Advertisement
E-Paper

অনুষ্কার খুনি কে, খোঁজ পড়েছে মৌটুসির

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১২ মে ২০১৬ ০১:৪৪
তখনও সুখের সময়। মা প্রিয়াঙ্কার সঙ্গে অনুষ্কা। —ফাইল চিত্র।

তখনও সুখের সময়। মা প্রিয়াঙ্কার সঙ্গে অনুষ্কা। —ফাইল চিত্র।

মাকে সে বারবার বলেছিল, ‘আমায় তোমার কাছে নিয়ে যাও।’

জানিয়েছিল, দ্বিতীয় বার বিয়ে করার পরে বাবা আর নতুন মা তাকে মারধর করে। কিন্তু বিবাহ-বিচ্ছিন্না, নবদ্বীপে বাপের বাড়িতে আশ্রিত প্রিয়াঙ্কা সরকার দাস মেয়েকে নিয়ে যেতে পারেননি।

সোমবার সন্ধ্যায় সাড়ে ছ’বছরের সেই মেয়ে অনুষ্কা দাসের নিথর শরীর শক্তিনগর জেলা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে তাকে ‘মৃত’ ঘো‌ষণা করা হয়। প্রিয়াঙ্কার অভিযোগের ভিত্তিতে মঙ্গলবার রাতে বালিকাটির বাবা, কৃষ্ণনগরের নগেন্দ্রনগরের বাসিন্দা অভিজিৎ দাস ও ঠাকুমা কল্পনা দাসকে পুলিশ গ্রেফতার করে। যদিও অভিজিতের দ্বিতীয় স্ত্রী মৌটুসি দাস বুধবার রাত পর্যন্ত গ্রেফতার হননি।

ময়নাতদন্তের রিপোর্ট হাতে না পেলেও অনুষ্কাকে যে শ্বাসরোধ করে মারা হয়েছে, সে বিষয়ে এক প্রকার নিশ্চিত পুলিশ। কিন্তু কে বা কারা তাকে খুন করল?

প্রাথমিক ভাবে, পুলিশের সন্দেহ তিন জনকে, যাঁরা হয় খুনে জড়িত বা অন্তত খুনের কথা জানতেন। এর মধ্যে দু’জন ইতিমধ্যে গ্রেফতার হয়ে গিয়েছেন। বুধবার দুপুরে কৃষ্ণনগর আদালতে তোলা হলে তাঁদের পাঁচ দিন পুলিশ হেফাজত রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়। তবে রাত পর্যন্ত তাঁরা খুনের কথা কবুল করেননি। তৃতীয় জন: হাসপাতাল থেকে ফেরার হয়ে যাওয়া মৌটুসি।

কেন খুন করা হল অনুষ্কাকে?

সেই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে হলে আগে জেনে নিতে হবে তার বাবা-মায়ের সম্পর্কের ওঠাপড়ার গল্প।

২০০৮ সালে দেখাশোনা করেই অভিজিতের সঙ্গে বিয়ে হয়েছিল নবদ্বীপের তেঘড়িপাড়ার প্রিয়াঙ্কার। অভিজিৎ পঞ্চায়েত কর্মী। ঘূর্ণির মেয়ে মৌটুসিও এক সময়ে পঞ্চায়েতে কাজ করতেন (বর্তমানে প্রাথমিক স্কুলে পড়ান)। ওই সময়েই দু’জনের মধ্যে একটা সম্পর্ক তৈরি হয়। প্রিয়াঙ্কার অভিযোগ, তিনি গর্ভবতী হওয়ার পরে তিন মাস পর্যন্ত গর্ভপাত করানোর জন্য তাঁকে চাপ দিয়ে গিয়েছেন অভিজিৎ। তিনি রাজি না হওয়ায় নির্যাতন করা শুরু হয়। এমনকী মেয়ের জন্মের পরেও অত্যাচার চলতে থাকে।

ইতিমধ্যে প্রিয়াঙ্কা মৌটুসির সঙ্গে অভিজিতের সম্পর্কের বিষয়টি জেনে ফেলেন। তাতে নিরস্ত হওয়ার বদলে অভিজিৎ উল্টে তাঁর উপরে অত্যাচার বাড়িয়ে দেন বলে অভিযোগ। ২০১৫ সালের জুনে তাঁদের বিবাহ-বিচ্ছেদ হয়ে যায়। ডিসেম্বরে অভিজিৎ বিয়ে করেন মৌটুসিকে। কিন্তু মেয়েকে তিনি ছাড়েননি। আর্থিক সঙ্গতির কথা মাথায় রেখে আদালতও তাঁর কাছে মেয়েকে রাখার অনুমতি দিয়েছিল। তবে প্রিয়াঙ্কা চাইলেই মেয়ের সঙ্গে দেখা করতে পারবেন, তা-ও জানানো হয়েছিল। প্রিয়াঙ্কার অভিযোগ, স্কুল ছুটির পরে মেয়ের সঙ্গে দেখা করতে এলে অনুষ্কা প্রায়ই বলত, তাকে মারধর করা হয়।

সন্তানহারা প্রিয়াঙ্কা তো অভিযোগ করতেই পারেন, পুলিশ কেন তিন জনকে সন্দেহের তালিকায় রাখল?

মৌটুসির সৎমা

প্রথমে বলা হয়েছিল, ঘুমন্ত অবস্থায় বিছানা থেকে পড়ে মারা গিয়েছে অনুষ্কা। কিন্তু মৃত অবস্থায় হাসপাতালে আনায় সে সময়ে কর্তব্যরত চিকিৎসক দেহের ময়নাতদন্ত করার নির্দেশ দেন। তার পরেই মৌটুসি জানান, তিনি অসুস্থ বোধ করছেন। সোমবার রাতেই তাঁকে শক্তিনগর হাসপাতালে ভর্তি করে নেওয়া হয়েছিল। মঙ্গলবার সকাল সেখান থেকেই তিনি বেপাত্তা হয়ে যান। তখনও কিন্তু কাউকে গ্রেফতার করা হয়নি, জেরাও করা হয়নি। এবং এতেই মৌটুসির ব্যাপারে সন্দেহ দানা বেঁধেছে পুলিশের। তাদের ধারণা, অন্যের সংসার ভেঙে সেখানে জেঁকে বসলেও পথের কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছিল অনুষ্কা। স্বামীর প্রথম পক্ষের মেয়েকে মন থেকে মেনে নিতে না পেরেই ‘সরিয়ে দেওয়া’র ছক কষে থাকতে পারেন তিনি। কিন্তু ময়নাতদন্ত হবে শুনেই ভয় পেয়ে যান। তাই ‘অসুস্থ’ বলে হাসপাতালে ভর্তি হন এবং সুযোগ বুঝে পালান।

ঠাকুমা কল্পনা

এঁর ভূমিকাও ‘রহস্যজনক’ ব‌লে মনে করছে পুলিশ। জেরার মুখে তিনি নানা রকম বিভ্রান্তিকর কথা বলছেন। হাসপাতালে অনুষ্কাকে নিয়ে আসার পরে তিনি দাবি করেছিলেন, অনুষ্কা খাট থেকে পড়ে মারা গিয়েছে। পরে আবার বলেন, অনুষ্কা তাঁর পাশেই শুয়ে ছিল। কিন্তু কখন সে মারা গেল, নিজে ঘুমিয়ে থাকায় তা তিনি টের পাননি। তদন্তকারীদের মতে, পাশে একটা সাড়ে ছ’বছরের মেয়ে খুন হয়ে গেল অথচ ঠাকুমার ঘুম ভাঙল না, এটা বিশ্বাস করা কঠিন। বিশেষ করে যেখানে বয়সকালে ঘুম পাতলা হয়।

রাত পর্যন্ত পুলিশের জেরায় অনড় অভিজিৎ। কিছুতেই মচকাচ্ছেন না। একটাই কথা বলে চলেছেন: অফিস থেকে বাড়ি ফিরে তিনি দেখেন, মেয়ে ঠাকুমার পাশে শুয়ে আছে। কোনও অস্বাভাবিকতা লক্ষ করেননি। খানিক বাদে মায়ের চিৎকার শুনে ছুটে এসে দেখেন, মেয়ের শরীর ঠান্ডা। শক্তও হয়ে গিয়েছে। কিন্তু, স্ত্রীর আচরণেও কি কোনও অস্বাভাবিকতা দেখতে পাননি তিনি? অভিজিৎ বলছেন, না।


বাবা অভিজিৎ

তদন্তকারীদের প্রশ্ন, অভিজিৎ কি খুনের পরিকল্পনায় যুক্ত ছিলেন? নাকি এত দূর যে বিষয়টা গড়াতে পারে, তা ভাবতে পারেননি? তিনি কি সত্যিই মৌটুসির আচরণে সন্দেহজনক কিছু দেখেননি? নাকি সব জেনেশুনে স্ত্রীকে আড়াল করার চেষ্টা করে যাচ্ছেন?

নদিয়ার পুলিশ সুপার শীষরাম ঝাঝারিয়া বলেন, ‘‘আমরা সমস্ত দিকই খতিয়ে দেখছি।’’ তদন্তকারী অফিসারেরা বলছেন, এখন প্রথম কাজ মৌটুসিকে পাকড়াও করা। কিন্তু তিনি কোথায়? বুধবার রাতেও তাঁর খোঁজে ঘূর্ণির বাড়ি এবং আরও কিছু জায়গায় হানা দেয় পুলিশ। কোনও হদিস মেলেনি।

মৌটুসি কি উবে গেলেন?

Murder
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy