Advertisement
E-Paper

জঙ্গলমহলে থমকে অভাবী তরুণের স্বপ্ন

ঝাড়গ্রামের বিনপুরে বাড়ি বছর আঠারোর এক তরুণের। বাবা পেশায় ভাড়া গাড়ির চালক। সামান্য আয়ে ছেলেকে বেসরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে ভর্তি করাতে পারেননি। স্বপ্নভঙ্গের যন্ত্রণা সইতে না পেরে কীটনাশক খেয়েছিলেন ওই তরুণ।

কিংশুক গুপ্ত

শেষ আপডেট: ২৯ জুলাই ২০১৯ ০৪:০৮
প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

প্রকল্প রয়েছে। তা নিয়ে প্রচারও নেহাত কম হয় না। কিন্তু সরকারি প্রকল্পের সুযোগ কি আদৌ পাচ্ছেন জঙ্গলমহলের প্রান্তিক মানুষজন!

ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে চেয়েও শুধু অর্থাভাবে জঙ্গলমহলের এক সংখ্যালঘু ছাত্রের স্বপ্ন থমকে যাওয়ার দৃষ্টান্ত ফের উস্কে দিয়েছে এই প্রশ্ন।

ঝাড়গ্রামের বিনপুরে বাড়ি বছর আঠারোর এক তরুণের। বাবা পেশায় ভাড়া গাড়ির চালক। সামান্য আয়ে ছেলেকে বেসরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে ভর্তি করাতে পারেননি। স্বপ্নভঙ্গের যন্ত্রণা সইতে না পেরে কীটনাশক খেয়েছিলেন ওই তরুণ। ক’টা দিন যমে-মানুষে টানাটানি চলেছে। ঝাড়গ্রাম জেলা সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে চিকিৎসার পরে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন। কিন্তু মন ভেঙে গিয়েছে।

টিনের চালের মাটির বাড়ির আনাচেকানাচে হাঁ করা দারিদ্র। ওই তরুণের বাবা জানাচ্ছেন, সরকারি প্রকল্পের বাড়ি পেতে আবেদন করেছিলেন। কিন্তু পঞ্চায়েতের তরফে সমীক্ষাটুকুও হয়নি। শৌচাগার জোটেনি। পঞ্চায়েত বলেছে, তালিকায় নাম ওঠেনি।

ওই তরুণও পড়ার পথে সরকারি সাহায্য পাননি। তাঁর স্কুলের প্রধান শিক্ষক বললেন, ‘‘স্কুল থেকে সাধ্যমতো সাহায্য করা হয়েছে। ফি মকুব করা হয়েছিল। আর সংখ্যালঘু বৃত্তির জন্য পরপর তিন বছর ন্যাশনাল স্কলারশিপ পোর্টালে অনলাইনে আবেদন করেছিল ওই ছাত্র। আমরাও প্রয়োজনীয় সুপারিশ করেছিলাম। কিন্তু বৃত্তি পায়নি।’’ গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ার সময় একবার ‘মাইনরিটি স্টাইপেন্ড’ জুটেছিল হাজার টাকা। সাহায্য বলতে এটুকুই।

প্রশাসন সূত্রে খবর, দরিদ্র সংখ্যালঘুরা সংখ্যালঘু উন্নয়ন ও বিত্ত নিগম থেকে সহজ শর্তে ঋণ পেতে পারেন। বিভিন্ন কর্মমুখী পাঠক্রমের জন্য শিক্ষা-ঋণের ব্যবস্থা রয়েছে। নিগম থেকে উচ্চশিক্ষার স্কলারশিপও মেলে। এ সব অবশ্য জানেনই না ওই তরুণ ও তাঁর পরিজনেরা।

নিয়মমতো যে এলাকায় ২৫ শতাংশ সংখ্যালঘু আছেন, সেখানে এলাকা ভিত্তিক উন্নয়ন হয়। ঝাড়গ্রামে সংখ্যালঘু মাত্র দুই শতাংশ। তবে দরিদ্র সংখ্যালঘুরা পঞ্চায়েত থেকে বাড়ি ও শৌচাগার পেতে পারেন।

তা-ও কেন এই পরিস্থিতি? সদুত্তর এড়িয়ে দহিজুড়ি পঞ্চায়েতের প্রধান ফাল্গুনী দে বলেন, ‘‘সংখ্যালঘুদের বাড়ি দেওয়ার জন্য নির্দেশ এসেছে। সমীক্ষা শুরু হয়েছে। ওই পরিবার যাতে বাড়ি ও শৌচাগার পায় সেটা অবশ্যই দেখব।’’ ঝাড়গ্রামের জেলাশাসক আয়েষা রানিরও আশ্বাস, ‘‘ওই ছাত্রের পরিবারকে সাহায্য করা হবে।’’

এই হচ্ছে-হবের জাঁতাকলেই থমকে গিয়ে তরুণের স্বপ্ন। বইপত্র জোগাড় করে পড়ে জয়েন্টে যা র‌্যাঙ্ক হয়েছে, তাতে সরকারি কলেজে সুযোগ মেলেনি। অনলাইন কাউন্সেলিংয়ে আসানসোলের এক বেসরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে মেকানিক্যাল বা ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার সুযোগ এসেছিল। ওই তরুণের বাবা বলেন, ‘‘ছেলেকে নিয়ে আসানসোলে গিয়েছিলাম। কিন্তু ভর্তির জন্যই ৮১ হাজার টাকা লাগবে। হস্টেলের খরচ ৩০ হাজার। প্রতি বছর এত টাকা জোগানো আমার পক্ষে সম্ভব নয়। তাই ছেলেকে ভর্তি করাতে পারিনি।’’

ওই তরুণের বড়দিও কলেজে দ্বিতীয় বর্ষের পরে পড়া ছেড়েছেন অভাবের তাড়নায়। রূঢ় বাস্তব মানতে না পেরে ওই ছাত্র নরম পানীয়ের সঙ্গে কীটনাশক মিশিয়ে খেয়ে নিজেকে শেষ করে দিতে চেয়েছিলেন। সেই থেকে মনমরা। বলছেন, ‘‘জঙ্গলমহলের জন্য মুখ্যমন্ত্রীর তো অনেক প্রকল্প রয়েছে। আমি কি কোনও সাহায্য পেতে পারি না!’’

Engineering Minority Student Poor Financial Condition
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy