আগামী বিধানসভা ভোটে দলের প্রার্থী বাছাইয়ে বয়সের সীমা বেঁধে রাখতে পারে তৃণমূল কংগ্রেস। গুরুত্ব ও ব্যতিক্রমকে ছাড় দিয়ে সাধারণ ভাবে সত্তরোর্ধ প্রার্থী এড়ানোর প্রয়োজন নিয়ে মতবিনিময় চাইছেন দলীয় নেতৃত্বের একাংশ। সেইসূত্রেই লোকসভা ভোটের পর ফের পরিষদীয় রাজনীতিতে নবীনের অন্তর্ভুক্তি নিয়ে চর্চা শুরু হয়েছে দলের অন্দরে। তবে এই তত্ত্ব কার্যকর করার আগে সংশ্লিষ্ট কেন্দ্রে বদলের ঝুঁকিও মেপে নিতে চান তাঁরা। আগের মতো নবীন-প্রবীণ বিতর্কে জড়িয়ে এই ভাবনা জলে না যায়, তা নিয়ে সতর্ক থাকছেন তাঁরা।
সাংগঠনিক রদবদলে দলে দায়িত্ব বণ্টনে নেতাদের কাজকেই (পারফরম্যান্স) গুরুত্ব দিয়েছিলেন তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই ‘পারফরম্যান্স’-এর সঙ্গে বয়সের সম্পর্ক রয়েছে বলেও মনে করেন তিনি। সেই সূত্রেই বিধানসভা ভোটে মনোনয়নের ক্ষেত্রে ফের বয়স নিয়ে চর্চা শুরু হয়েছে তৃণমূলের অন্দরে। তবে শুধু বয়সই নয়, সামগ্রিক ভাবে এই ‘পারফরম্যান্স’ই বিবেচনায় রেখে এই প্রক্রিয়া চালাচ্ছেন দলীয় নেতৃত্ব। দলের এক নেতার কথায়, ‘‘বয়সের উল্লেখ অপ্রাসঙ্গিক। আসল বিষয় হল ‘পারফরম্যান্স’। বয়সের সঙ্গে তার সম্পর্ক স্বাভাবিক।’’ তাঁর দাবি, বয়স হলে শারীরিক সক্ষমতা তুলনায় কমে যাওয়া, যে কোনও ক্ষেত্রেই তা বিবেচনার বিষয়। এলাকায় কমবয়সিদের নিষ্ক্রিয়তা ও নির্বাচনী ফল বিবেচনায় থাকছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
রাজ্যের ২৯৪ বিধানসভা আসনের ২২০ টি এই মুহূর্তে তৃণমূলের হাতে। তার মধ্যে একটি অংশ নবীন প্রজন্মের। তবে সত্তর বা তার বেশি বয়সের বিধায়কের সংখ্যাও একেবারে কম নয়। তাঁদের মধ্যে অনেকে এখন মন্ত্রিসভার সদস্যও। এই অংশের ‘পারফরম্যান্স’ বিচার করেই মনোনয়ন দেওয়া নিয়ে প্রাথমিক আলোচনা হয়েছে। দলের একাংশ অবশ্য মনে করছেন, সীমা বেঁধে দেওয়া সম্ভব নাও হতে পারে। গত লোকসভা ভোটের আগের পরিস্থিতি মনে রেখে তাঁদের ধারণা, কর্মক্ষমতা থাকলে বয়সের সীমা বাধা হবে না। এই প্রসঙ্গে লোকসভা ভোটে প্রবীণ নেতাদের প্রার্থীপদের সমর্থনে মমতার যুক্তির কথা মনে করছেন তাঁরা। সেই পর্বে তুমুল টানাটানি তৈরি হয়েছিল মনোনয়ন নিয়ে। তবে মমতার সমর্থনেই কলকাতা ও পার্শ্ববর্তী জেলায় অন্তত চারজন প্রবীণ নেতা বয়স সংক্রান্ত আপত্তি পেরিয়ে মনোনয়ন পেয়েছেন।
২০২১ সালে হেরে যাওয়া আসনের বেশির ভাগেই নতুন মুখ আনতে পারে তৃণমূল। পাশাপাশি বেশ কিছু জেতা আসনে এ বার বিদায়ী বিধায়কদের আসন বদলের প্রয়োজন বলেও মনে করছেন দলের একাংশ। সেই সব কেন্দ্রগুলিতে সমীক্ষা করা হয়েছে দলের তরফে। তাতে দেখা গিয়েছে, পরপর কয়েকটি নির্বাচনে দলের পক্ষে সমর্থন থাকলেও উপযুক্ত দেখভাল না হওয়ায় যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে তাতে প্রার্থী বদল জরুরি। আবার পরিচিত অনেকেই নিজের কেন্দ্র বদল চেয়ে তদ্বির শুরু করেছেন।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)