Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
TMC

সুনীল-বিশ্বজিৎকে ঘিরে নিরাপত্তার সূচকের নিরন্তর ওঠাপড়া, জল্পনা-পাল্টা জল্পনা

সোমবার বিধানসভায় মমতা-সাক্ষাতের পর বিজেপি-র হেস্টিংসের দফতরে দুই বিধায়কের সঙ্গে কথা বলেন কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক কৈলায় বিজয়বর্গীয়।

ফাইল ছবি

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ১৪:৩৭
Share: Save:

মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বিধানসভা ভবনে গিয়ে সাক্ষাৎ এবং তার পরেই রাজ্য সরকারের তরফে নিরাপত্তারক্ষী পাঠানো হয়েছিল নোয়াপাড়ার বিজেপি বিধায়ক সুনীল সিংহের বাড়িতে। রাজ্য সরকারি নিরাপত্তা দেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে বনগাঁ উত্তরের বিজেপি বিধায়ক বিশ্বজিত্ দাসকেও। কিন্তু সুনীল সেই নিরাপত্তা প্রত্যাখ্যান করেছেন। বিশ্বজিতের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করা না গেলেও তাঁর ঘনিষ্ঠ সূত্রে দাবি করা হয়েছে, তিনিও রাজ্যের নিরাপত্তা নেবেন না।

দুই বিজেপি বিধায়ককে রাজ্য সরকারের নিরাপত্তা দেওয়ার খবরে তাঁদের তৃণমূলে প্রত্যাবর্তন ঘিরে জল্পনা শুরু হয়েছিল। সুনীল সেই নিরাপত্তা প্রত্যাখ্যান করায় আবার পাল্টা জল্পনা শুরু হয়েছে। কারণ, দুই বিধায়কই দলবদলের জল্পনা খারিজ করে দিয়েছেন।

প্রসঙ্গত, সম্প্রতি দলবদলের ময়দানে নিরাপত্তা একটা সূচক হিসাবে কাজ করছে। কারা কোনদিকে— রাজ্য না কেন্দ্রে, তা নিরূপিত হচ্ছে তাঁদের নিরাপত্তা প্রদানকারী সরকার দিয়ে। তৃণমূল ছেড়ে বিজেপি-তে যোগ দেওয়ার আগে শুভেন্দু অধিকারী এবং রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় রাজ্য সরকারের নিরাপত্তা ছেড়ে দিয়েছিলেন। অনতিবিলম্বে তাঁদের কেন্দ্রীয় সরকারি নিরাপত্তা দেওয়া হয়। সে কারণেই সোমবার বিজেপি-র দুই বিধায়ককে রাজ্য সরকারি নিরাপত্তা দেওয়ার তাঁদের রাজ্যের শাসক শিবিরে যোগদানের জল্পনা শুরু হয়েছিল। কিন্তু সুনীল মঙ্গলবার জানিয়েছেন, তাঁর সঙ্গে কেন্দ্রীয় সরকারি নিরাপত্তা আছে। তাঁর আর রাজ্যের নিরাপত্তা প্রয়োজন নেই। বিশ্বজিৎও কেন্দ্রীয় সরকারি নিরাপত্তা পান। তিনি যে রাজ্যের নিরাপত্তা নিতে চান না, তা সোমবারই জানিয়ে দিয়েছিলেন। ফলে জল্পনার অভিমুখ ঘুরে গিয়েছে।

ঘটনা গড়াতে শুরু করেছিল দুই বিধায়ক সোমবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখা করার পরেই। তাঁরা তৃণমূলে যোগ দিতে চলেছেন, এমন জল্পনার তখনই শুরু। তবে ওই সাক্ষাতের পরেই দুই বিধায়ককে ডেকে পাঠিয়ে তাঁদের সঙ্গে কথা বলে বিজেপি। তবু সোমবার রাতেই সুনীলের নোয়াপাড়ার বাড়িতে রাজ্য সরকারের নিরাপত্তাকর্মীরা পৌঁছে যান। কিন্তু সুনীল সেই নিরাপত্তা নিতে চাননি।

মঙ্গলবার বিশ্বজিতের দু’টি ফোনই বন্ধ ছিল। তবে সুনীল আনন্দবাজার ডিজিটালকে বলেন, ‘‘সোমবার রাতে বাড়ি ফিরে জানতে পারি, আমার জন্য রাজ্য সরকারের নিরাপত্তারক্ষী পাঠানো হয়েছে। আমি তখন তাঁদের বলি, সকালে আসুন কথা হবে। মঙ্গলবার সকালে পুলিশের লোকজন আমার বাড়িতে এলে নিরাপত্তার কোনও প্রয়োজন নেই বলে জানিয়ে দিয়েছি। এমনিতেই কেন্দ্রীয় সরকারের সিআইএসএফের নিরাপত্তা আমার সঙ্গে রয়েছে। তাই নতুন করে আর রাজ্যের নিরাপত্তার প্রয়োজন নেই।’’ বিধানসভায় মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতের সময় তাঁর নিরাপত্তা নিয়ে কোনও কথা হয়নি বলেও দাবি করেন সুনীল। তা হলে হঠাত্ তাঁর বাড়িতে রাজ্য সরকারের নিরাপত্তারক্ষী পাঠানোর পিছনে কি কোনও যড়যন্ত্র রয়েছে? সুনীলের উত্তর, ‘‘আমার দল আমার অবস্থান জানে। ভুল বোঝাবুঝির কোনও প্রশ্ন নেই। কে, কারা এই ষড়যন্ত্র করেছে সে বিষয়ে কিছু বলতে পারব না।’’

সোমবার বিধানসভায় মুখ্যমন্ত্রীকের পা ছুঁয়ে প্রণামও করেছিলেন সুনীল-বিশ্বজিৎ। তারপর মমতার সঙ্গে একান্তে ২০ মিনিট বৈঠক করেন তাঁরা। তবে কী বিষয়ে কথা হয়েছে সে ব্যাপারে পরিষ্কার করে তাঁরা কিছু জানাননি। সুনীল বিজেপি সাংসদ অর্জুন সিংহের শ্যালক। অর্জুনের দলবদলের পর তিনিও তৃণমূল ছেড়ে বিজেপি-তে যোগ দেন। তবে ইদানীং দলের কোনও কর্মসূচিতে তাঁকে খুব একটা দেখা যাচ্ছে না। অন্য দিকে, বিশ্বজিতের সঙ্গে সম্প্রতি কিছুটা দূরত্ব তৈরি হয়েছে দলের। তার কারণ হিসাবে তাঁর সঙ্গে বনগাঁর বিজেপি সাংসদ শান্তনু ঠাকুরের মনোমালিন্যের কথা বলছে দলের একাংশ। তবে সোমবার বিধানসভায় মমতা-সাক্ষাতের পর বিজেপি-র হেস্টিংসের দফতরে দুই বিধায়কের সঙ্গে কথা বলেন কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক কৈলায় বিজয়বর্গীয়। ঘটনাচক্রে, তার পরেই দু’জন রাজ্যের নিরাপত্তা প্রত্যাখ্যান করেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

BJP TMC
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE