Advertisement
০৪ মে ২০২৪
TMC

Madan Mitra: প্রার্থী বদল চাই, কার্যত ধর্মঘট মদনের এলাকায়, বাস-অটো বন্ধ করে দিলেন তৃণমূলের কর্মীরা

ইউনিয়ন নেতা আলি রাজা প্রকাশ্যেই দলের উদ্দেশে বার্তা দিয়ে বলেন, ‘‘প্রার্থী বদল না করা হলে বৃহত্তর আন্দোলন করে কামারহাটি স্তব্ধ করে দেব।’’

এলাকায় বাস, টোটো, অটো বন্ধ করে দেওয়ার অভিযোগ উঠল তৃণমূলের ট্রেড ইউনিয়নের বিরুদ্ধে।

এলাকায় বাস, টোটো, অটো বন্ধ করে দেওয়ার অভিযোগ উঠল তৃণমূলের ট্রেড ইউনিয়নের বিরুদ্ধে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কামারহাটি শেষ আপডেট: ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ১৮:৫৯
Share: Save:

প্রার্থী নিয়ে অসন্তোষের জেরে কার্যত ধর্মঘট কামারহাটি পুরসভা এলাকায়। এলাকায় বাস, টোটো, অটো বন্ধ করে দেওয়ার অভিযোগ উঠল তৃণমূলের ট্রেড ইউনিয়নের বিরুদ্ধে। পুরসভার ১ থেকে ৭ নম্বর ওয়ার্ডের প্রার্থী প্রার্থী বদলের দাবিতে রবিবার কারখানা বন্ধেরও হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে। ইউনিয়ন নেতা আলি রাজা প্রকাশ্যেই দলের উদ্দেশে বার্তা দিয়ে বলেন, ‘‘প্রার্থী বদল না করা হলে বৃহত্তর আন্দোলন করে কামারহাটি স্তব্ধ করে দেব।’’

১০৮টি পুরসভার (দার্জিলিং ছাড়া) নির্বাচনের জন্য তৃণমূলের প্রার্থিতালিকা প্রকাশ করা হয় শুক্রবার বিকেলে। পরিস্থিতি ঘোরালো হয় তার পরেই। তৃণমূলের ‘অফিশিয়াল ফেসবুক পেজ’ এবং ‘মিডিয়া গ্রুপে’ বিশদ প্রার্থিতালিকা প্রকাশিত হয়। তার পরেই রাজ্যের নানা জায়গা থেকে বিক্ষোভ, অবরোধ, প্রতিবাদের খবর আসতে থাকে। একাধিক নেতা, মন্ত্রী, সাংসদ-বিধায়ক তাঁদের অসন্তোষের কথা জানাতে থাকেন দলের উপরতলায়। এর পর রাতেই প্রার্থিতালিকা প্রকাশে বিভ্রান্তি স্বীকার করে তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্ব জানায়, চূড়ান্ত তালিকা জেলা সভাপতিদের কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তাতেও রাজ্য জুড়ে কর্মীদের ক্ষোভ প্রশমিত হয়নি। শনিবার দিন ভর তার রেশ দেখা গেল জেলায় জেলায়।

কর্মী-সমর্থকদের বিক্ষোভ নিয়ে কামারহাটির বিধায়ক মদন মিত্র বলেন, ‘‘অনেকে দেওয়াল লিখে ফেলেছেন। পাশ করেছে জেনে তার পর না হলে দুঃখ তো হবেই। ওঁদের জন্য আমি সমব্যথী। দেখা যাক কী হয়। কিছু কথা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে জানাব।’’ বিক্ষোভকারীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘‘কেউ দল ছেড়ে যাবেন না।’’

কামারহাটি ছাড়াও উত্তর ২৪ পরগনার যশোর রোডের কাছে অবরোধ করেন তৃণমূল কর্মীরা। তাঁদের দাবি, বনগাঁ পুরসভার ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের প্রার্থী ‘বহিরাগত’ দিলীপ দাসকে সরিয়ে প্রাক্তন কাউন্সিলর প্রশান্ত বালা অথবা তাঁর স্ত্রী কবিতা বালাকে প্রার্থী করতে হবে। ‘বহিরাগত’কে প্রার্থী করা হয়েছে বলে বাদুড়িয়া পুরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ডে টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ দেখান জোড়াফুল শিবিরের কর্মীরা। তাঁদের দাবি, ৬ নম্বর ওয়ার্ডে দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে কাজ করা জাহানারা বিবিকে প্রার্থী করা হোক।

প্রার্থী না হতে পেরে দলত্যাগের ঘোষণা করেছেন বীরভূমের রামপুরহাট পুরসভার প্রাক্তন কাউন্সিলর আব্বাস হোসেন। রামপুরহাট চার নম্বর ওয়ার্ডের তিন বারের কাউন্সিলর তিনি। প্রথম বার জিতেছিলেন কংগ্রেসের টিকিটে। পরের দু’বার তিনি তৃণমুল থেকে জিতেছিলেন। শনিবার তৃণমুলের বীরভূম জেলার চেয়ারম্যান তথা রামপুরহাটের বিধায়ক আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে লিখিত ভাবে দলত্যাগের কথা জানিয়ে দিয়েছেন আব্বাস।

হুগলিরও রিষড়া, চুঁচুড়া ও তারকেশ্বর পুরসভা এলাকায় তুমুল বিক্ষোভ দেখান তৃণমূল কর্মীরা। রিষড়ার ১৭ নম্বর ওয়ার্ডে ঝুম্পা দাস সরকারের নাম না থাকা নিয়ে ক্ষোভে ফেটে পড়েন তাঁরা। চুঁচুড়ার ৭ নম্বর ওয়ার্ডে বিক্ষোভকারী তৃণমূল কর্মীদের অভিযোগ, প্রার্থী রীতা দাসকে কেউ চেনেন না। তারকেশ্বর পুরসভার ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের প্রাক্তন কাউন্সিলর মহম্মদ নইমের পরিবর্তে প্রার্থী করা হয়েছে অমরেন্দ্রনাথ সাঁপুইকে‌। এর প্রতিবাদে পদ্মপুকুর এলাকায় রাস্তায় টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ দেখান দলের কর্মীরা।

পূর্ব বর্ধমান জেলার বিভিন্ন প্রান্তে প্রার্থী বদলের দাবি উঠছে জোড়াফুল শিবির থেকে। মেমারি পুরসভার পাঁচ নম্বর ওয়ার্ডের প্রার্থী বদলের দাবিতে বিক্ষোভ দেখায় তৃণমূল কর্মীদের একাংশ। একই ছবি দেখা যায় গুসকরা পুরসভাতেও। দিনভর বিক্ষোভের জেরে শেষ পর্যন্ত গুসকরার দুটি ওর্য়াডে প্রার্থী বদল করা হয়েছে। বর্ধমান পুরসভাতেও কয়েক জন প্রার্থী বদল করার দাবি উঠেছে। রাস্তায় টায়ার জ্বালিয়ে বর্ধমান রাজবাড়ির সামনে পথ অবরোধও করেন বিক্ষোভকারীরা। শনিবার পূর্ব বর্ধমানের কালনায় গিয়েছিলেন তৃণমূলের মুখপাত্র দেবাংশু ভট্টাচার্য। তাঁর বক্তব্য, ‘‘প্রার্থিতালিকা বার হওয়ার পর অনেক জায়গায় ক্ষোভ দেখা গিয়েছে। কর্মীদের সংযত থাকতে বলব। প্রার্থী পছন্দ না হলে নেতৃত্বকে জানান। অনেকেই ভোটের আগে দু’নৌকায় পা দিয়েছিলেন। সেই সব মানুষ প্রার্থী হলে এটা স্বাভাবিক।’’

প্রার্থী পছন্দ না হওয়ায় ক্ষোভের আবহ বাঁকুড়াতেও। বাঁকুড়া-দুর্গাপুর সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখান দলীয় কর্মীদের একাংশ।

প্রার্থী-ক্ষোভে শনিবার উত্তপ্ত হয়ে ওঠে মেদিনীপুর শহরও। শহরের ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের রাঙামাটি এলাকায় রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখান তৃণমূল কর্মীদের একাংশ। পুরভোটে প্রার্থী হওয়ার জন্য ক্ষোভ-বিক্ষোভের পর্ব চলছে তৃণমূলে। এর মধ্যে অবশ্য ব্যতিক্রম খড়্গপুর পুরসভার দুই প্রার্থী। তাঁরা প্রার্থিপদ প্রত্যাহারের জন্য আবেদন করেছেন দলীয় নেতৃত্বের কাছে। প্রাথমিক ভাবে খড়্গপুর শহরের ১১ নম্বর ওয়ার্ডে প্রার্থী হয়েছিলেন পিয়ালি ভট্টাচার্য। তাঁর জায়গায় প্রার্থী করা হয় কাকলি ঘোষ নামে এক মহিলাকে। তিনি প্রার্থিপদ প্রত্যাহারের জন্য আবেদন করেছেন তৃণমূল নেতৃত্বের কাছে। একই ভাবে প্রার্থিপদ প্রত্যাহারের আবেদন করেছেন ওই পুরসভারই ২৭ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল প্রার্থী জেসু নায়কও।

খড়্গপুরের পুরিগেট এলাকার বাসিন্দা জেসু আইটিআই-এর প্রথম বর্ষের ছাত্র। তাঁর বাবা বুধিয়া নায়েক প্রয়াত হয়েছেন। তিনি খড়্গপুর পুরসভার কর্মী ছিলেন। জেসুর কথায়, ‘‘বাবা মারা যাওয়ার পর থেকে পরিবারের দায়িত্ব আমার উপর। আমি কোনও কাজ করি না। পড়াশোনা করি। মা অসুস্থ। তাই তাঁর চিকিৎসার জন্য বাইরে যেতে হয়। কী ভাবে আমার নাম প্রার্থিতালিকায় এল জানি না।’’ আবার কাকলি কথায়, ‘‘কী ভাবে আমার নাম প্রার্থিতালিকায় এল জানি না। আমি অসুস্থ। তাই প্রার্থী হতে চাই না’’

খড়্গপুর শহর তৃণমূলের সভাপতি দীপেন্দু পালের বক্তব্য, ‘‘দু’টি আবেদন পেয়েছি। ওগুলি উচ্চনেতৃত্বের কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।’’

দক্ষিণবঙ্গের মতো প্রার্থিতালিকা নিয়ে ক্ষোভের আঁচে ফুটছে উত্তরবঙ্গের তৃণমূল শিবিরও। উত্তর দিনাজপুরের ইসলামপুর পুরসভার ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের প্রার্থী বদলের দাবিতে তৃণমূলের জেলা সভাপতি কানাইয়ালাল আগরওয়ালের বাড়ির সামনে বিক্ষোভ দেখান তৃণমূল কর্মীরা। ওই ওয়ার্ডে প্রার্থী করা হয়েছে সঙ্গীতা সাহা দাসকে। তাঁকে সরানোর দাবি তুলেছেন দলীয় কর্মীদের একাংশ। কানহাইয়ার কথায়, ‘‘একটি ভাল সংখ্যক তৃণমূল কর্মী বিক্ষোভ দেখিয়েছিলেন। আমি সকলকে বলেছি, আপনাদের ক্ষোভের কথা উচ্চনেতৃত্বকে জানাব। তার পর দল যা সিদ্ধান্ত নেবে তা আমরা সকলে মেনে নেব।’’

ক্ষোভের আবহ ডালখোলা পুরসভার তৃণমূল শিবিরেও। সেখানে কয়েক জন প্রার্থী বদলের দাবি তুলে মিছিল করেন তৃণমূল কর্মীদের একাংশ। ডালখোলা পুরসভার নয় নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কর্মীদের একাংশের অভিযোগ, বিজেপি এবং সিপিএম ছেড়ে তৃণমূলে যোগদানকারীদের প্রার্থী করা হয়েছে।

প্রার্থী বদলের দাবিতে কোচবিহার চার নম্বর ওয়ার্ডে বিক্ষোভ দেখান তৃণমূল কর্মীদের একাংশ। কামেশ্বরী রোডে টায়ার জ্বালিয়ে পথ অবরোধ করেন বিক্ষোভকারীরা। ঘণ্টাখানেক অবরোধের ফলে যানজট তৈরি হয়। ঘটনাস্থলে কোচবিহার কোতোয়ালি থানার পুলিশ পৌঁছে অবরোধ তুলে দেয়। তৃণমূলের কোচবিহার জেলার সভাপতি গিরীন্দ্রনাথ বর্মণের কথায়, ‘‘প্রার্থিতালিকায় সকলের নাম রাখা সম্ভব নয়। অনেকের নাম বাদ গিয়েছে। তাই কিছু কিছু জায়গায় বিক্ষোভ হচ্ছে। আলোচনার মাধ্যমেই সব মিটিয়ে নেওয়া হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE