ভোটার তালিকায় বিশেষ নিবিড় সংশোধনের (এসআইআর) কাজে জাতীয় নির্বাচন কমিশনকে নিয়মিত কাঠগড়ায় দাঁড় করাচ্ছে রাজনৈতিক দলগুলি। তবে গোটা প্রক্রিয়ার নজরদারিতে রাজনৈতিক দলগুলির জন্য দরজা খোলাই রেখেছে কমিশন। কিন্তু তাতে সাড়া দেওয়ার উৎসাহ এখনও ততটা দেখা যাচ্ছে না। ফলে কমিশন-রাজনৈতিক দলগুলির মধ্যে সমন্বয়ের প্রশ্নে বড়সড় সমস্যা তৈরির আশঙ্কা দেখা যাচ্ছে। নির্ধারিত ৪ নভেম্বর থেকেই বাড়ি বাড়ি যাওয়া শুরু হবে। তার আগে রাজনৈতিক দলগুলির উদ্দেশে ফের সমন্বয় বাড়ানোর আর্জি জানাল কমিশন। তবে উপযুক্ত সংখ্যক বিএলএ না থাকলেও এসআইআরের কাজ যে আটকাবে না, তা স্পষ্ট করে দিচ্ছে তারা।
রাজ্যে ভোটকেন্দ্রের সংখ্যা ৮০ হাজারের কিছু বেশি। অথচ গত সোমবার পর্যন্ত রাজনৈতিক দলগুলির দেওয়া প্রতিনিধি তথা বুথ লেভেল এজেন্টের (বিএলএ) সংখ্যা মাত্র ১৮ হাজার ১১৪ জন। অথচ প্রতিটা বুথ বা ভোটকেন্দ্রে বুথ লেভেল আধিকারিকদের (বিএলও) সঙ্গে থাকার কথা বিএলএ-দের। যাতে গোটা প্রক্রিয়ার উপর সব রাজনৈতিক দল নজর রাখতে পারে। কোনও খামতি বা ভ্রান্তি দেখলেই তা ধরে দিতে পারে তারা। রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক (সিইও) মনোজ আগরওয়াল মঙ্গলবার সাংবাদিক বৈঠকে বলেন, ‘‘এসআইআর প্রক্রিয়ায় রাজনৈতিক দলগুলি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বিএলও-রা বিএলএ-দের সঙ্গে সমন্বয় রেখেই কাজ করবেন, এটাই স্থির রয়েছে। তাই প্রত্যেক দলের কাছে আবারও অনুরোধ করা হয়েছে, যাতে বাকি থাকা বুথগুলির জন্য সংশ্লিষ্টদের তালিকা দ্রুত কমিশনকে দেওয়া হয়।’’
গত সোমবার আনুষ্ঠানিক ভাবে এসআইআরের ঘোষণা করেছে দিল্লির নির্বাচন সদন। মঙ্গলবার থেকেই বিএলও-সহ বাকিদের প্রশিক্ষণ এবং এনুমারেশন ফর্ম ছাপানোর কাজ শুরু হয়েছে। সিইও দফতর এ দিন জানিয়েছে, সর্বভারতীয় স্তরে এত দিন যত এসআইআর হয়েছে, তার তথ্য আপলোড করা হচ্ছে। তাতে কোনও ভোটার দেশের যে কোনও প্রান্তের তথ্য খুঁজে নিতে পারবেন। পাশাপাশি, ওই নথিতে ‘সার্চ অপশন’ থাকার কারণে কাজটা সহজও হবে। ফলে এ রাজ্যে গত এসআইআরের সঙ্গে এখনকার ভোটার তালিকার যে মিল খোঁজার কাজ হয়েছিল, তার ফলাফল এখনও কম থাকলেও, সর্বভারতীয় স্তরে নতুন এই পদ্ধতিতে মিল আরও বাড়বে। আবার যাঁরা নিজেরা সেই কাজ করতে পারবেন না, তাঁদের জন্য হেল্প-ডেস্ক এবং স্বেচ্ছাসেবক থাকবেন। পরিযায়ী শ্রমিকেরা চাইলে অনলাইনে যেমন আবেদনপত্র জমা করতে পারবেন, তেমনই তাঁরা তা করতে না পারলে পরিবারের যে কেউ সই করে কমিশনকে ফর্ম জমা দিতে পারেন। প্রসঙ্গত, এখন এ রাজ্যে মোট ভোটারের সংখ্যা ৭ কোটি ৬৬ লক্ষ ৩৭ হাজার ৫২৯ জন। কমিশন জানিয়েছে, প্রত্যেক ভোটারের জন্য নির্দিষ্ট এনুমারেশন ফর্মে থাকবে কিউআর কোড-ও। এলাকার লোকই বিএলও হওয়ায়, তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগও সহজে হবে। বিএলওদের জন্য থাকা অ্যাপ নজরে রাখবে কমিশন। প্রক্রিয়ার প্রতিটি পদক্ষেপ তাতেধরা থাকবে।
সিইও বলেন, ‘‘একজনও যোগ্য ভোটার তালিকা থেকে বাদ যাবেন না, কমিশন তা নিশ্চিত করছে। সংবিধানের ৩২৪-৩২৯ নম্বর ধারা অনুযায়ী, নিখুঁত ভোটার তালিকা তৈরির অধিকার রয়েছে কমিশনের।’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘সংবিধানের ৩২৬ ধারা বলছে, বৈধ নাগরিকেরাই ভোটার থাকতে পারেন। ফলে এ ক্ষেত্রে কমিশনের এক্তিয়ার স্পষ্ট।’’
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)