকা। তার মধ্যে কেন্দ্র প্রায় ২৫২৫ কোটি টাকা দিয়েছিল। রাজ্য ৩৬৯৯ কোটি টাকা। প্রকল্পটিতে বরাদ্দের ভাগ কেন্দ্র ও রাজ্যের ৫০% করে হলেও, কেন্দ্র বরাদ্দ বন্ধ করার পরে এ পর্যন্ত প্রায় ২০৫০ কোটি টাকা রাজ্য নিজের কোষাগার থেকে দিয়েছে বলে দাবি প্রশাসনিক সূত্রের। সংশ্লিষ্ট মহলের বক্তব্য, ২০২৪ সালে এই প্রকল্প শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু অনেক রাজ্যই তা শেষ করতে না পারায় প্রকল্পটি আরও কিছু বছর চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্র। ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে এই খাতে নতুন বরাদ্দও হয়। তবু রাজ্যে বরাদ্দ অধরাই রয়েছে বলে অভিযোগ।
এক কর্তার কথায়, “গত এপ্রিলে (নতুন অর্থবর্ষের প্রথম মাসে) কেন্দ্র বৈঠক করে রাজ্যকে জানিয়েছিল, বরাদ্দ কিছু পরিমাণ করে দেওয়া হবে। কিন্তু তার পর থেকে এক মাস পেরিয়ে গেলেও, এখনও বরাদ্দের দেখা নেই।”
রাজ্য প্রশাসনের একাংশের আশা, বরাদ্দ চালু হবে ফের। তাঁদের যুক্তি, প্রায় সব রাজ্যে কেন্দ্রীয় দল বকেয়া কাজের মূল্যায়ন করবে। তার ভিত্তিতে বরাদ্দের অনুমোদন পাওয়া যাবে কেন্দ্রীয় সরকারি স্তরে। তখন হয়তো এ রাজ্যেও সেই বরাদ্দ চালু হবে। অভিজ্ঞ এক কর্তা বলেন, “আবাস প্রকল্পে নিজের খরচায় বাড়ি তৈরি করতে গিয়ে কমবেশি ৩৪ হাজার কোটি টাকার বোঝা ঘাড়ে নিতে হয়েছে রাজ্যকে। এর পরে এই প্রকল্পও নিজে চালানো কার্যত অসম্ভব। দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পরে প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনার বরাদ্দ ছেড়েছে কেন্দ্র। আশা করা যায়, এই প্রকল্পও হয়তো বাধামুক্ত হবে।”
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)