Advertisement
E-Paper

পাক-ভ্রমণের আগে কলকাতায় এসেছিলেন ‘গুপ্তচর’ জ্যোতি! হাওড়া এবং ব্যারাকপুরেও যান শহরের এক নেটপ্রভাবীর সঙ্গে

গ্রেফতার হওয়ার পর থেকেই জ্যোতির ভ্রমণ সংক্রান্ত ভিডিয়োগুলি তদন্তকারীদের আতশকাচের তলায়। জ্যোতি কবে কোথায় গিয়েছিলেন, কাদের সঙ্গে ঘুরেছেন, তাঁদের সম্পর্কেও স্বাভাবিক ভাবেই খোঁজ করছেন তদন্তকারীরা।

সারমিন বেগম

শেষ আপডেট: ১৯ মে ২০২৫ ১৭:৩২
‘Spy’ Youtuber Jyoti Malhotra came to Kolkata before going to Pakistan

জ্যোতি মলহোত্রা। ছবি: সংগৃহীত।

পাকিস্তান যাওয়ার আগে কলকাতায় এসেছিলেন জ্যোতি মলহোত্রা। ঘুরে বেড়িয়েছেন শহরের নানা জায়গায়। পাকিস্তানের হয়ে চরবৃত্তির অভিযোগে ধৃত ইউটিউবার জ্যোতির সঙ্গে ছিলেন শহরের এক নেটপ্রভাবী। সমাজমাধ্যমে জ্যোতির পোস্ট করা ভিডিয়ো ঘেঁটে মিলল এই তথ্য। শহরের যে নেটপ্রভাবীর সঙ্গে জ্যোতিকে দেখা গিয়েছিল, তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল আনন্দবাজার ডট কম। তিনিও তাঁদের ভ্রমণবৃত্তান্তের কথা বিশদে জানালেন।

গ্রেফতার হওয়ার পর থেকেই জ্যোতির ভ্রমণ সংক্রান্ত ভিডিয়োগুলি তদন্তকারীদের আতশকাচের তলায়। জ্যোতি কবে কোথায় গিয়েছিলেন, কাদের সঙ্গে ঘুরেছেন, তাঁদের সম্পর্কেও স্বাভাবিক ভাবেই খোঁজ করছেন তদন্তকারীরা। গত বছর সেপ্টেম্বরে পুরী গিয়ে সেখানকার এক নেটপ্রভাবীর সঙ্গে দেখা করেছিলেন জ্যোতি। সূত্রের খবর, সেই নেটপ্রভাবীকে তদন্তকারীরা জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন।

শহরের ওই নেটপ্রভাবীর সঙ্গে অবশ্য তদন্তকারীরা এখনও যোগাযোগ করেননি। ওই যুবক বলেন, ‘‘আমার সঙ্গে পুলিশ এখনও যোগাযোগ করেনি। আমি কোনও দেশদ্রোহী কার্যকলাপের সঙ্গে জড়িত নই। যদি হতাম, পুলিশ এত ক্ষণে আমাকে গ্রেফতার করে নিত। কিন্তু করেনি। তাই আমার কোনও ভয় নেই। আমি এ সব কিছুই করিনি।’’

শহরের ওই নেটপ্রভাবী জানান, তিনি আসলে আসানসোলের বাসিন্দা। কয়েক বছর আগে তিনি কলকাতায় চলে এসেছেন। গত বছর রামমন্দির উদ্বোধনের সময় জ্যোতির সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ হয়েছিল। দু’জনেই অযোধ্যায় গিয়েছিলেন। তার পর এ বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে কলকাতায় এসেছিলেন জ্যোতি।

কলকাতায় ঘুরে বেড়ানো নিয়ে একটি ভিডিয়ো বানিয়েছিলেন জ্যোতি। তাঁর নেটপ্রভাবী বন্ধু জানান, জ্যোতি বিরিয়ানি নিয়ে ‘ভ্লগ’ করতে চাইছিলেন। এর আগে এক বার কলকাতায় এসে জ্যোতি পার্ক সার্কাসের একটি নামকরা দোকানে বিরিয়ানি খেয়েছিলেন। সে কারণে তাঁকে ব্যারাকপুরের একটি দোকানে নিয়ে যান ওই যুবক। নেটপ্রভাবী বন্ধু বলেন, ‘‘আমরা ব্যারাকপুরেও গিয়েছিলাম। সেখানেও একটা প্রসিদ্ধ বি়রিয়ানির দোকানে খেতে গিয়েছিলাম।’’

প্রসঙ্গত, ব্যারাকপুরে সেনাছাউনি এবং বায়ুসেনাঘাঁটি রয়েছে। যদিও সে ব্যাপারে জ্যোতি কখনওই কিছু জানতে চাননি বলেই জানিয়েছেন ওই নেটপ্রভাবী বন্ধু। তিনি আরও জানান, ব্যারাকপুরের মণিরামপুর ঘাট থেকে তাঁরা শেওড়াফুলিও গিয়েছিলেন। পরে সেখান থেকে হাওড়ায় আর এক নেটপ্রভাবীর বিয়েতে গিয়েছিলেন জ্যোতি। হাওড়া-শিয়ালদহ স্টেশন এবং হাওড়া ব্রিজেও ভ্লগ করেছিলেন তিনি।

