Advertisement
E-Paper

খাওয়া জোটে না বহু দিনই, এই ছেলে মাধ্যমিকে অষ্টম

নারায়ণ দে বাবা রতন দেবনাথ পেশায় সব্জি বিক্রেতা। মাসিক আয় টেনেটুনে চার-পাঁচ হাজার টাকা। রোজ সব্জি বিক্রি করতে যেতে হয় পাশের রাজ্য অসমের কোকড়াঝাড়ে। কোনও কোনও দিন খালি হাতেও ফিরতে হয়। সে দিন ঠিকমতো খাবার জোটে না তাপসদের। ছেলের মতো রতনবাবুও হাল ছাড়েননি। ছেলে যে বড্ড মেধাবী!

শেষ আপডেট: ০৬ জুন ২০১৮ ১৮:২১
মাধ্যমিকে অষ্টম স্থানাধিকারী তাপস দেবনাথ। —নিজস্ব চিত্র।

মাধ্যমিকে অষ্টম স্থানাধিকারী তাপস দেবনাথ। —নিজস্ব চিত্র।

একটা বাক্যই এ ক’বছর ধরে নিজেকে বার বার শুনিয়ে এসেছে সে। হাল ছেড়ো না।

পড়ার মাঝে, পরীক্ষার সময়, বন্ধুদের সঙ্গে মাঠে দৌড়ঝাঁপ করতে গিয়ে প্রতি মুহূর্তে মনে মনে সে আওড়াত, ‘আমাকে হেরে গেলে চলবে না।’ নানা প্রতিকূলতার মধ্যে এই মন্ত্রেই আজ সাফল্য এসেছে। মাধ্যমিকে অষ্টম হয়েছে আলিপুরদুয়ারের তাপস দেবনাথ।

আলিপুরদুয়ারের প্রত্যন্ত এলাকা কামাক্ষ্যাগুড়ি। সেখানেই ছোট্ট একচিলতে ঘর তাপসদের। যৌথ পরিবার। বাবা-মা ছাড়াও রয়েছেন ঠাকুরদাদা, কাকারাও। বাবা রতন দেবনাথ পেশায় সব্জি বিক্রেতা। মাসিক আয় টেনেটুনে চার-পাঁচ হাজার টাকা। রোজ সব্জি বিক্রি করতে যেতে হয় পাশের রাজ্য অসমের কোকড়াঝাড়ে। কোনও কোনও দিন খালি হাতেও ফিরতে হয়। সে দিন ঠিকমতো খাবার জোটে না তাপসদের। ছেলের মতো রতনবাবুও হাল ছাড়েননি। ছেলে যে বড্ড মেধাবী!

আরও পড়ুন: ‘পথের পাঁচালী পড়ার ভাললাগাটুকু ছাপিয়ে গেল আজ আমার’

ফল প্রকাশের পর তাপসের চোখেমুখে আজ আনন্দের ঝলক। বাবার মুখে হাসি ফোটাতে পেরে সে আরও খুশি। তাপসের কথায়, ‘‘আত্মসম্মান তো আগে। তাই গৃহশিক্ষকরা টাকা নিতে না চাইলেও চক্ষুলজ্জার জন্য টিউশন ফি দিতাম। কিন্তু, বাবা আর পেরে উঠত না। আজ সত্যি আমরা খুব খুশি।’’ বড় হয়ে কী হতে চায়? লাজুক চোখে তাপস বলে, ‘‘ডাক্তার হতে চাই। আশপাশের গ্রামের স্বাস্থ্য পরিষেবা খুব একটা ভাল নয় তো।’’

ছেলের ভাল ফল করবে, ভেবেছিলেন রতনবাবু। কিন্তু, রাজ্যে অষ্টম হবে, তা আশা করেননি। মাধ্যমিকে তাপস পেয়েছে ৬৮২। ১০০-র মধ্যে বাংলায় সে পেয়েছে ৯৭, ইংরেজিতে ৯২, ভূগোলে ১০০, অঙ্কে ১০০, ভৌত বিজ্ঞানে ৯৮, জীবন বিজ্ঞানে ৯৯ এবং ইতিহাসে ৯৬। এ দিন রতনবাবু বলেন, ‘‘ওর জন্যই তো সব। রাজ্যের মধ্যে অষ্টম হবে ভাবিইনি। আমাদের এত কষ্ট আজ সার্থক।’’ তাপসের মা চিনু দেবনাথ বলেন, ‘‘আমাদের আর্থিক প্রতিকূলতা রয়েছে। কিন্তু, ছেলেকে তো পড়াতেই হবে।’’

তাপসের আর্থিক প্রতিকূলতার বিষয়টি তার স্কুলের শিক্ষকদের অজানা ছিল না। ওর মতো মেধাবী ছাত্রের পাশে থাকতেই চেয়েছেন তাঁরা। কামাক্ষ্যাগুড়ি হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক সঞ্জিত কর বলেল, ‘‘উচ্চমাধ্যমিকে স্কুলে ভর্তির ফি নেওয়া হবে না তাপসের কাছ থেকে। আর বইপত্র কেনা নিয়েও ওকে কিছু ভাবতে হবে না।’’

Madhyamik Madhyamik Result 2018 Rank Merit List
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy