দেশের পশ্চিম সীমান্তে উত্তপ্ত পরিস্থিতির আবহে এ রাজ্য থেকে দুই সন্দেহভাজন জঙ্গিকে গ্রেফতার করেছে রাজ্য পুলিশের এসটিএফ। গোয়েন্দা সূত্রের খবর, ধৃতদের নাম আজমল হোসেন এবং সাহেব আলি খান। আজমলের বাড়ি নলহাটির চণ্ডীপুর গ্রামে। সাহেবের বাড়ি বীরভূমের মুরারই থানা এলাকার রুদ্রনগর গ্রামে। বৃহস্পতিবার রাতে তল্লাশি চালিয়ে ওই দু’জনকে পাকড়াও করেন গোয়েন্দারা। সূত্রের খবর, ধৃতদের বিরুদ্ধে ভারতীয় ন্যায় সংহিতার ১৪৭, ১৪৮, ১৪৯, ১৫২ এবং ১১৩ (৫) ধারায় মামলা রুজু হয়েছে। শুক্রবার
রামপুরহাট আদালতে তোলা হলে ধৃতদের এক দিনের জেল হেফাজতের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আজ, শনিবার ফের তাদের রামপুরহাট আদালতে তোলা হবে।
প্রাথমিক ভাবে গোয়েন্দাদের দাবি, ধৃতদের একদা জেএমবির সঙ্গে সম্পর্ক ছিল। তবে সম্প্রতি জেএমবির ছায়ায় পৃথক একটি গোষ্ঠী গড়ে তোলার কাজ শুরু করেছিল। এই চক্রে বীরভূম ছাড়াও দক্ষিণবঙ্গের অন্য জেলারও কয়েক জন আছে। তাঁদের খোঁজ শুরু হয়েছে। প্রসঙ্গত, রাজ্যে সম্প্রতি নতুন নতুন গোষ্ঠী খুলে জঙ্গি মতাদর্শ ছড়ানোর কাজ শুরু হয়েছে বলে খবর পেয়েছিলেন গোয়েন্দারা। সেই সূত্র ধরেই এই ধরপাকড়। ধৃতদের সম্পর্কে অবশ্য এখনও বিশদ কিছু বলতে নারাজ পুলিশ। রাজ্য পুলিশের এসপি (এসটিএফ) ইন্দ্রজিৎ বসু বলেন, ‘‘তদন্ত শুরু হয়েছে। এখনই বেশি কিছু বলা যাবে না।’’
গোয়েন্দা সূত্রের খবর, ধৃতেরা জিহাদি মতাদর্শ প্রচারের পাশাপাশি আগ্নেয়াস্ত্র সংগ্রহ এবং বিস্ফোরক প্রস্তুত করার পরিকল্পনা করেছিল। সে ব্যাপারেও বিশদ খোঁজ চলছে। সন্দেহ করা হচ্ছে, বর্তমান পরিস্থিতিকে কাজে লাগিয়ে কোনও ঘটনা ঘটানোর ষড়যন্ত্র করা হয়েছিল। এ ছাড়াও, বিভিন্ন অ্যাপে সাঙ্কেতিক মেসেজ চালাচালি করেছে। সে সব তথ্য উদ্ধার করে চক্রের বাকিদের খোঁজ করা হচ্ছে বলেও খবর। গোয়েন্দাদের একটি সূত্রের দাবি, ধৃতদের সঙ্গে বাংলাদেশের যোগ আছে। আজমল বাংলাদেশে যাওয়ার চেষ্টা করেছিল, তবে ব্যর্থ হয়। এলাকাতেও ধৃতেরা কাদের কাদের জিহাদি চক্রে অন্তর্ভুক্ত করার চেষ্টা করেছিল, সেই খবরও নিচ্ছেন গোয়েন্দারা।
নলহাটি থানার চণ্ডীপুরের বাসিন্দা আজমল গ্রামীণ চিকিৎসক হিসাবে কাজ করে। তার বাবা জার্জিস মণ্ডল স্থানীয় মাধ্যমিক শিক্ষাকেন্দ্রের শিক্ষক। আজমল নলহাটি হীরালাল ভকত কলেজে দ্বিতীয় বর্ষ পর্যন্ত পড়েছে। জার্জিস বলেন, ‘‘ছেলের কাছে পাইকর থানার রুদ্রনগর গ্রামের এক জন লোক আসত। সে বাংলাদেশের বিভিন্ন ধর্মীয় বইয়ের জোগান দিত।’’ তিনি জানান, রাতে এসটিএফ বাড়িতে আড়াই ঘণ্টা তল্লাশি চালিয়ে ওই সমস্ত বই এবং একটি ল্যাপটপ ও মোবাইল বাজেয়াপ্ত করে নিয়ে গিয়েছে। কী কারণে ছেলেকে নিয়ে গিয়েছে তাঁদের কিছু জানায়নি। জার্জিসের দাবি, ‘‘ছেলে খারাপ কাজ বা সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত ছিল না।’’
অন্য দিকে, সাহেবের মা সাকিনা বিবি জানান, তাঁর ছেলে পেশায় গাড়িচালক। সাকিনা বলেন, ‘‘কেন আমার ছেলেকে গ্রেফতার করা হল, তা অজানা। ছেলের রোজগারে আমাদের সংসার চলে। কোথায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে, তা-ও জানি না। ছেলেকে জামিন করানোর সামর্থ্য আমাদের নেই।’’ সাকিনার দাবি, তাঁর ছেলে খারাপ কাজে যুক্ত নয়।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)