কলকাতা ঘুরে বেড়ানোর সময় জ্যোতি মলহোত্রার একটি ছবি।

কলকাতা ঘুরে বেড়ানোর সময় জ্যোতি মলহোত্রার একটি ছবি।

সেই জ্যোতিকে গত শনিবার হরিয়ানা পুলিশ পাকিস্তানের হয়ে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে গ্রেফতার করেছে। গ্রেফতার হয়েছেন আরও পাঁচ জন। শহরের নেটপ্রভাবী ‘বন্ধু’ বলেন, ‘‘আমি সত্যিই স্তম্ভিত। অদ্ভুত লাগছে। এ সবের জন্য আমরা যাঁরা ভ্লগ করি, তাঁদের নাম খারাপ হচ্ছে।’’ বর্তমানে আন্দামানে ভ্লগের কাজেই গিয়েছিলেন ওই নেটপ্রভাবী। তিনি জানান, জ্যোতির সঙ্গে যে পাঁচ জনকে পুলিশ গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে গ্রেফতার করেছে, তাঁদের তিনি চেনেন না।

এখনও পর্যন্ত তদন্তে দেখা গিয়েছে, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে কলকাতা থেকে ঘুরে যাওয়ার পর মার্চে পাকিস্তানে গিয়েছিলেন জ্যোতি। অটারী-ওয়াঘা সীমান্ত পেরিয়ে ও পারে যাওয়া, লাহৌরের আনারকলি বাজার, পাক পঞ্জাবের কটাস রাজ মন্দির ঘুরে দেখার ভিডিয়োও রয়েছে জ্যোতির সমাজমাধ্যমের অ্যাকাউন্টে। পাকিস্তানের খাবার এবং ভারত-পাকিস্তানের সংস্কৃতির তুলনা করেও ভিডিয়ো বানিয়েছিলেন ইউটিউবার।

ঘটনাচক্রে, কলকাতায় থেকে যে ভিডিয়োটি বানিয়েছিলেন জ্যোতি, সেই ভিডিয়োয় পাকিস্তানে ঘুরতে যাওয়ার ব্যাপারেও কথা বলেছেন তিনি। লাইভে এক পাকিস্তানি নাগরিক তাঁর কাছে জানতে চেয়েছিলেন, তাঁদের দেশে কোথায় কোথায় যাওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে জ্যোতির। জবাবে ইউটিউবার বলেছিলেন, ‘‘পাকিস্তানের ভিসা পাওয়ার ক্ষেত্রে কিছু ব্যাপার রয়েছে। ওখানে ভিসার জন্য আবেদন করলে গোটা দেশের জন্য ভিসা পাওয়া যায় না। শুধু কয়েকটি শহরের জন্য ভিসা পাওয়া যায়। আমার ইচ্ছা লাহৌর, করাচি, রাওয়ালপিন্ডি যাওয়ার। লাহৌর তো যাচ্ছিই। বাকিটা দেখা যাক।’’

শিয়ালদহ স্টেশনে তোলা জ্যোতি মলহোত্রার ছবি।

শিয়ালদহ স্টেশনে তোলা জ্যোতি মলহোত্রার ছবি।

হরিয়ানা পুলিশের দাবি, পহেলগাঁও হত্যাকাণ্ডের পর ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে সংঘাতের আবহে পাকিস্তানি গুপ্তচরদের সঙ্গে যোগাযোগ ছিল জ্যোতির। হরিয়ানার হিসার জেলার পুলিশ সুপার শশাঙ্ককুমার সবন্ত জানিয়েছেন, পহেলগাঁও কাণ্ড এবং জ্যোতির পাকিস্তান যাওয়ার মধ্যে কোনও যোগসূত্র রয়েছে কি না, থাকলে কী ধরনের যোগসূত্র, তা খুঁজে বার করা হচ্ছে। পুলিশ সুপার এ-ও বলেন, ‘‘পাক গুপ্তচরদের দেওয়ার মতো জ্যোতির কাছে তেমন তথ্য ছিল না। কারণ, ভারতীয় সেনার সঙ্গে ওঁর সরাসরি যোগাযোগ ছিল না। কিন্তু পাকিস্তানি আধিকারিকদের সঙ্গে যোগাযোগ তৈরি হয়েছিল ওঁর। জ্যোতিকে নিজেদের সম্পদে পরিণত করেছিলেন পাক আধিকারিকেরা। অন্য ইউটিউবারদের সঙ্গেও ওঁর যোগাযোগ ছিল। ওঁদের সঙ্গে আবার পিআইও-দের (জন তথ্য অফিসার) যোগাযোগ ছিল।’’

গত বছর দিল্লিতে পাকিস্তানের হাই কমিশনের ইফতার পার্টিতেও যোগ দিয়েছিলেন জ্যোতি। সেই প্রসঙ্গে হিসার পুলিশের সুপার বলেন, ‘‘সামাজিকতায় কোনও সমস্যা নেই। কিন্তু তাঁদের উদ্দেশ্য বুঝতে হবে। পাকিস্তান আমাদের জন্য সাধারণ দেশ নয়। সংঘাতের সময় সে দেশে বার বার ভ্রমণ, সামাজিক ভাবে মেলামেশা, যোগাযোগ রাখা, অনুগ্রহ বিনিময় দেশের ঐক্য, সার্বভৌমত্বে আঘাত হানতে পারে।’’

Jyoti Malhotra Spy Social Media Influencer Youtuber
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy