প্রতীকী ছবি
পশ্চিমবঙ্গে এ-পর্যন্ত প্রায় ৬৯ শতাংশ রেশন কার্ডের সঙ্গে আধার কার্ডের সংযোগ দেওয়া হয়েছে। ডিজিটাল রেশন কার্ডের সঙ্গে আধার-যোগের গতি বাড়তেই প্রশাসনিক কর্তাদের অনুমান সত্য করে ‘সন্দেহজনক’ তালিকায় চলে এসেছে প্রায় ১৪ লক্ষ রেশন কার্ড। ফলে এখনই মাসে অন্তত চার কোটি টাকা বাঁচানোর সুযোগ তৈরি হয়েছে সরকারের কাছে। প্রশাসনের আশা, বাতিলযোগ্য কার্ডের সংখ্যা যত বাড়বে, সেই হারে অর্থ সাশ্রয় করতে পারবে রাজ্য।
খাদ্য দফতরের কর্তাদের হিসেব, ধান সংগ্রহ, তা থেকে চাল তৈরি, পরিবহণ খরচ, ভর্তুকি ইত্যাদি মিলিয়ে মাসে এক কিলোগ্রাম চাল নিখরচায় উপভোক্তাকে দিতে রাজ্যের প্রায় ২৮ টাকা খরচ হয়। সন্দেহজনক তালিকায় থাকা প্রায় ১৪ লক্ষ কার্ড বাদ গেলে খরচ বাঁচবে মাসে ৩.৯২ কোটি টাকা। বছরে ৪৭.০৪ কোটি টাকা। আরও যত বেশি কার্ড বাদ যাবে, বেঁচে যাওয়া অর্থের পরিমাণও তত বাড়বে।
প্রশাসনিক সূত্রের খবর, রেশন কার্ডের সঙ্গে আধার কার্ডের সংযোগ দেওয়ার কাজ যে-গতিতে চলছে, তাতে একশো ভাগ কাজ শেষ করতে খুব বেশি সময় লাগবে না। ৬৯ শতাংশ রেশন কার্ডের সঙ্গে আধার-যোগের সুবাদেই প্রায় আট লক্ষ রেশন কার্ড বাদ পড়েছে। সেগুলির মধ্যে একই আধার নম্বরে একাধিক কার্ডের অস্তিত্ব রয়েছে। আবার একই পরিবারে কোনও এক জনের নামে একাধিক কার্ডেরও খোঁজ মিলেছে। অন্তত ছ’লক্ষ কার্ডধারী উপভোক্তা মারা গিয়েছেন। সেই সব কার্ড স্বাভাবিক নিয়মেই বাতিল হয়ে যাচ্ছে।
এক প্রশাসনিক কর্তার বলেন, “বেশ কিছু দিন ধরেই সরকার বলে আসছে, রেশন কার্ডের সঙ্গে আধার কার্ডের সংযোগ স্থাপন করিয়ে নেওয়া জরুরি। রেশন দোকানে গিয়েও উপভোক্তা সহজেই এটা করাতে পারেন। এতে উপভোক্তার রেশন বেহাত হওয়ার আশঙ্কা থাকবে না।”
উপভোক্তাদের এখন নিখরচায় রেশন দিচ্ছে রাজ্য। গত নির্বাচনের আগে দলীয় ইস্তাহারেও শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, খাদ্যসাথী প্রকল্পের আওতায় ১.৫ কোটি পরিবারের দুয়ারে রেশন পৌঁছে দেওয়ার পাশাপাশি ১০ কোটি মানুষকে বিনামূল্যে রেশন দেওয়া হবে। সরকারি সূত্রের খবর, দুয়ারে রেশন কর্মসূচিতে নিখরচার সামগ্রী ঘরে ঘরে পৌঁছে দেওয়ার জন্য খরচ ধরা আছে প্রায় ১২০০ কোটি টাকা। নিখরচার রেশনের জন্য বরাদ্দ প্রায় ১৪০০ কোটি। অর্থাৎ খরচের অঙ্ক বিপুল। রাজ্যের বর্তমান আর্থিক পরিস্থিতিতে খরচ কিছুটা
কম হলে তাতে সরকারেরই লাভ। অনেক জেলা-কর্তা জানাচ্ছেন, আধার কার্ড সংযোগের কাজ সম্পূর্ণ না-হওয়ায় বাতিলযোগ্য কার্ডের সংখ্যা তুলনায় কিছুটা কম মনে হচ্ছে। সেই কাজ শেষ হয়ে গেলে এক-একটি জেলায় কমবেশি এক লক্ষ করে বাতিলযোগ্য রেশন কার্ডের খোঁজ মিলতে পারে।
প্রশাসনিক সূত্রে জানা গিয়েছে, বিভিন্ন বিষয়ে আধার-যোগ নিয়ে আগে রাজ্যের আপত্তি থাকলেও ‘এক দেশ, এক রেশন কার্ড’ ব্যবস্থা চালু করার সময় ডিজিটাল রেশন কার্ডের সঙ্গে আধার সংযোগের কাজ শুরু করতেই হয় সরকারকে। এতে এক দিকে যেমন ভুয়ো বা নকল কার্ড চিহ্নিত করা যাচ্ছে, তেমনই নিজের বরাদ্দ প্রকৃত উপভোক্তাই সংগ্রহ করতে পারছেন। কারণ, একটি আধার নম্বরের প্রেক্ষিতে একটি রেশন কার্ডই বৈধতা পাচ্ছে। রেশন তোলার যন্ত্রে সেই কার্ডে থাকা বায়োমেট্রিক অথবা নথিবদ্ধ মোবাইলে ওটিপি না-গেলে উপভোক্তার পক্ষে রেশন তোলা সম্ভব নয়। পাশাপাশি, একমাত্র প্রকৃত উপভোক্তাদের জন্য রেশনসামগ্রী বরাদ্দ করতে পারবে সরকার। তাতে ‘অসাধু পথে অপচয়’-ও রোখা যাবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy