Advertisement
৩০ এপ্রিল ২০২৪
CV Ananda Bose

রাজ্যপাল বোসের ‘রিপোর্ট কার্ডে’র জবাব দিল রাজ্য, ন’পাতার চিঠিতে এক্তিয়ার বোঝানো হল রাজভবনকে

সম্প্রতি গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের অস্থায়ী উপাচার্যকে পদ থেকে সরানো নিয়ে আবার প্রকাশ্যে আসে রাজ্য-রাজ্যপাল সংঘাত। বুধবার ‘রাজ্যপালের রিপোর্ট কার্ড’ নামে একটি বিবৃতি প্রকাশ করে রাজভবন।

রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস।

রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৫ এপ্রিল ২০২৪ ১১:১০
Share: Save:

‘রিপোর্ট কার্ড’ পেশ করে রাজ্যের বিরুদ্ধে সুর চড়িয়েছিলেন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। এ বার সেই ‘রিপোর্ট কার্ড’-এর জবাব দিল রাজ্য। ন’পাতার চিঠির প্রায় প্রতিটি ছত্রেই রাজভবনকে আক্রমণ শানিয়েছে নবান্ন। স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয়েছে রাজ্যপালের এক্তিয়ারের বিষয়টিও। চিঠিতে বিশ্ববিদ্যালয়ে অস্থায়ী উপাচার্য নিয়োগের মাধ্যমে রাজ্যপাল রাজ্যের ক্ষমতা খর্ব করতে চাইছেন বলে অভিযোগ তোলা হয়েছে। একই সঙ্গে উপাচার্য নিয়োগ নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের সাম্প্রতিক পর্যবেক্ষণের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বলা হয়েছে, বিচারাধীন বিষয় নিয়ে ধৈর্য রাখতে পারছেন না রাজ্যপাল।

সম্প্রতি গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের অস্থায়ী উপাচার্যকে পদ থেকে সরানো নিয়ে আবার প্রকাশ্যে আসে রাজ্য-রাজ্যপালের সংঘাত। সেই ঘটনায় রাজ্যপাল তথা আচার্যের মনে ‘ক্ষোভ পুঞ্জীভূত’ হয়। গত বুধবার ‘রাজ্যপালের রিপোর্ট কার্ড’ নামে একটি বিবৃতি প্রকাশ করে বলা হয় ‘‘রাজ্য সরকারের উচ্চশিক্ষা দফতরের বেআইনি আদেশে যে সকল উপাচার্য বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজ স্তব্ধ করে রেখেছেন, আচার্য তাঁদের সতর্ক করছেন।’’ পশ্চিমবঙ্গ সরকার বিশ্ববিদ্যালয়গুলির ‘ক্ষমতা কুক্ষিগত’ করতে চাইছে বলেও অভিযোগ করা হয় সেখানে। রাজভবনের বিবৃতিতে সুপ্রিম কোর্ট এবং হাই কোর্টের আদেশের কথা উল্লেখ করে আচার্যের ক্ষমতা ‘স্মরণ’ করানো হয়।

শুক্রবার সেই রিপোর্ট কার্ডেরই জবাব দিল রাজ্য। রাজ্যের বক্তব্য, রাজ্যের সঙ্গে কোনও আলোচনা না করেই একক ভাবে পশ্চিমবঙ্গের বিশ্ববিদ্যালয়গুলিকে পরিচালিত করতে চাইছেন রাজ্যপাল বোস। সুপ্রিম কোর্টের পুরনো নির্দেশ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধির প্রসঙ্গ উল্লেখ করে রাজ্যের চিঠিতে বলা হয়েছে, রাজ্যপাল নিয়ম মেনে চলছেন না। তিনি উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিকে ‘ধ্বংস করে’ রাজ্যের পড়ুয়াদের ‘অনিয়শ্চতা’র মুখে ফেলতে চাইছেন। রাজ্যের আরও অভিযোগ, যোগ্য ব্যক্তিদের উপাচার্য হিসাবে নিয়োগ করছেন না রাজ্যপাল। এর ফলে উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিতে কাঙ্ক্ষিত উন্নতি হচ্ছে না বলেও দাবি করা হয়েছে। রাজভবনকে কটাক্ষ করে চিঠিতে বলা হয়েছে, “রাজ্যপাল ভুলে যাচ্ছেন যে, এই রাজ্যে এক জন নির্বাচিত মুখ্যমন্ত্রী রয়েছেন, যিনি বাস্তব পরিস্থিতি সম্পর্কে বেশি অবহিত থাকার কারণে উপাচার্য নিয়োগের ক্ষেত্রে বেশি দক্ষ।” চিঠিতে আরও বলা হয়েছে মন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করে উপাচার্য নিয়োগ করার কথা রাজ্যপালের। কিন্তু বিধি না মেনে তিনি একাই সব সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন।

রাজ্য-রাজ্যপাল সংঘাতের আবহেই শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে বোসের সংঘাতের বিষয়টিও প্রকাশ্যে এসেছে। বৃহস্পতিবার সকালে রাজভবনের এক্স হ্যান্ডল (সাবেক টুইটার) থেকে একটি পোস্ট করা হয়। তাতে লেখা ছিল, রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রীর জন্য মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে রাজ্যপালের সম্পর্ক ‘নষ্ট’ হয়েছে। রাজভবনের সেই পোস্টকে উদ্ধৃত করে পোস্ট করে সংবাদ সংস্থা পিটিআইও। কিন্তু বেলা গড়াতে দেখা যায় রাজভবনের দু’টি পোস্ট মুছে গিয়েছে। কিন্তু পিটিআই তাদের পোস্ট রেখে দেয়। পিটিআই-এর তরফে জানানো হয়, রাজ্যপাল বোস ব্রাত্যকে সরানোর সুপারিশ করেছেন। গোটা বিষয়টিকে ‘হাস্যকর’ বলে অভিহিত করেন শিক্ষামন্ত্রী।

সম্প্রতি তৃণমূলের অধ্যাপক সংগঠন ‘ওয়েবকুপা’র সভা বসেছিল গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে। সভাপতি হিসাবে সেখানে উপস্থিত ছিলেন শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু। ঘটনাচক্রে, সেই সভার পরে গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের পদ থেকে অপসারিত হন রজতকিশোর। তার পরেই সোমবার রাজ্যপালের প্রতি ক্ষোভ উগরে দিয়েছিলেন শিক্ষামন্ত্রী। ‘এবিপি আনন্দ’কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ব্রাত্য বলেন, ‘‘এই লোকটার (রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস) পাগলামি এবং বোকামি দেখতে দেখতে রাজ্যবাসী ক্লান্ত হয়ে গিয়েছে। দু’দিন আগে উত্তরবঙ্গে আমাদের রাজ্য অধ্যাপক সংগঠন ‘ওয়েবকুপা’র কনভেনশন হয়। সেখানে কার্যকরী উপাচার্য উপস্থিতও ছিলেন না। কিন্তু রাজ্যপালের গোসা হয়েছে।” প্রসঙ্গত, সুপ্রিম কোর্টই উপাচার্য নিয়োগ নিয়ে জট কাটাতে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী এবং রাজ্যপাল তথা বিশ্ববিদ্যালয়গুলির আচার্যকে আলোচনায় বসার পরামর্শ দিয়েছিল। প্রথমে রাজ্যপাল ‘সুপ্রিম কোর্টের লিখিত নির্দেশ নেই’ বলে একটি অবস্থান নিয়েছিলেন। তা নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের প্রশ্নের মুখে পড়তে হয় রাজ্যপালের আইনজীবীকে। তার পর রাজ্য এবং রাজভবনের মধ্যে বৈঠক হলেও তা ফলপ্রসূ হয়নি। এর জন্য বোসকেই দায়ী করে রাজ্য।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE