Advertisement
E-Paper

পড়ুয়াদের মধ্যে বৈষম্য ঘোচাতে অস্ত্র টিফিন বাক্স

পড়ুয়াদের মধ্যে বিভেদ দূর করে তাদের একসূত্রে বাঁধা। আর এর জন্য শহরের বিভিন্ন স্কুলের হাতিয়ার টিফিন বাক্স! ছাত্রছাত্রীরা যাতে একে অন্যের সঙ্গে টিফিন ভাগ করে খায়, সে জন্য তাদের রীতিমতো পাঠ দিচ্ছেন স্কুল কর্তৃপক্ষ

সুপ্রিয় তরফদার

শেষ আপডেট: ২৩ মার্চ ২০১৮ ০২:০৮

ক্লাসঘরের বেঞ্চে বসে রয়েছেন শিক্ষিকা। তাঁকে ঘিরে গোল করে বসে খুদে পড়ুয়ারা। সকলেরই টিফিন বাক্স খোলা। পড়ুয়ারা একে অন্যের খাবার ভাগ করে তো খাচ্ছেই, ওই শিক্ষিকাও তাঁর খাবার খাওয়াচ্ছেন অন্যকে। মাঝেমধ্যে তিনি নিজেও পড়ুয়াদের টিফিন বাক্স থেকে খাবার তুলে নিচ্ছেন।

ছবিটা শহরের এক স্কুলের। উদ্দেশ্য, পড়ুয়াদের মধ্যে বিভেদ দূর করে তাদের একসূত্রে বাঁধা। আর এর জন্য শহরের বিভিন্ন স্কুলের হাতিয়ার টিফিন বাক্স! ছাত্রছাত্রীরা যাতে একে অন্যের সঙ্গে টিফিন ভাগ করে খায়, সে জন্য তাদের রীতিমতো পাঠ দিচ্ছেন স্কুল কর্তৃপক্ষ।

মহাদেবী বিড়লা ওয়ার্ল্ড অ্যাকাডেমির প্রিন্সিপাল অঞ্জনা সাহা জানালেন, তাঁদের স্কুলে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের বাচ্চারা পড়তে আসে। টিফিনে কেউ খায় নিরামিষ, কেউ আমিষ। এক সময়ে পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছিল যে আমিষ খায় এমন পড়ুয়াদের পাশে বসতেই চাইত না নিরামিষ খাবার খাওয়া শিশুরা। এমনকী, ওই সব পরিবারের তরফে স্কুলের কাছে আবেদন জানানো হয়েছিল, তাঁদের সন্তানদের ক্লাস যেন পরিবর্তন করা হয়। তার পরেই এই সঙ্কট প্রতিকারে উদ্যোগী হন স্কুল কর্তৃপক্ষ।

অঞ্জনাদেবী বলেন, ‘‘পড়ুয়াদের বোঝানো শুরু হয় যে খাবার আলাদা হতে পারে, কিন্তু মানুষ হিসেবে সকলে এক। তাই খাবার নিজেদের মধ্যে ভাগ করে খাওয়া উচিত।’’ বিষয়টিকে আরও সহজ করতে কাজে লাগানো হয় শিক্ষকদেরও। ‘‘বিভিন্ন সম্প্রদায়ের পরিবারের তরফ থেকে পৃথক ক্লাসঘরের দাবি উঠলেও আমরা ইতিবাচক পদক্ষেপ করে তার মোকাবিলা করি। অসহিষ্ণুতা দূর করতে গেলে ছোটবেলা থেকেই তা শুরু করতে হবে’’, বলছেন অঞ্জনাদেবী। নিরন্তর এই প্রয়াস চলবে বলেও জানিয়েছেন তিনি।

রামমোহন মিশন স্কুলের অধ্যক্ষ সুজয় বিশ্বাস বলেন, ‘‘টিফিন ভাগ করে খাওয়ার মধ্যে সহানুভূতির ছাপ ফুটে ওঠে। তাই প্রথম থেকেই এই বিষয়টিতে আমরা গুরুত্ব দিই।’’ দ্য ফিউচার ফাউন্ডেশন স্কুলের অধ্যক্ষ রঞ্জন মিত্রের কথায়, ‘‘ছেলেমেয়েরা তার সঙ্গেই টিফিন খেতে বসে যাকে তারা খুব কাছের মনে করে। তাই আমরা ছাত্রছাত্রীদের সব সময়ে বলি, খাবার ভাগ করে খেতে হবে। এর ফলে তাদের চরিত্রের গঠন ভাল হয়।’’

তবে শুধু ইংরেজি মাধ্যমই নয়, ভাল কিছু ভাগ করে নেওয়ার চেতনা যাতে সব পড়ুয়ার মধ্যে গড়ে ওঠে সে দিকে লক্ষ রাখছে বাংলা মাধ্যম কয়েকটি স্কুলও। গার্ডেনরিচ নুটবিহারী দাস গার্লস স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা সঙ্ঘমিত্রা ভট্টাচার্য বলছেন, ‘‘টিফিন ভাগ করে খাওয়া একটা দিক মাত্র। আরও বিভিন্ন কার্যকলাপের মধ্যে দিয়ে পড়ুয়াদের মধ্যে সহনশীলতা বজায় রাখার চেষ্টা করে চলেছি। তার সুফলও পাওয়া গিয়েছে।’’

সোনারপুরের আচার্য প্রফুল্ল নগর অতুলকৃষ্ণ রায় বিদ্যায়তন (বালিকা)-এর ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা মায়াদেবী দাস (হালদার) বলেন, ‘‘ভেদাভেদ দূর করে একসঙ্গে থাকার শিক্ষা ছাত্রীদের দেওয়া হয়। খাবার ভাগ করে খাওয়ার মধ্যে যে ভালবাসা রয়েছে, সেটাও শেখানো হয়।’’

একই কথা বলছেন ভবানীপুরের মিত্র ইনস্টিটিউশনের প্রধান শিক্ষক অসিতবরণ গিরি বা শাখাওয়াত মেমোরিয়াল গভর্নমেন্ট গার্লস হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষিকা পাপিয়া সিংহ মহাপাত্র। অসিতবাবু বলেন, ‘‘জাতিগত বা ভাষাগত কোনও বৈষম্যই যাতে পড়ুয়াদের না থাকে সেই শিক্ষা দেওয়া হয়।’’ আর পাপিয়াদেবী বললেন, ‘‘আমাদের স্কুলে ছাত্রীরা এখনও গোল হয়ে বসে খাবার খায়। সেই শিক্ষাই তাদের দেওয়া হয়। আশা করি এটা বজায় থাকবে।’’

Tiffin Box students Teachers Discrimination School
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy